বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে কেমন আছেন রাখাইনের হিন্দু শরণার্থীরা

বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭
787 ভিউ
কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে কেমন আছেন রাখাইনের হিন্দু শরণার্থীরা

কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৩ সেপ্টেম্বর) :: মিয়ানমারের রাখাইনের ফকিরাবাজার এলাকায় স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখেই ছিলেন রিকা ধর (৩০)। সেখানে অবস্থাপন্ন স্বামীর ছিল জুয়েলারি দোকান। কিন্তু ২৫ আগস্ট দুপুরে মুহূর্তেই সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল।

একদল কালো মুখোশ ও জামা পরা লোক ধারালো ছুরি ও তলোয়ার দিয়ে ফকিরা বাজারের জুয়েলারি দোকানে হামলা চালিয়ে তার স্বামী প্রবল ধরসহ চারজনকে কুপিয়ে হত্যা করে। সেই সঙ্গে হত্যা করে তার দুই ভাই ও দোকানের এক কর্মচারীকে। পরপর জন্ম নেওয়া তিন শিশুকে নিয়ে পালিয়ে আসার সময়ও রিকা ধরকে মারধর করা হয়।

সেই সঙ্গে ছিনিয়ে নেওয়া হয় তার কানে ও গলায় পরা অলঙ্কারগুলো। শুধু রিকা ধরই নন, ফকিরাবাজারে ৭০টি হিন্দু পরিবারের ১০৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

এ ছাড়াও চিকনছড়া থেকে বেড়াতে যাওয়া তিনজনকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই এলাকায় হিন্দু পরিবারের মোট ১০৮ জন পুরুষকে মেরে ফেলা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় সব বাড়িঘর। বাজারে প্রবল ধরের জুয়েলারি দোকান থেকে লুট করা হয় প্রায় ৫০ ভরি স্বর্ণ। রিকা ধরের পরনে যা স্বর্ণালঙ্কার ছিল তাও কেড়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ফেলে যায় প্রবল ধরের ক্ষতবিক্ষত লাশ।

শুধু প্রবল ধর নয়, তলোয়ার দিয়ে কেটে কেটে হত্যা করা হয় বলিবাজার, সাহেব বাজার, নাকপুরার সরস্বতী ধর, রসবালা রুদ্র, প্রমীলা শীল, অনিকা ধর, বীনা শীলসহ অসংখ্য হিন্দু নারীর স্বামী ও তাদের শ্বশুর-ভাশুর এবং দেবরকে।

মুখোশ পরা দুর্বুত্তরা তখন অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে মহিলাদের ধমক দিয়ে বলতে থাকে— ‘তোরা ইন্ডিয়ার হিন্দু ইন্ডিয়াতে চলে যা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে না গেলে সবাইকে মেরে ফেলব। ’ তাই উপায়ান্তর না দেখে এক কাপড়ে সন্তান-পরিজন নিয়ে ওই দিনই প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের সঙ্গেই হাঁটা শুরু করে হিন্দু পরিবারগুলো।

সরেজমিন গিয়ে দেখা হয় হিন্দু পরিবারগুলোর সঙ্গে। উখিয়ার হলুদিয়া ইউপি সদস্য স্বপন শর্মা রণির বাড়িতে একটি পরিত্যক্ত মুরগির ফার্মে আশ্রয় নিয়েছেন ৫১৮ জনের এই দলটি। এখানে তারা অন্যান্য রোহিঙ্গা শরণার্থীর চেয়ে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছেন। প্রতিদিন দুই বেলা ৫২৩ জনের জন্য রান্না হয় এখানে। বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া ত্রাণসামগ্রী থেকে সবার জন্য রান্না হচ্ছে।

বিশেষ করে সরকার এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নের্তৃবৃন্দ সহ দেশের বিভিন্ন সনাতনি সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের নিয়মিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান আশ্রয় নেওয়া বিনেশ্বর শীল।

এদিকে বুধবার সকালে কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে দেখতে যান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেঁতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।সেখানে তিনি আশ্রয় নেয়াদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের উপর নির্যাতনের নানা কথা মনযোগ সহকারে শুনেন।পরে আশ্রিত হিন্দুদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক ও ট্রাস্টি অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন ও ঐক্য পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট দীপংকর বড়–য়া পিন্টু।

এসময় মন্ত্রী আশ্রয় নেয়া হিন্দু সম্প্রদায়কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে বলেন, কুতুপালংয়ে আশ্রিত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতার করা হবে।পরে তিনি আশ্রিত হিন্দুদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনকেও নির্দেশ দেন।

এছাড়াও বুধবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্রগ্রাম এর প্রতিনিধি দল নেতা তাপস হোড় ও এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধূরীর নের্তৃত্বে কুতুপাংলয়ে আশ্রিত হিন্দুদের স্থান পরিদর্শন করে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার ত্রাণ বিতরণ করেন।এসময় তারা আশ্রিতদের সকল সহযোগীতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

এক পর্যায়ে ওই আশ্রয় কেন্দ্রেই কথা হয় ফকিরাবাজার এলাকার ৮ বিধবা মহিলার সঙ্গে। যাদের প্রত্যেকের স্বামীকে মিয়ানমারে গত ২৫ আগস্ট হত্যা করা হয়। যাদের প্রত্যেকের বয়স হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিধাব অনিকা ধরের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অঝরধারায় চোখের পানি পড়তে থাকে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘দেড় বছর আগে ফকিরাবাজারের মেলিঙ্গা ধরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। আমার সামনেই আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়। আমার ভাবতেই ভীষণ কষ্ট হয়— গর্বে থাকা শিশুটি জন্ম নিলে সে তার পিতাকে দেখতে পাবে না কোনোদিনই। ’

এভাবে স্বামীহারা ৮ নারীর মধ্যে সরস্বতী ধর, রসবালা রুদ্র, প্রমীলা শীল, বীনা শীল জানালেন তাদের সামনে নির্মমভাবে নিহত হওয়া স্বামী-স্বজনদের কথা, তাদের কষ্টের কথা। তবে হিন্দু-মুসলিম বেশ কয়েকজন নারী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বহু নারীই মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। 

787 ভিউ

Posted ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com