কক্সবাংলা রিপোর্ট(৮ ডিসেম্বর) :: ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে নিজ মাতৃভূমি থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে বসবাস করছে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। যাদের মধ্যে অনেকেই মানবপাচার, মাদক চোরাচালান,ডাকাতি,খুন,অপহরণ সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। খুন থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করছে না। গত দুই বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন হয়েছে ৪১ জন এবং মামলা হয়েছে তিন শতাধিক।সর্বশেষ গত শনিবার রাতে টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে খুন হয় এক রোহিঙ্গা ডাকাত।
আর এসব খুনসহ নানা অপরাধ কমাতে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ কাজের প্রথম পর্যায়ে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু হয়ে গেছে। এর ফলে মানবপাচার,মাদক চোরাচালান, অপরাধ ও সন্ত্রাস ঝুঁকি কমার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ার প্রবণতাও কমবে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী।
আর এ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কার্যক্রমকে স্থানীয় সুশীল সমাজ সাধুবাদ জানিয়ে বলছে, বর্তমানে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও পাহাড়ি এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এজন্য ক্যাম্প এলাকায় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কাঁটাতারের বেড়া বা সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা জরুরি।
উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী জানান,রোহিঙ্গা শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য হুমকি। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ১২-১৭ বছরের শিশু রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। আমরা দেখতে পেয়েছি অনেক রোহিঙ্গা সেখান থেকে বেরিয়ে এদিক-সেদিক যাচ্ছে। এরা সুযোগ পেলে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনও তাদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য আমরা সেখানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কেউ যেন ক্যাম্প থেকে বের হতে না পারে, আবার কেউ যেন ক্যাম্পে ঢুকতে না পারে সে জন্য কাটা তারের বেড়া নির্মাণ অতি জরুরী।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পগুলোতে বসবাসের পাশাপাশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্য এবং আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে হত্যা করেছে। একইসঙ্গে তারা ইয়াবার বাহক হিসেবেও কাজ করছে। এছাড়া মিয়ানমার সরকার অভিযোগ করেছে, সে দেশের কিছু সন্ত্রাসী পালিয়ে এসে এসব ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে। এসব বিষয় রোধ করতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আর রোহিঙ্গা ক্যাম্প কাঁটাতারের আওতায় আসলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণও অনেকটা সহজ হবে।
প্রসঙ্গত গত ২৪ নভেম্বর রামু সেনানিবাসে ৬টি ই্উনিটকে কালার প্রদান অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ জানান, কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে এবং তা যথাসময়ে শেষও হবে।
জানা যায়,সেনাবাহিনী ৭টি ক্যাম্প এলাকায় অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিয়ে আসছে। বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ক্যাম্প এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিদিন ২১টি যৌথ টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে।
ক্যাম্পে কাঁটাতার স্থাপনের কাজ শুরু
Posted by Kamrul Islam Minto on Saturday, December 7, 2019
Posted ৬:৪৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta