বিশেষ প্রতিবেদক(৬ নভেম্বর) :: কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে এনজিও’র ছদ্ধাবরণে অগণিত সংখ্যক সন্দেহভাজন দেশি-বিদেশি লোকজনেরঅস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা ভন্ডুল করতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করা হয়েছে।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় শুরু করা এই অভিযানের মাত্র দেড় ঘণ্টায় ৫ জন বিদেশিসহ ২৬ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।রাত ১১টায় জেলা প্রশাসক নিশ্চিত করেন যে, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ১১ জন মৌলভী রয়েছেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন রাতে জানান, ‘কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই রাত-বিরাতে রোহিঙ্গা শিবিরে দেশি-বিদেশি সন্দেহভাজন লোকজন অবস্থান করে থাকেন। ‘বিশেষ উদ্দেশ্যে’ এসব ব্যক্তি শিবিরে অবস্থান নেয়ার গোপন সংবাদ ছিল আমাদের কাছে। তাই অভিযানে নেমে মাত্র দেড় ঘণ্টা সময়ে এসব লোকজনদের আটক করা হয়।
জেলা প্রশাসক আরও জানান,দেশি-বিদেশি কিছু লোক রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুগুলি দেখানোর অপচেষ্টা চালানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।এমনকি উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমান পাড়া নামের সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় নাফনদ তীরে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকজন স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি ছাড়াই চলাচলের সুবিধার জন্য অস্থায়ী সেতু স্থাপনের কাজও শুরু করেন। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিনানুমতিতে নির্মাণাধীন ওই সেতুর কাজ আজ সোমবার বন্ধ করে দেন।
সোমবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের অরণ্যঘেরা এলাকা লম্বাশিয়া ও শিবিরের ডি-৪ এলাকার বস্তি হিসাবে পরিচিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।রাত সাড়ে ১১টায়ও অভিযান চলেছে।
অভিযানের নেতৃত্বদানকারী কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) খালেদ মাহমুদ জানান, আমি রিতিমতো হতবাক হয়েছি, এমন পাহাড়ী এলাকায় এত রাতে বিদেশি নাগরিকদের ঘুরাঘুরি দেখতে পেয়ে। তাদের নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হলেও এত রাতে এখানে অবস্থান করার কথা নয়।
এসব বিদেশি নাগরিকদের রাতের বেলায় রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থানের কথা সরকারের পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও কোনো অনমুতি নেই জানান এডিএম। এমনকি জেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তারও নিকট জানা নেই রাতের বেলায় বিদেশি নাগরিকগনের রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থানের কথা।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানান, মাত্র দেড় ঘণ্টার অভিযানে তারা ৫ জন বিদেশি নাগরিককে রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে এবং অলিগলিতে অজানা কারণে ঘুরাঘুরি করার সময় হাতেনাতে পেয়েছেন। এসব বিদেশিদের মধ্যে রয়েছেন একজন চায়নার নাগরিক এবং অপর ৪ জন ব্রিটিশ নাগরিক।
তাদের কারো কাছে বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেই রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থানের জন্য। এমনকি তারা একেত সীমান্তবর্তী এলাকা তদুপরি রোহিঙ্গা শিবিরের মতো একটি স্পর্শকাতর পাহাড়ী এলাকায় অবস্থান করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণও দেখাতে পারেননি। এ কারণে বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে আচরণবিধি মেনে লিখিত কাগজ নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিযানে থাকা পুলিশের উখিয়া-টেকনাফ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মি. চাইলাউ মারমা রাতে জানান, সন্ধ্যার পর থেকে রোহিঙ্গা শিবিরে বাইরের কোনো লোকজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা গত দুই মাস ধরেই মাইকিং করে জানানো হচ্ছে।
তবুও রাতে অভিযানের সময় দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক লোকজন শিবিরের স্থানীয় বস্তি, দোকান-পাট ও মসজিদ-মাদরাসার ছাউনি থেকে পুলিশ দেখে ছুটাছুটি করে পালাচ্ছিলেন। তবুও ধাওয়া দিয়ে অল্প সময়েই ৪ জন রোহিঙ্গাসহ ১৯ জনকে আটক করা হয়। আটক হওয়া লোকজনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত লোকজন এনজিও’র ছদ্মাবরণে এসব এলাকায় ঘাপটি মেরে অবস্থান নিয়েছিলেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান জানান, রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে এনজিও কর্মী পরিচয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে নানা উস্কানিমূলক অপপ্রচারের অভিযোগও রয়েছে। এমনকি অনেক এনজিও সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়ই রোহিঙ্গা শিবিরে নানা ধরনের কাজে জড়িত থাকার অভিযোগের কথাও শুনেছেন বলে জানান তিনি।
অভিযানে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জসহ তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও অনসার অংশগ্রহণ করেন।
Posted ১:০৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ নভেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta