কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৪ এপ্রিল) :: কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ভিড়েছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রথম চালান নিয়ে বিশেষায়িত জাহাজ ‘এক্সিলেন্স।
১ লাখ ৩৬ হাজার ঘনমিটার তরল গ্যাস নিয়ে মঙ্গলবার মাতারবাড়ী উপকূল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে জাহাজটি নোঙর করে। ২৭৭ মিটার লম্বা, ৪৪ মিটার প্রস্থ এবং ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশ) বিশেষায়িত এ জাহাজটি বাংলাদেশে আসা সবচেয়ে বড় জাহাজ। কাতার থেকে এলএনজি নিয়ে জাহাজটি বাংলাদেশে এসেছে।
‘এক্সিলেন্স’র স্থানীয় এজেন্ট সীকম শিপিং লাইন্স লিমিটেডের পরিচালক জহুর আহমেদ জানান, জাহাজটি উপকূল থেকে দূরে অবস্থান করবে ভাসমান টার্মিনাল হিসেবে। ১৫ বছর বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি জাহাজ ভাড়া পাবে। এরপর এটি বাংলাদেশ সরকারের মালিকানায় চলে আসবে। জাহাজে থাকা এলএনজি পাইপ লাইনের মাধ্যমে আনা হবে চট্টগ্রামে।
এ জন্য মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইনের কমিশনিং (গ্যাস ঢুকিয়ে সফল পরীক্ষা) সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন আনোয়ারা থেকে সীকাকু- পর্যন্ত ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের আরও ৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। এটির কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এলএনজি থেকে পাওয়া গ্যাস শুধু চট্টগ্রামের শিল্প কারখানায় সরবরাহ করা হবে।
জানা গেছে, প্রাকৃতিক গ্যাসকে শীতলকরণ (রেফ্রিজারেশন) প্রযুক্তির মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে তরলে (এলএনজি) পরিণত করা হয়। ‘এক্সিলেন্স’ জাহাজটিতে থাকা এলএনজিকে প্রাকৃতিক গ্যাসে রূপান্তর করা হবে। এরপর পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।
যেভাবে আসবে এলএনজি :
দেশের পাইপলাইনে সরবরাহ করা প্রাকৃতিক গ্যাস আর এলএনজি দুটোই একই পদার্থ। পরিবহনের সুবিধার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসকে তরল করা হয়, এটি এলএনজি নামে পরিচিত। মাইনাস ১৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রাকৃতিক গ্যাসকে তরল করে এলএনজিতে রূপান্তর করা হয়। এই তরল গ্যাস বিশেষভাবে নির্মিত জাহাজে করে আমদানি করা হয়। পরে উচ্চ তাপে আবার তা গ্যাসে পরিণত করে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। তখন এটিকে ‘রিগ্যাসিফাইড এলএনজি’ বা আরএলএনজি বলে। এলএনজিকে আবার গ্যাসে রূপান্তর করতে দুই ধরনের টার্মিনাল রয়েছে। একটি সমুদ্রে ভাসমান (এফএসআরইউ), অন্যটি স্থলভিত্তিক টার্মিনাল।
দেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনালটি হচ্ছে ভাসমান। মহেশখালী দ্বীপের কাছে গভীর সমুদ্রে এই টার্মিনাল অবস্থান করবে। ওই স্থানে সাগরের গড় গভীরতা ৩২ থেকে ৩৫ মিটার। টার্মিনাল থেকে স্থলভাগের পাইপলাইনে গ্যাস দিতে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের ৭ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। সংযোগ পয়েন্টটি মহেশখালীর কোয়ানক ইউনিয়নের ঘটিভাঙায়।
এই জাহাজটিতে এলএনজি আছে এক লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার বা ২৯০ কোটি ঘনফুট। এখান থেকে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট করে গ্যাস গ্রিডে দেওয়ার কথা। এলএনজি আমদানি করা হবে মূলত কাতার থেকে। এলএনজি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় অংশ নিতে পাঁচটি টাগ বোট দেশে এসেছে। এর দুটি জ্বালানি ও লোকবল পরিবহনে ব্যবহূত হবে। আর তিনটি এলএনজি ভেসেলকে এলএনজি টার্মিনাল পর্যন্ত নিরাপদে পৌঁছাতে কাজ করবে।
চুক্তি অনুসারে জাহাজের মালিক এক্সিলারেটকে বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া সব ধরনের কর পেট্রোবাংলা পরিশোধ করবে। টার্মিনাল পর্যন্ত এলএনজি আনার দায়িত্ব পালন করবে পেট্রোবাংলা।
Posted ১:১১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta