কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৭ নভেম্বর) :: কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী সমুদ্রসৈকতে ঝুলছে বর্ণিল ব্যানার আর পোস্টার। সমুদ্রের নীল জলরাশিতে ভাসছে সুসজ্জিত সাম্পান। একেকটি সাম্পানে একেকটি রাষ্ট্রের পতাকা। ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়ামের (আইওএনএস) সদস্য ও পর্যবেক্ষক দেশগুলোর পতাকাবাহী এসব সাম্পান ইঙ্গিত দিচ্ছে বিরাট এক উৎসবের।
উখিয়ার ইনানী সংলগ্ন গভীর সমুদ্রেও সারি সারি নোঙ্গর করা রয়েছে ৪১টি যুদ্ধজাহাজ। জাহাজ থেকে অনেক দূরে থাকলেও সেগুলো দেখার জন্য উদগ্রীব আশপাশ এলাকার বাসিন্দাদের ভিড় জমেছে।
সত্যি, বঙ্গোপসাগরের বুকে ভেসে থাকা এসব জাহাজ যেন বাংলাদেশেরই গর্বের প্রতীক। ৪১টি জাহাজের মধ্যে ৩৩টি বাংলাদেশের, চারটি ভারতের, একটি চীনের, একটি ইন্দোনেশিয়ার ও দুইটি ইরানের।
সোমবার মধ্যরাত থেকে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ায় অংশ নিচ্ছে এসব জাহাজ। এ ধরনের মহড়ায় এবারই প্রথম ভারত-চীন একসঙ্গে অংশগ্রহণ করছে।
সোমবার সকালে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ মহড়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। মহড়ার উদ্বোধন ঘিরে ছিল বর্ণিল সব আয়োজন। সৈকতে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে নেচে-গেয়ে শিল্পীরা বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরেন বিশ্ববাসীর কাছে। এর পর বিচ কার্নিভালেরও উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি।
নৌবাহিনীর গোয়েন্দা শাখার প্রধান কমডোর এম সোহায়েল জানান, নেভাল ডিপ্লোম্যাসির মাধ্যমে ভারত ও চীনকে একসঙ্গে মহড়ায় অংশ নিতে রাজি করিয়েছে বাংলাদেশ। এতে অংশ নিচ্ছে মিয়ানমারও। মহড়া চলার সময় জাহাজগুলো বঙ্গোপসাগরের আট কি.মি. গভীরে চলে যাবে। বাংলাদেশ সমুদ্রসীমার শেষ পর্যন্ত গিয়ে বিদেশি জাহাজগুলোকে বিদায় জানিয়ে আবার বাংলাদেশের জাহাজ চলে আসবে।
নৌবাহিনীর সূত্র জানাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরের জলসীমানাকে তিনটি ভাগে ভাগ করে এই মহড়া হচ্ছে। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ সমুদ্র মহড়ায় তিনটি বিষয় সামনে রাখা হয়েছে। প্রথমত. কোনো জাহাজ ডুবে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেলে কীভাবে তাদের উদ্ধারে সহায়তা করা যাবে। দ্বিতীয়ত. কোনো জাহাজ হারিয়ে গেলে বা আগুন লাগলে তাদের কীভাবে সহযোগিতা করা যাবে।
তৃতীয়ত. বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে তা উদ্ধারে কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে। এসবই এ মহড়ায় দৃশ্যমান হবে। এবারের মহড়ায় বাংলাদেশের যুদ্ধজাহাজ বিএনএস বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দেবে। তাকে অনুসরণ করবে অন্য আরও ৪০টি যুদ্ধজাহাজ। বেশ কয়েকটি মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফট ও হেলিকপ্টারও অংশ নিচ্ছে এ মহড়ায়।
আইওএনএসের ২৩টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া ৯টি পর্যবেক্ষক দেশের মধ্যে ৭টি দেশও মহড়ায় থাকছে। ভারত মহাসাগরীয় দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে আঞ্চলিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে বঙ্গোপসাগরে এ আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ার আয়োজন করছে বাংলাদেশ। মহড়া সরেজমিন দেখতে প্রথমবারের মতো অর্ধশতাধিক সংবাদকর্মী বিভিন্ন জাহাজে নাবিক ও অন্য ত্রুক্রদের সঙ্গে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।
এ মহড়ায় আইওএনএসের যেসব সদস্যরাষ্ট্র অংশ নিচ্ছে তারা হলো- অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোজাম্বিক, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিসিলিস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, তিমুর লেসেথ, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য। নয়টি পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে রয়েছে- চীন, জার্মানি, ইতালি, জাপান, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া ও স্পেন।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যকার মেরিটাইম নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কোন্নয়ন; সন্ত্রাস, চোরাচালান দমনসহ বিভিন্ন পেশাগত সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে আইওএনএস প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বছরই ভারতে এর প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দ্বিতীয়, ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় তৃতীয়, ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় চতুর্থ সম্মেলন হওয়ার পর এবার পঞ্চম সম্মেলন হচ্ছে বাংলাদেশে। ২০১৬-১৮ সালের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী আইওএনএসের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে আইওএনএসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
Posted ৩:১৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta