রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারের ‘অরুণোদয়’ স্কুল : জেলা প্রশাসক মো.কামাল হোসেন’র এক মানবিক উদ্যোগ

বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯
259 ভিউ
কক্সবাজারের ‘অরুণোদয়’ স্কুল : জেলা প্রশাসক মো.কামাল হোসেন’র এক মানবিক উদ্যোগ

তোফায়েল আহমেদ,বিশেষ প্রতিবেদক,কালের কন্ঠ(৩ ডিসেম্বর) :: তিনি স্কুলে এলেই তাঁর পিছু নেয় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা। কেউ কাঁধে, কেউ কোলে উঠে বসে। কেউ তাঁর কোলে বসেই গাইতে শুরু করে—‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা…হন কারণে ভালোবাসার দাম ন দিলা।’ শিশুরা তাঁকে টেনে নিয়ে টেবিলে বসে মেতে ওঠে খেলা আর পড়ায়। তিনি যেন হ্যামেলিনের বংশীবাদক। তাঁর হাত দিয়ে গড়ে উঠেছে এক ভিন্ন জগত্। এই তিনি হলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। তাঁর এই বিশেষ জগতের নাম ‘অরুণোদয়’।

‘অরুণোদয়’ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) শিশুদের জন্য গড়ে তোলা বিশেষায়িত স্কুল। এখানে রয়েছে শিক্ষা ও চিকিত্সাসেবার পাশাপাশি খেলাধুলা, সংগীত ও বিনোদনের সুব্যবস্থা। গত সোমবার পর্যন্ত স্কুলটিতে ভর্তি হয়েছে ২১৯টি শিশু। শিক্ষক, চিকিত্সক ও কর্মচারী রয়েছেন ২২ জন।

২০১৮ সালের ৪ মার্চ কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন কামাল হোসেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কক্সবাজারে এসেই শুরু করে দেন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের একটি ঠিকানা গড়ার কাজ। শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত সার্কিট হাউসের পাশে স্কুলটির জন্য ৭০ শতাংশ খাসজমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সাড়ে আট হাজার বর্গফুটের দোতলা একটি ভবন।

জেলা প্রশাসকের বাংলো থেকে অফিসে যাওয়া-আসার পথেই পড়ে ‘অরুণোদয়’। তিনি প্রতিদিনই কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্কুলে আসেন।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের একটি আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাসসহ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন কামাল হোসেন। এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠছেন ‘মানবিক মানুষ’ হিসেবে।

স্ট্যাটাসে জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন লিখেছেন, ‘আবদুল আল আমিন। আমার অরুণোদয়ের প্রতিবন্ধী ছাত্র। কক্সবাজার ছেড়ে যাওয়ার সময় অন্য কোনো কিছুর জন্যই কষ্ট অনুভব হবে না, হবে তোদের জন্য। তোদের পাশে ছায়া হয়েই থাকব যত দিন বেঁচে থাকি।’ ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের বুক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আবদুল্লাহ আল আমিন গেয়ে চলেছে ‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা…হন কারণে ভালোবাসার দাম ন দিলা’ গানটি। জেলা প্রশাসক শিশুটিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতের তর্জনী দিয়ে তাল দিতে দিতে নিজেও গাইছেন।

অরুণোদয়

আবদুল আল আমিন। আমার অরুণোদয়ের প্রতিবন্ধী ছাত্র। কক্সবাজার ছেড়ে যাবার সময় অন্য কোন কিছুর জন্যই কষ্ট অনুভব হবেনা, হবে তোদের জন্য। তোদের পাশে ছায়া হয়েই থাকব যতদিন বেঁচে থাকি।

Posted by DC Cox's Bazar on Wednesday, November 27, 2019

কামাল হোসেন  বলেন, ‘পরিবারের এক ঘনিষ্ঠজনের দুঃখের জীবনকাহিনি ঘিরেই প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি আমার দয়া-মায়ার এক ভিন্ন অনুভূতির জন্ম নেয়। আমার ইচ্ছা হয় ওদের জন্য আরেকটু বেশি সময় দিই। তাহলে হয়তো বা পিছিয়ে থাকা এ শিশুরা কিছুটা হলেও এগিয়ে আসত।’

জেলা প্রশাসনের পক্ষে ‘অরুণোদয়’-এর দেখভাল করছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাজাহান আলী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, কক্সবাজার জেলায় প্রতিবন্ধী রয়েছে ২২ হাজার ১৯৪ জন। এর মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। অন্যদের মধ্যে অটিজম আক্রান্ত, বাক্প্রতিবন্ধী, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, মানসিক প্রতিবন্ধী, শ্রবণপ্রতিবন্ধী, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোমসহ রয়েছে আরো অন্য প্রতিবন্ধী।

তাহমিনা আকতারের যমজ সন্তান তাওহিদ ইসলাম মাহির ও তাহসিন ইসলাম মিহিরের বয়স সাত বছর। একজন বেশি কথা বলে আর অন্যজন কোনো কথাই বলে না। ছেলেদের নিয়ে তাহমিনার দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। তবে দুই ছেলেকে ‘অরুণোদয়ে’ দিতে পেরে এখন তিনি মনে করছেন—এটা একটা বড় প্রাপ্তি।

মনোয়ারা বেগম তাঁর শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে মনোয়ার মোস্তফা রাফিকে অরুণোদয়ে ভর্তি করিয়ে এখন স্বস্তিতে আছেন। বললেন, ‘প্রতিবন্ধী হয়েও আমার ছেলে ক্রিকেট খেলতে বেশি ভালোবাসে। এখানে খেলার সেই পরিবেশ থাকায় আমার রাফি কিছুতেই বাসায় ফিরতে চায় না।’

শিশু শাহরিয়ারেরও একই অবস্থা। সকালে ‘অরুণোদয়ে’ আসতে পারলেই আর বাসায় ফিরতে চায় না। অবশ্য তার মা মনোয়ারাকে অন্য এক চিন্তায় পেয়ে বসেছে। তিনি জানতে চান, ‘এমন মানবিক জেলা প্রশাসক যখন বদলি হয়ে যাবেন, আমাদের এতগুলো শিশুর কী হবে?’

সহকারী শিক্ষক পিপাসা রানী দাশ  বলেন, ‘স্কুলে আসার পর বাসায় রেখে আসা আমার তিন বছরের শিশুসন্তানের কথাও আমি ভুলে যাই।’

সংগীত শিক্ষক প্রিয়া দত্ত বলেন, ‘আমি স্কুলের শিশুদের সাথে একেবারেই মিশে গিয়েছি। আমার কণ্ঠে ওরা কণ্ঠ মেলায় আর সেই কণ্ঠ আমি রাত-দিন অনুভব করি।’

স্কুলের কার্যক্রম শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এখনো বাকি রয়েছে। আফিফা রশিদ নূরী নামের এক শিক্ষার্থী সমাজের পিছিয়ে পড়া ও বঞ্চিতদের উত্সাহ ও অনুপ্রেরণা দিতে এগিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে স্কুল উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছে।

সেই চিঠিতে আফিফা বলেছে, ‘অরুণোদয় আমার অন্ধকার দূর করেছে। দূর করেছে আমার পরাধীনতা। আমি এখন স্বাধীন। এখানে এসে শিক্ষকের কাছে শুনেছি, আপনি নাকি অরুণোদয়ের প্রেরণা। তাই আপনাকে আমরা দেখতে চাই। শুনতে চাই আপনার একটু কথা।’

জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সেবায় আসা বেশ কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আমার আহ্বানে অরুণোদয়কে এ পর্যায়ে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশের এক প্রান্তের পর্যটন শহর কক্সবাজার এমনিতেই শিক্ষাদীক্ষায়ও পিছিয়ে রয়েছে। তাই শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে এখানে ডিসি কলেজ নামের একটি মানসম্মত একাদশ শ্রেণির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও শুরু করেছি। প্রতি শনিবার আমি নিজেও পাঠদান করে থাকি।

259 ভিউ

Posted ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com