কক্সবাংলা ডটকম(২৯ জুলাই) :: সিরিজ জিততে গড়তে হতো রেকর্ড। সেন্ট কিটসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম দল হিসেবে তিনশ রানের লক্ষ্য টপকাতে হতো। স্বাগতিকদের সেই রেকর্ডটা করতে দেয়নি বাংলাদেশ। শুরুতে ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরা তামিমের সেঞ্চুরি আর মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ফিফটিতে বড় সংগ্রহ গড়ার পর দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৮ রানে ম্যাচ জিতে নিয়েছে লাল-সবুজরাই। সঙ্গে ২-১ ব্যবধানে তিন ওয়ানডের সিরিজও। প্রথম ম্যাচে ৪৮ রানে জিতেছিল মাশরাফীর দল।
টেস্ট সিরিজে অসহায় আত্মসমর্পণের পর বাংলাদেশের এই ঘুরে দাঁড়ানো নয় বছর পর একটি ভুলতে বসা স্বাদের উপহার দিয়েছে। বিদেশের মাটিতে যে ৯ বছর পর সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ে সফরে ৪-১ এ জেতা সিরিজের পর এটিই প্রথম। আর দেশ-বিদেশ মিলিয়ে দুই বছর পর সিরিজ জয়।
শেষ দুই ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য ৩৪ রান দরকার ছিল। ৪৯তম ওভারে রুবেলের দুর্দান্ত বল থেকে মোটে ৬ রান নিতে পারেন পাউয়েল এবং নার্স।
শেষ ওভারে ক্যারিবিওদের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৮ রান। মুস্তাফিজের করা শেষ ওভার থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র ৯ রান নিতে পারে। তাতে বাংলাদেশের ১৮ রানের জয় নিশ্চিত হয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই জয়ে ২০০৯ সালের পর এশিয়ার বাইরে সিরিজ জয় করলো মাশরাফি-তামিমরা। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চার বছর ধরে কোন সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়নি।
এর আগে প্রথমে টস জিতে বাংলাদেশ নির্ধারণী ৫০ ওভারে ৬ উইকেটের বিনিময়ে ৩০১ রান তোলে। বাংলাদেশ পক্ষে তামিম ইকবাল ১২৪ বলে ১০৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন।এছাড়া মাহমুদুল্লাহ খেলেন অপরাজিত ৬৭ রানের ইনিংস। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা ৩৬ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলেন। দলের পক্ষে আগের দুই ম্যাচে ফিফটি পাওয়া সাকিব করেন ৩৭ রান।
জবাবে ক্যারিবিও দুই ওপেনার ক্রিস গেইল এবং ইভান লুইস ভালো শুরু করেন। ১০.১ ওভারেই তারা তুলে ফেলেন ৫৩ রান। এরপর মাশরাফির দারুণ এক বলে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লুইস। অপর প্রান্তে থাকা গেইল অবশ্য একাই দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ৬৬ বলে ৭৩ রান করা গেইলকে মেহেদির ক্যাচে পরিণত করেন রুবেল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং দানব ফিরে যাওয়ার আগে পাঁচটি ছয় এবং ছয়টি চারের মার মারের। ২১.৫ ওভারে দলীয় ১০৫ রানের মধ্যে গেইল একাই করেন ৭৩ রান। গেইলের আউটের পর হেটমায়ার এবং শাই হোপ দলের হাল ধরেন। তাদের দু’জনের জুটি থেকে আসে ৬৭ রান।
আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা হেটমায়ার ৪২ বলে ৩০ রান করে সাজঘরে ফেরেন এ ম্যাচে। ধীর গতিতে এগুনো শাই হোপ ৯৪ বলে ৬৪ রান করে ফেরেন মাশরাফির বলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ৪৩.১ ওভারে ৫ উইকেটে ২২৪। হোপের আউটের পর দলের হাল ধরেন রোভম্যান পাওয়েল। তিনি ৪১ বলে অপরাজিত ৭৪ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলেন।
বাংলাদেশের পক্ষে ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৬৩ রানে ২ উইকেট নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। এছাড়া রুবেল হোসেন ৭ ওভারে ৩৪ রানে নেন ১ উইকেট। মেহেদি মিরাজ এবং মুস্তাফিজ নেন ১টি করে উইকেট। দারুণ এক সেঞ্চুরি করায় ম্যাচ সেরা হন তামিম। এছাড়া তিন ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি এবং এক ফিফটিতে ২৮৭ রান করায় সিরিজ সেরাও হন তামিম।
সেন্ট কিটসে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দারুণ এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ এ নিজেদের করেছে টাইগাররা। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের নয় বছর পর সিরিজ জয়ের কীর্তি হলো তাতে। শনিবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে পাওয়া এই জয়ে সতীর্থদের কৃতিত্ব দিলেন অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। বললেন, ‘ছেলেরা পেশাদার পারফরম্যান্স দেখাতে পেরেছে।’
গায়ানায় প্রথম ওয়ানডেতে ৪৮ রানের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও জয়ের দ্বার প্রান্তে ছিল সফরকারীরা। কিন্তু দিবারাত্রির ম্যাচে শেষ দিকের নাটকীয়তায় হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে এদিনের জয়ে নিজেদের পারফরম্যান্সকে ‘পেশাদার পারফরম্যান্স’ স্বীকৃতি দিলেন মাশরাফি।
জয়ের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মাশরাফী বলেন, ‘ক্রিকেট মেন্টাল গেম। আমরা দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ হেরেছিলাম। যদিও ৯৯ ওভার পর্যন্ত ম্যাচ আমাদের হাতে ছিল। কিন্তু এম্যাচে আমি বলবো ছেলেরা পেশাদার পারফরম্যান্স দেখাতে পেরেছে। ছেলেরা দারুণ ছন্দে আছে।’
পুরো সিরিজে দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন তামিম ইকবার। দুটি সেঞ্চুরি করে সিরিজ সেরা হয়েছেন তিনি। সাকিব আল হাসান ব্যাট-বল হাতে ছিলেন দারুণ। মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহও দারুণ পারফর্ম করেছেন। বল হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফী নিজেও। তবে সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, এনামুলের মতো তরুণরা ছিলেন ব্যর্থ।
মাশরাফী তাই সিনিয়রদের কৃতিত্ব দিলেন। আর তরুণদেরকে বললেন কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিতে, ‘তামিম, সাকিব, মুশি (মুশফিক) দারুণ খেলেছে। এখন তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে এবং দায়িত্ব নিতে হবে। বোলাররা তিন ম্যাচেই দারুণ বল করেছে।’
সামনে টি-টুয়েন্টি সিরিজ। মাশরাফী যে ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়ায় থাকবেন না সেখানে। তবে দলকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করার বার্তা দিয়ে গেলেন ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘এখন টি-টুয়েন্টিতে আমাদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজ কখনোই সহজ নয়।’
Posted ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৯ জুলাই ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta