কক্সবাংলা ডটকম(৬ মে) :: ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ২১ শতকে আরো ভালো অবস্থার লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টির ব্যাপারে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনার চেয়ে দুই দেশের মধ্যে মতভিন্নতাই বেশি বলে মনে হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত যেসব অগ্রগতি হয়েছে তা রক্ষা এবং এর প্রতি জনসাধারণের সমর্থন বাড়ানোর জন্য ওয়াশিংটন ও দিল্লিকে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রগতি সাধনের জন্য যত্নবান হতে হবে। বৃহত্তর স্বার্থের দিকে মনোনিবেশন করা না হলে নীতিগত মতপার্থক্য ছোটখাট বড় আকার ধারণ করতে পারে। পরিণতিতে উভয় দেশকেই অনেক বড় সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
ভারত হয়তো অন্যান্য স্থান থেকে তেল কিনে ইরানি তেলের ওপর ছাড় বন্ধ করার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে। অভিন্ন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় মিত্র হিসবে ভারতকে ক্ষমতাবান করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তেল সরবরাহের বিকল্প কিছুর ব্যবস্থা করে দিতে হবে। অবশ্য রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়কারী দেশগুলোকে শাস্তি প্রদান করার মার্কিন অবস্থান নিয়ে এখনো অনেক কিছু করার রয়ে গেছে ভারতীয় ও আমেরিকান কূটনীতিকদের।
দীর্ঘ দিনের অস্ত্র সরবরাহকারী রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার নয়া দিল্লির সিদ্ধান্ত ইন্দো-আমেরিকান সামরিক সম্পর্কে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে। এর কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্র ওইসব দেশের কাছে অত্যাধুনিক মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিক্রির ব্যবসা করতে পারে না যেখানে রুশ সামরিক শক্তির এজেন্টদেরও স্বাগত জানানো হয়।
অবশ্য আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ওয়াশিংটন ও নয়া দিল্লি উভয়েই এসব বিষয়ে সুরাহা করতে পারে। ভারতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ছাড়ের বিষয়টি সবসময়ই থাকতে পারে। তবে রুশ চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরো বাড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এস-৪০০ কেনার ফলে দীর্ঘ মেয়াদি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভারতের অবস্থানটিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। অবশ্য রাশিয়ার ওপর ভারতের সামরিক নির্ভরতার বিকল্প হিসেবে ইন্দো-আমেরিকান অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিনা তাও বিবেচনার বিষয়।
অবশ্য কয়েক দশক আগে যেখানে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রতিরক্ষা সম্পর্কই ছিল না, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র আজ ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহকারী শীর্ষ তিন দেশের একটিতে পরিণত হয়েছে। অবশ্য এখন পর্যন্ত নয়া দিল্লির কাছে ওয়াশিংটন যেসব সামরিক বিক্রি করেছে, সেগুলো বহুবার ব্যবহৃত প্লাটফর্ম নয়, মূলত একবার কাজে লাগানোর সামগ্রী। যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত চায় কোনো আনুষ্ঠানিক মৈত্রী চুক্তির ভিত্তিতে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের বিশেষ দেশ হতে। কিন্তু উভয় দেশে যে ধরনের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে, সেখানে এ ধরনের কিছু হওয়ার সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না।
ভারতের অনেক নিরাপত্তা প্রয়োজনের প্রতি সহানুভূতিশীল আমেরিকানরা জানে যে ইন্দো-প্যাসিফিকে শান্তি ও শৃঙ্খলা কেবল সাগরের মাধ্যমেই নয়, হিমালয় অঞ্চল ও ভারতের মহাদেশীয় সীমান্তগুলো জুড়েও প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র আরো জানে, তারা এখনো এস-৪০০-এর সমমানের কোনো কিছু নির্মাণ করতে পারেনি।
অবশ্য এস-৪০০ ভারতের আসন্ন প্রয়োজন পূরণ করলেও রাশিয়ার ওপর দীর্ঘ মেয়াদি নির্ভরতা ভারতের নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত সহযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা ছাড়াও এস-৪০০ হলো ম্লান হতে থাকা রুশ শক্তির তৈরি করা অনেক কম মানসম্পন্ন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ। মনে রাখতে হবে ভারতের সামরিক সরবরাহকারী হিসেবে রাশিয়ার নিজের ভবিষ্যত ও সম্ভাবনা সন্দেহের মধ্যে রয়েছে।
মস্কো বলতে পারে যে সে চীনের বিরুদ্ধে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় ভারতকে সহায়তা করতে চায়, কাজাখস্তান থেকে ককেসাস পর্যন্ত বিস্তৃত মধ্য ইউরেসিয়ায় চীনের প্রাধান্য প্রতিরোধ করতে চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যও কিন্তু একই। বাস্তবে সাম্রাজ্যের প্রতি পুতিনের নস্টালজিয়া ও ইউরোপে তার আগ্রাসনের ফলে পাশ্চাত্য থেকে আলাদা হয়ে রাশিয়া এখন অনেক বেশি চীন ও এর ভূরাজতিক উচ্চাভিলাষের বশীভূত হয়ে পড়েছে। ক্রেমলিন এখন যেভাবে ভারতের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে যাচ্ছে, ভবিষ্যতে চীন তাতে সম্মতি নাও দিতে পারে।
ভারত ও আমেরিকাকে এসব বিষয় ভাবতে হবে, তাদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। নতুন নতুন সহযোগিতার ব্যাপারে উভয় দেশকেই সচেতন থাকতে হবে।
সহযোগিতার একটি সম্ভাব্য ক্ষেত্র হতে পারে ভারতভিত্তিক প্রতিরক্ষা শিল্পের যৌথ উন্নয়ন। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর প্রযুক্তির সাথে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ ও জনশক্তির সমন্বয় সাধন করা যেতে পারে। ভারতের শিল্প নিরাপত্তা ও ব্যবসায়িক পরিচালনাব্যবস্থাকে আমেরিকার সাথে সমন্বিত করার মাধ্যমে ভারত তার দেশে নির্মিত প্রযুক্তি দিয়ে আশু প্রতিরক্ষা চাহিদা পূরণ করতে পারে, রাশিয়ার ওপর থেকে নির্ভরতা হ্রাস করতে পারে। আর এত করে ভারতের বেসরকারি খাত, চাকরি সৃষ্টি, উদ্ভাবন বিকশিত হতে পারে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এশিয়ার উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর উদীয়মান জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও হতে পারে ভারত।
Posted ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta