কক্সবাংলা রিপোর্ট(৯ নভেম্বর) :: রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে সন্দেহভাজন পশ্চিমা এবং পাকিস্থানী নাগরিকের এখন ছড়াছড়ি।এসব বিদেশিরা যদি কোন এনজিও বা আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মরত কর্মী হন তাহলে তাদের নির্দ্দিষ্ট অফিসে থাকার কথা।অথবা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেওয়া অনুমতি সাপেক্ষেই ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করার নিয়ম।
কিন্তু এসব নিয়ম-কানুনের ধার ধারছে না কিছু বিদেশি লোকজন-এমনই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এনজিও ছদ্মাবরণে দেশি-বিদেশি লোকজন এখন সীমান্তের জিরো লাইন সংলগ্ন এলাকায় বহুত ভবন ভাড়া নিয়ে বসবাস পর্যন্ত শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়-জিরো লাইনে বিদেশি নাগরিকের অহেতুক ঘুরাঘুরিও বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার সীমান্তে এনজিও’র ছদ্মাবরণে সন্দেহভাজন দেশি-বিদেশি লোকজনের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা শিবিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির গোপন সংবাদে রাতে উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। এ অভিযানে যে ৫ বিদেশি নাগরিক সহ ২৬ জনকে আটক করে তাদের নিয়েও উঠেছে নানা কথা। দুই নারীসহ এই ৫ বিদেশির মধ্যে ৪ জনই পাকিস্থানি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ এবং অন্যজন চীনা নাগরিক। এরা হলো ব্রিটিশ-পাকিস্থানী আমির ফারুখ,মাছয়ার আহমদ জামাল,হাবীবা জাবিন জামাল,মোহাম্মদ আমজাদ এবং লিংক কোয়া।
আটক হওয়া বিদেশিরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তারা এখানাকার আইন-কানুন সর্ম্পকে ওয়াকিবহাল নন। একারণেই তারা রাতের বেলায়ও রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থান নিয়েছিলেন। বিদেশি নাগরিক হওয়ায় তাদের মুচলেকা সহকারে পাসপোর্টের ফটোকপি জমা নিয়ে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।
এছাড়া গত ৬ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত পালংখালীর ময়না ঘোনা এলাকায় ‘আপনা’ নামে একটি পকিস্তান-আমেরিকান সংগঠন পররাষ্ট্র-সরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই সন্দেহজনক ক্যাম্প পরিচালনা করছে।আর এ সংগঠনের সবাই পাকিস্থানী নাগরিক।তারা হলো মীর এস আলী,হুমেরা কামার,উসমান শরীফ,শাহীন মিঞা,ফারজানা নকভী,আলীয়া আলী,তানভির চাদরি ও বুশরা দাড়।আর এদেরকে সহযোগীতা করছে আইএসডিই নামের স্থানীয় একটি এনজিও। তবে তাদেরকে এখনো পর্যন্ত আটক বা জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা যায়নি।জানা গেছে এসব পাকিস্থানী নাগরিকরা কক্সবাজার সাগরপাড়ের ‘সী-গাল’ নামের একটি তারকা হোটেলে গত ৫দিন ধরে অবস্থান করছেন।
অপরদিকে গত মঙ্গলবার ফ্রান্সের এক নাগরিক জিরো লাইনে ঘুরাঘুরি করার সময় উদ্ধার করে স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার। এসব ঘটনা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমান পাড়া জিরো লাইন এলাকার।
এরপরের দিন বুধবারও সীমান্তের উখিয়ার জিরো লাইন থেকে বিকেলে আরও দুই ফরাসি ‘সন্দেহভাজন’ নাগরিককে আটকের পর পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে স্থানীয়রা।বিদেশি এই নাগরিকদেরকে নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিপাকে পড়েছে। এসব ফ্রান্সের নাগরিকরা কক্সবাজার সাগরপাড়ের হোটেল ‘সি-আলিফ’ নামের একটি হোটেলে অবস্থান করছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কোনোভাবেই সহযোগিতা করছেন না আটককৃতরা। জিজ্ঞাসাবাদে দুই বিদেশি উল্টো পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন।
কক্সবাজারের সচেতন মহল রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন,একদিকে সীমান্ত দিয়ে অব্যাহতভাবে লোক ঢুকছে।অপরদিকে, দিন দিন পরিস্থিতিও পাল্টে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় দেশি-বিদেশি লোকজন নানা ফন্দি নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।আর স্থানীয়রা সন্দেহ প্রকাশ করছেন এসকল সন্দেহভাজন দেশি-বিদেশি নাগরিকরা সীমান্তের জিরো লাইন এবং রোহিঙ্গা শিবিরমুখী হয়ে অবস্থান নেওয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।আর রোহিঙ্গা এলাকায় এসব বিদেশীদের মধ্যে পাকিস্থানী নাগরিকই বেশি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন জানান,সীমান্তে গত তিন দিন ধরেই একের পর এক দেশি-বিদেশি সন্দেহভাজনদের নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। বুধবারও যে দুইজন ফরাসি নাগরিক পর্যটকের ভিসা নিয়ে সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থান করছিলেন তাদের নিয়েও প্রশাসন পড়েছে বিপাকে। তবু রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনভাবেই কাউকে সীমান্ত এলাকায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন জানান,বিদেশিরা সরকারের যথাযথ অনুমতি ব্যতিরেকে সীমান্ত এলাকায় অবস্থান ও বসবাস করতে পারেননা। তাছাড়া রাতের বেলায় রোহিঙ্গা শিবিরে সন্দেহজনক ঘুরাফিরাও বিপদজনক।
Posted ৪:৩৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ নভেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta