কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৬ সেপ্টেম্বর) :: ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ চট্টগ্রামে নিরাপদে জরুরি অবতরণ করলেও এর যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি।
ওই বিমানের যাত্রীরা মনে করছেন- তারা সাক্ষাৎ মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। এক মুহ‚র্তেই বদলে যাওয়া তখনকার দৃশ্যপট বর্ণনা করতে গিয়ে যাত্রীদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ওই বিমানের যাত্রীদের একজন সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ।
মোবাইল ফোনে বিকেলে তিনি বলেন, ৬ জন সুহৃদ নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে যাচ্ছিলাম। সকাল ১১টা ৪৮ মিনিটে ইউএস-বাংলার ওই বিমানটি কক্সবাজারের উদ্দেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়ে। ৪০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছার কথা থাকলেও পাইলট কয়েকবার চেষ্টা করেও কক্সবাজারের রানওয়ে স্পর্শ করাতে ব্যর্থ হন।
বিমানের সামনের চাকা (নোজ গিয়ার) না নামায় স্টুয়ার্ড যাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সবাই শক্ত করে সিট বেল্ট বাঁধুন, কারো পায়ে হাই হিল থাকলে খুলে ফেলুন, মাথা নিচু করে রাখুন, সামনের সিটে হাত রাখুন’। বারবার এমন ঘোষণার পর যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তখন যাত্রীদের জানানো হয়, ‘রানওয়ে খালি নেই, লাইন পাওয়া যাচ্ছে না’। এরপর বিমান ফের আকাশে উড়িয়ে প্রায় এক ঘণ্টা সময় ধরে চক্কর দেয়।
দুপুর ১টা ২০ মিনিটে প্রচণ্ড শব্দে ঝাঁকুনি দিয়ে সামনের চাকা ছাড়াই চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে উড়োজাহাজটি। কেবলমাত্র আল্লাহর অশেষ রহমতেই আমরা প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছি।
ওই বিমানের আরেক যাত্রী সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার বলেন, স্টুয়ার্ডের ঘোষণার পরই যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মহিলা ও বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করে। এতক্ষণ খোশগল্পে মত্ত থাকা সবাই দোয়া দরুদ পড়তে শুরু করেন। মুহ‚র্তেই পাল্টে যায় বিমানের ভেতরকার পরিবেশ।
তখনকার দৃশ্যপট অবর্ণনীয় উল্লেখ করে আলী হায়দার বলেন, ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ বিকল্পভাবে কক্সবাজার যাওয়ার ব্যবস্থা করলেও আমরা চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি। জীবনের এত বড় একটা ফাড়া (বিপদ) কাটার পর আর পরিবার থেকে দূরে থাকতে পারছি না।
নায়লা নাজনিন নামে আরেক যাত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, চট্টগ্রামের আকাশে ঘোরার সময় বিমান যাত্রীদের সবাই আল্লাহকে ডাকছিল। সবাই মাথা নিচু করে শুধু দোয়া দরুদ পড়ছিল। কেউ কেউ আজান দিচ্ছিল। ল্যান্ডিংয়ের সময় অসম্ভব ঝাঁকুনির সময় সবাই আল্লাহ-আল্লাহ বলে চিৎকার করে উঠে।
এ সময় অনেকে আহত হন, দুএকজনের পা ও হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। আমার বড় বোন আলেয়া বেগমের অবস্থা বেশি খারাপ। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
Posted ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta