শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারের ১৬টি স্থায়ী-অস্থায়ী ক্যাম্পে এইচআইভি আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়ছে : ঝুঁকিতে শিশুরাও

সোমবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৭
586 ভিউ
কক্সবাজারের ১৬টি স্থায়ী-অস্থায়ী ক্যাম্পে এইচআইভি আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়ছে : ঝুঁকিতে শিশুরাও

কক্সবাংলা ডটকম(১২ নভেম্বর) :: কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১৬টি স্থায়ী-অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন পর্যন্ত ৫৫ জন এইচআইভি-এইডস আক্রান্ত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু সনাক্ত করা হয়েছে। এইচআইভি-এইডস আক্রান্তদের মধ্যে মিয়ানমারে থাকা অবস্থায় ৫১ জন এবং বাংলাদেশে আসার পরে নতুন ৪ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর মরিয়ম নামের এইডস আক্রান্ত এক রোহিঙ্গা তরুণী কক্সবাজার হাসপাতালে মারাও গেছে।

চ্যানেল আই অনলাইনকে ফোনে এসব তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম।  এইচআইভি প্রতিরোধক সচেতনতার অভাব ও জন্ম-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের অভ্যাসের অভাবে এইচআইভি-এইডসসহ নানা যৌন সংক্রামক ব্যাধি বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। শিশুরাও আছে সংক্রমণ ঝুঁকিতে।

সিভিল সার্জন আরও আশঙ্কা করেছেন, ম্যালেরিয়াপ্রবণ মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা ম্যালেরিয়া রোগটি বহন করে দেশে এনেছে, যা টেকনাফ ও বান্দরবান হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে যেতে পারে।

সব মিলিয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি। এইচআইভি-এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি হেপাটাইটিস, ম্যালেরিয়া ডায়রিয়া, ভাইরাস জ্বর ও নানা চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন পাড় করেছে নতুন করে আসা প্রায় নয় লাখ রোহিঙ্গা। সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে নারী ও শিশুরা। শিশুদের বেশির ভাগই ক্রনিক চুলকানি, স্ক্যাবিসসহ নানা চর্মরোগে আক্রান্ত।

উখিয়া ও টেকনাফের কুতুপালং, বালুখালি, পালংখালি ও শফিউল্লাহ কাঁটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

মেডিসিন সান্স ফ্রন্টিয়ার্স, আইওএম, ব্র্যাক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ সরকারি বিভিন্ন অস্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্র বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে। রোগীর চাপ আর রোগের ভয়াবহতা বিচারে সেখানে স্থায়ী হাসপাতাল করার পরিকল্পনা করছে তারা।

কুতুপালং ক্যাম্পের কিছু ঘরের পাশে তাবু টানানো ব্র্যাকের এক অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একজন স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১৫০ জনের বেশি রোগী এখানে সেবা নিতে আসেন। যার বেশির ভাগই নারী ও শিশু। তবে ইদানিং শিশুদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। শিশুরা ডায়রিয়া, জ্বর আর চর্মরোগে আক্রান্ত। গর্ভবতী নারীসহ সাধারণ রোগে আক্রান্ত নারীরাও আসছেন।

জটিল কোনো রোগীর সন্ধান পেলে ও সনাক্ত করা গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ক্যাম্পের বড় কেন্দ্রে পাঠানো হয় বলে জানান তিনি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মী নুরুল হোসেন জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে কাজ শুরু করে শেষ পর্যন্ত ৪০০ থেকে ৪৫০ নারী-পুরুষ সেবা নিতে আসে। ইদানিং পুরুষ রোগীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গর্ভবতী নারী ও শিশু রোগীদের সংখ্যা ইদানিং বেড়েছে।

বালুখালি ক্যাম্পে মেডিসিন সান্স ফ্রন্টিয়ার্সের (এমএসএফ) স্বাস্থ্য ক্যাম্পগুলো দেখলে রাজধানী বা জেলা শহরের কোনো সরকারি হাসপাতাল বলে মনে হতে পারে। অসংখ্য রোগী লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছে সেখানে। সেইসব কেন্দ্রের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা একমনে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

রোগীর চাপের কারণে কারো সঙ্গে কথা বলতেও নারাজ তারা। অনেক আগে থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এমএসএফের কেন্দ্রগুলো থাকার কারণে সেখানে রোগীরা বেশি ভিড় করে থাকে।

বিকেলের স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতালগুলোতে কমতে শুরু করে রোগীর সংখ্যা। তবে জরুরি স্বাস্থ্য সেবার কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ডাক্তাররা শিফট করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সন্ধ্যার একটু পরে কুতুপালং ক্যাম্পের একদম মাঝামাঝিতে অবস্থিত  আইওএম পরিচালিত ৫ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেলো, ৮-১০ জন রোগী ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছে।

দেখা মিললো ৮ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু নুরী আক্তারের, সে তার ৪ মাস বয়সী বোনকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে। জ্বরে আক্রান্ত নুরীর বোন।

৮ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু নুরী আক্তার ও তার বোন
৮ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু নুরী আক্তার ও তার বোন

আইওএম হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার নাহিদ মিজান জানান, দুই শিফটে রাত ১১টা পর্যন্ত সেবা প্রদান চলছে। ডায়রিয়া ও চর্মরোগের রোগী এখানে বেশি আসছে। গর্ভবতী নারীদের জন্য এখানে আলাদা ব্যবস্থা আছে।

ডাক্তার নাহিদ মিজান
ডাক্তার নাহিদ মিজান

কয়েকদিন হলো তাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আল্টাসনোগ্রাম, এক্সরে মেশিনসহ বেসিক ডায়াগনসিস ইকুইপমেন্ট এসেছে। এসবের ফলে রোগ নির্নয় করে দ্রুত সেবা দিতে পারছেন বলেও জানান ওই চিকিৎসক।

আগত রোগীদের রোগ ও তাদের ধরণ সর্ম্পকে ডা. মিজান বলেন, এখানে আগত ১০জন রোগীর মধ্যে ৬জনই শিশু। সাধারণ সব অসুখের সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগীদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে এখানে। এছাড়া আমরা যেসব রোগীদের এইচআইভি পজিটিভ বলে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করতে পেরেছি, তাদের কক্সবাজার জেলা সদরে রেফার করেছি। এধরণের রোগী পেলে আমরা প্রশাসনের সঙ্গেও তথ্য বিনিময় করছি।

ক্যাম্পের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হলেও গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ওষুধের দোকান। খাবার স্যালাইন ও বহুল প্রচলিত বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে চলছে সেসব দোকান। কুতুপালং ক্যাম্পে সামাজিক বনায়নের জায়গায় গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে ওষুধের দোকান করেছেন কুতুপালংয়ের স্থানীয় বাসিন্দা হাবিব।

বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করার পরেও কেনো তার দোকান, এর জবাবে হাবিব বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতালে ওষুধ নিতে অনেক সময় লাইনে দাড়াতে হয়। যারা লাইনে দাড়িয়ে ওষুধ নিতে পারে না, তারাই আমার এখান থেকে ওষুধ নিয়ে থাকেন।  

প্রায় সবগুলো ক্যাম্পেই প্রচুর পরিমাণ পাকা ও সেমি-পাকা টয়লেটের ব্যবস্থা করেছে বিভিন্ন আন্তজার্তিক ও দেশীয় উন্নয়ন সংস্থা। নীল রং ও কমলা রঙের এইসব টয়লেট খুব সহজেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে ক্যাম্পজুড়ে।

তবে অভ্যাসগত কারণে রোহিঙ্গারা ওইসব টয়লেট কম ব্যবহার করে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করছে বলে জানান ক্যাম্পে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা।

বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. সালাম বলেন, এতো সংখ্যক মানুষের পয়নিস্কাষণ ব্যবস্থা করা ও তা ম্যানেজ করা খুবই কঠিন। তাছাড়া টয়লেট ব্যবহারে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিনে অভ্যাস পরিবর্তন করা অনেক কঠিন কাজ। তাছাড়া অস্থায়ীভাবে স্থাপিত টয়লেটের ট্যাংকি ভরে গিয়েও তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়েছে, এসব কারণেই পানিবাহিত ডায়রিয়া ও নানা রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা বিষয়গুলো বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। জেলা প্রশাসন ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর প্রায় ২০০ স্বাস্থ্যকর্মী টয়লেট ব্যবহারে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে।

অস্থায়ী ভিত্তিতে এতো বিপুল সংখ্যক মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা খুবই কঠিন উল্লেখ করে সিভিল সার্জন ডা. সালাম মনে করেন, দ্রুত রোহিঙ্গাদের তাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেয়াটাই একমাত্র স্থায়ী সমাধান।

586 ভিউ

Posted ১:১৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com