কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৩ জানুয়ারি) :: ৫০ বছর মেয়াদে কক্সবাজারে পর্যটন করপোরেশনর মোটেল শৈবালের মূল মোটেলসহ ১৩৫ একর জমি লিজ বাতিলের দাবিতে ১ ফেব্রুয়ারি অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলন ও কক্সবাজার নাগরিক সমাজসহ স্থানীয় ২২টি সংগঠন।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলন এ তথ্য নিশ্চিত করে। মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল কক্সবাজারে এক মত বিনিময় সভায় গিয়ে সভায় উপস্থিত কক্সবাজারের শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের তোপের মুখে পড়েন।
এসময় তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মালিকানাধীন কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী পর্যটন মোটেল শৈবাল ও তৎসংলগ্ন জমি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে মূল্যবান এই জমি কোন গ্রুপ বা কোন ব্যক্তিকে কোনভাবেই লিজ দেওয়া যাবে না মন্ত্রীকে সাফ জানিয়ে দেন।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে শৈবাল হোটেল ইস্যুতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, তিনি আরো বলেন, ‘শৈবাল রক্ষা এখন কক্সবাজারবাসীর প্রাণের দাবি। শৈবাল হোটেল কক্সবাজারের সাধারণ মানুষের সম্পদ। শৈবালের মনোরম পরিবেশ, স্বচ্ছ জলের দিঘী, ডাহুকের সুমধুর ডাক আমরা সাধারণ কক্সবাজারবাসী আর কোথাও পাবো না। এই শৈবাল রক্ষায় প্রয়োজন হলে জীবন দেবো। তবুও আমরা শৈবালকে ওরিয়ন গ্রুপের হাতে তুলে দিতে দেবো না আমাদের অনুরোধ থাকবে ক্রমান্বয়ে বর্তমান অবকাঠামো ও পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখে শৈবালকে আধুনিকায়ন ও উন্নত করা হোক। শৈবালের চারিদিক উন্মুক্ত ঘোষানা করা হউক।’
তিনি বলেন, তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে অনেক ভালোবাসেন। এই জন্য তিনি কক্সবাজারের অনেক উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য, দেশের জন্য। শৈবালের জমি কক্সবাজারে বাণিজ্যমেলা, ইজতেমা ও গাড়ি পার্কিসহ জনউন্নয়নমুলক আরো অনেক উপকারে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের ক্ষতি করে সেখানে বড় হোটেল হতে যায় না। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন।’
এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন, ‘কক্সবাজার শহর ছোট্ট একটি শহর। অথচ এই ছোট্ট শহরে সাড়ে চার’শ হোটেল করা হয়েছে। হোটেলে-মোটেলে ভরে গেছে কক্সবাজার শহর। এই শহর এখন ইট-কংক্রিটের শহরে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজারের সব কিছু এখন এই শহরকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এই কারণে যানজটে চলাফেরাই করা যাচ্ছে না। তাই আমরা আর কোনো বড় হোটেল এই শহরে চাই না। আর কোনো বড় হোটেল শহরে হতে দেয়া যাবে না।এর কারনে আমাদের স্বাভাবিক চলাফেরা দায় হয়ে পড়েছে। যানজটে আটকা পড়েছে শহরবাসী। কোথাও একটু স্বস্তির নি:শ্বাস নেই। এর মাঝে একটু স্বস্তির জায়গা হলো শৈবাল হোটেল ও তার উন্মুক্ত মুনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এমন পরিস্থিতিতে শৈবাল ধ্বংস করে স্বস্তির এই পরিবেশ নষ্ট করে ওই জমি ওরিয়ন গ্রুপকে দেয়া যায় না। তারা ব্যবসা বা উন্নয়ন- যাই করুক; তা শহরের বাইরে গিয়ে করুক। এতে তাদের ব্যবসায় আরো লাভ হবে। সেই সাথে শহরটাও আরো সম্প্রসারিত হবে।’
পরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহাজাহান কামাল বলেন, কক্সবাজারের আলোচিত শৈবাল হোটেল ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ইস্যু নিয়ে কক্সবাজারবাসীর প্রতিক্রিয়া জানার জন্যই শুধু আমি কক্সবাজার এসেছি। আপনাদের প্রতিক্রিয়া আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করবো।এসময় মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার উন্নয়নবান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ধ্যান-জ্ঞান জুড়েই দেশের উন্নয়ন। আর এই উন্নয়ন হলো জনগণের জন্য। তাই প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি মাথায় রেখে শৈবালের বিষয়ে ওনার সিদ্ধান্ত দেবেন। এই জন্য আমি কক্সবাজারবাসীর প্রতিক্রিয়া ওঁনার কাছে যথাযথ তুলে ধরবো।
মন্ত্রী শাহাজাহান কামাল আরো বলেন, ‘কক্সবাজার হচ্ছে বাংলাদেশের আলো। তাই কক্সবাজারকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনেক স্বপ্ন। আপনারা দেখছেন উন্নয়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সেই স্বপ্নের প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন। আমি আশা রাখবো, প্রধানমন্ত্রীর এই উন্নয়নে কক্সবাজারবাসী সহযোগিতা করবেন।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এস.এম গোলাম ফারুক, পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান কবির, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. নাঈম হাসান,ওরিয়ন গ্রুপের পরিচালক লে. জেনারেল শাব্বির আহমদ, জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান সহ কক্সাজারের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত কক্সবাজারের শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা বিবাদমান শৈবাল ইস্যু নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।সবাই তীব্র বিরোধিতা করে কক্সবাজারের এই অমূল্য সম্পদকে বিতর্কিত ওরিয়ন গ্রুপের হাতে তুলে না দিতে আহ্বান জানান। আলোচনার সভার পরে মন্ত্রীসহ প্রতিনিধিদল শৈবাল হোটেলসহ পুরো এলাকা পরিদর্শন করেন।
Posted ৬:৫৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta