সংবাদ বিজ্ঞপ্তি(১৬ জুলাই) :: চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী আর্ন্তজাতিক মানবিক সংস্থা মেডিসিন্স স্যান্সফ্রন্টিয়ার্স/ সীমান্ত বিহীন চিকিৎসকদল(এমএসএফ)১৬ জুলাই কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং হাসপাতালে উন্মুক্তভাবে ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের দশ বছর উদযাপন করেছে।
২০০৯ সালে হাসপাতালটি মূলত একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে কুতুপালং-এর স্থানীয় জনগণ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে চালু করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত এ হাসপাতালটির বহিঃবিভাগে ৯,২৫,৪৩৬টি স্বাস্থ্য পরামর্শ দেয়া হয়, ১,৮৩,৬৮২ জন মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ দেয়া হয়, এবং ১৯,৬০২ জন রোগীকে অন্যান্য হাসপাতালে সেকেন্ডারি লেভেলের চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়।
হাসপাতালটিতে ১০ বছরে ৬,৫০২টি ডেলিভারি করা হয়, যার মধ্যে ৬৫ শতাংশ ছিল বাংলাদেশী নবজাতক।
আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন শরণার্থীত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার কাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের হেলথ কো-অর্ডিনেটর ডাঃআবু তোহা, উখিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফখরুল সুমন ও অন্যান্য।
এমএসএফ-এর প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর ইয়াশো বর্ধন বলেন, “কুতুপালং-এ স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা পুরণে সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দলের দীর্ঘস্থায়ী অঙ্গীকার আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা আবার নিশ্চিত করছি। গত একদশকে এই হাসপাতালটি রোগীদের উচ্চমানের ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
স্থানীয় বাংলাদেশী থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা শরণার্থী সবার জন্য আমাদের হাসপাতাল সবসময় খোলা। ২০১৭ সালের আগস্টেরও বহু আগে মিয়ানমারের বৈষম্য ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ক্রমবর্ধমান রোগীদের প্রয়োজন মেটাতে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করার জন্য কুতুপালং হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়”।
২০১৭ সালের আগস্টে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর আগমনের পর কক্সবাজারে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সুযোগ বাড়াতে এমএসএফ ১০টি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, কমিউনিটি ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা এবং বৃহৎ পরিসরে পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে তার কর্মকান্ড বৃদ্ধি করেছে।
এমএসএফ-এর এই কুতুপালং হাসপাতালটিও বর্ধিত করা হয়েছে। এখানে এখন রয়েছে ২৪-ঘন্টা ইমার্জেন্সি রুম,বহিঃবিভাগ, ১০০-শয্যার অন্ত:বিভাগ বা আইপিডি, শিশু ও নবজাতক ওয়ার্ড, আইসোলেশন বিভাগ এবং একটি ডায়রিয়া ট্রিটমেন্ট ওয়ার্ড।
এছাড়াও চালু আছে গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সেবা, পরিবার পরিকল্পনা এবং ম্যাটার্নিটি সেবা।
এমএসএফ টিমের আরও আছে যৌন নির্যাতন ও সহিংসতার শিকারদের চিকিৎসা, মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ, পরীক্ষাগার বা ল্যাবরেটরি সুবিধা এবং জীবন রক্ষাকারী রক্তদান সেবা।
এমএসএফ-এর ইমার্জেন্সি কোঅর্ডিনেটর আরুণ জেগান বলেন, ‘উখিয়ার সাধারণ মানুষ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনের একটি অংশ হতে পারে এমএসএফ সত্যিই সম্মানিত বোধ করে।
এই হাসপাতালের কর্মকান্ড নিরবিচ্ছিন্নভাবে পরিচালনায় সহায়তার জন্য আমরা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সমর্থনও আমাদের মেধাবী বাংলাদেশী স্টাফদের অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া এই কাজ করা একদমই সম্ভব হত না। রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এমএসএফ কক্সবাজারে চিকিৎসা সেবা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ’।
প্রসংগত, ১৯৮৫ সালেএমএসএফ (মেডিসিন্স স্যান্সফ্রন্টিয়ার্স) বাংলাদেশে কাজ করা শুরু করে।সংস্থাটিময়মনসিংহেরফুলবাড়িয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা এবং কক্সবাজারের কুতুপালং সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিনামূ্ল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। ১৯৯২ সাল থেকে এমএসএফ স্থায়ীভাবে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এবং কক্সবাজার জেলায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। ২০১৭ সালের আগস্টের শেষের দিকে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতরের সহায়তায়, স্থানীয় জনগোষ্ঠীও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাস্থ্য চাহিদা মেটাতে এমএসএফ কক্সবাজারে তার কার্যক্রম দ্রুত আরো প্রসারিত করে।
কক্সবাজারের বাইরে, ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের আলীনগর ও মাদবর বাজারে এমএসএফ-এর দুটি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। এখানে এমএসএফ বিভিন্ন ক্ষুদ্র কারখানার প্রায় ৭,০০০ কর্মীর জন্য পেশাগত স্বাস্থ্য ঝুঁকির নানা সমস্যা সমাধানে সেবা, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা এবং যৌন নির্যাতন ও সহিংসতার শিকারদের জন্য চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ সেবা দিয়ে আসছে।
Posted ৮:০৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta