মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(৩১ অক্টোবর) :: রাখাইনে বাঙ্গালী লেখা এনভিসি কার্ড আতংকে ভুগছে সেখানার রোহিঙ্গারা। এসব কার্ড হাতে ধরিয়ে দিে মিয়ানমার সেনা সদস্যরা এখনো নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে পারিয়ে আসার অপেক্ষায় থাকা রোহিঙ্গারা। যে কারণে সেনাদের ভয়ে আতংকিত রোহিঙ্গারা ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে পাড়ি জমাচ্ছে।
মঙ্গলবার ভোরে ৪০ জন নৌকা রোহিঙ্গা বোঝাই রোহিঙ্গা নিয়ে উখিয়ার উপকূলীয় এলাকা বাইলা খালির চ্যানেলে ডুবে যায়। এসময় ঘটনাস্থলেই ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নৌকা ডুবির ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান জানিয়েছেন, বুচিডং জেলার আকিয়াব গ্রামের মোহাম্মদ হালিমের ছেলে সিরাজুল হক (১৬), আবুল হাশেমের স্ত্রী জোহুরা খাতুন (৫৫), মোঃ ইসলামের ছেলে এনামুল হাসান (৫), আলী জোহারের মেয়ে মিনারা বেগম (৫)। তারা মিয়ানমারের বুচিডং ইনিশং গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
সেখানে বেঁচে যাওয়া ২১ জনকে উদ্ধার করে খাদ্য সহায়তা দিয়ে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া ১৫জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন বলেন, ২০ অশ্ব শক্তি সম্পন্ন একটি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে প্রায় ৪০ জন রোহিঙ্গা বুচিডং উপকুলীয় এলাকা থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে উখিয়ার পথে রওনা হয়।
মঙ্গলবার ভোরে নৌকাটি জালিয়াপালং উপকূলীয় এলাকার বাইলা খালী চ্যানেল দিয়ে উপকূলে উঠার সময় ঢেউয়ের তীব্রতায় লন্ডভন্ড হয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। তাদের আত্মচিৎকারে স্থানীয় মাছ ধরার জেলেরা ঝুঁকি নিয়ে ২১ জন রোহিঙ্গাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে।
কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা আশরফ আলী (৪০), অলি উল্লাহ (৩৮) জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে পহেলা অক্টোবর থেকে জাতীয়তা যাচাই বাছাই করণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন এনভিসি কার্ড দেওয়া হয়েছে।
তারা বলেন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধিন কমিশনের সুপারিশ অনুয়ায়ী যাচাই বাছাই করণ প্রক্রিয়া শুরু করে মিয়ানমার সেনা সদস্যরা। ১৯৮২ সালে বির্তকিত বর্ণবাদী আইনে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়।
এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃ-গোষ্ঠী হিসাবে স্বীকৃতি পর্যন্ত দেয়নি। ১৯৮২ সালে নতুন ভাবে দরখাস্তকারী আখ্যায়িত করে ওই আইনের আওতায় শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় কোন জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নাগরিক কিনা তা আইন আদালত নয়।
নির্ধারণ করবে সরকারের কাউন্সিলর টেষ্ট। এই আইনের কারণে রোহিঙ্গারা ভাসমান জনগোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত হয়। ২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হোয়াইট কার্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক সরকার তা প্রত্যাহার করলে ওই কার্ড আপনা আপনি বাতিল হয়ে যায়।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম মিয়ানমার টাইমসের উদ্ধৃতি হয়ে কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা নেতা ডাক্তার জাফর আলম জানান, সে সময়ে প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে নাগরিকত্ব কার্ড ছিল। যাদের নাগরিকত্ব ছিল না তাদেরকে তাদেরকে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের দপ্তর। তবে ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারের সে সময়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল কেবল ৩৫ হাজার ৯৪২ জন ওই আবেদন করেন। আর গোটা রাখাইন রাজ্যে নাগরিকত্বহীন হয়ে পড়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক।
এসব নাগরিকদের মধ্যে বর্তমানেও যারা মিয়ানমারের রাখাইনে অত্যাচার উৎপীড়ন সহ্য করে বসবাস করছে তাদেরকে জোর করে বাঙ্গালি লেখা ভেরিফিকেশন কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা এসব কার্ড গ্রহণ করছে না তাদেরকে সেনা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব কারণে রোহিঙ্গারা জীবন বাজি রেখে সাগর পথে পাড়ি জমাতে শুরু করেছে।
শামলাপুর ইউপি সদস্য মোঃ ইউনুছ জানান, নিহতদের লাশ স্থানীয়দের সহযোগীতায় দাফন করা হয়েছে।
Posted ১১:৫১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta