কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৬ ডিসেম্বর) :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজারের ৪টি আসনেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীরা শুরু থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। দলীয় প্রতিক বরাদ্দের পর থেকেই তারা নির্ঘুম প্রচারণা চালিয়ে আসছেন সংসদীয় এলাকাজুড়ে। তবে এই প্রচার প্রচারণায় শুরু থেকেই ঘরবন্দী হয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির ধানের শীষ প্রতিকের মনোনীত প্রার্থীরা।
এমনকি নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার শেষ মুহূর্তে এসেও তারা সংসদীয় এলাকায় সরব হতে পারছেন না। সরকারি দলের মনোনীত প্রার্থীদের চাপ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির সাথে সাথে গ্রেফতার এড়িয়ে চলতে তাদেরকে সংসদীয় এলাকার বাইরে দিন কাটাতে হচ্ছে।
সূত্র বলছে, এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিয়ে শুরু থেকেই চলে নানা রকমের নাটকীয়তা। সর্বশেষ সকল নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে গত ১১ নভেম্বর দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের অংশগ্রহণের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের সাথে সাথে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনে ফিরে আসে। এই নির্বাচনকে ঘিরে কক্সবাজারের ৪টি আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় অর্ধ শতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
এসকল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে থেকে বাছাই করে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান জাফর আলম, কক্সবাজার-২(মহেশখালি-কুতুবদিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩(সদর-রামু) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল,কক্সবাজার-৪(উখিয়া-টেকনাফ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আকতার।
তাদের বিপরীতে বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে বিএনপি প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদ এর স্ত্রী অ্যাড. হাসিনা আহমেদ, কক্সবাজার-২(মহেশখালি-কুতুবদিয়া) আসনে বিএনপি প্রার্থী(ধানের শীষ)সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জামায়াত নেতা সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আজাদ, কক্সবাজার-৩(সদর-রামু) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজল,কক্সবাজার-৪(উখিয়া-টেকনাফ) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধূরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
আওয়ামীলীগ ও তাদের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতিক বরারদ্দের পর থেকেই প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। তবে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও তাদের নেতৃত্বে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থীরা শুরু থেকেই প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন। আর তাদের তুলনায় প্রায় অনেকটাই ঘরবন্দী হয়ে আছেন বিএনপি ও তাদের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থীরা। বিভিন্ন ধরনের হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে তাদের সাথে কোন নেতাকর্মীর দেখা মিলছে না।
এদিকে জেলা বিএনপি প্রায়ই সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করছে,নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার শেষ মুহূর্তে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে দফায় দফায় তল্লাশী চালানো হচ্ছে। ফলে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাদের বাড়িতে থাকতে পারছেন না। বিশেষ করে বিএনপির ধানের শীষ প্রতিকের মনোনীত প্রার্থীদের সাথে যাদেরকে প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করে বেশি বেশি করে হয়রানি করা হচ্ছে। একের পর এক মামলায় জড়ানো হচ্ছে তাদেরকে।
কক্সবাজার-১(চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে শান্ত ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ বলতে কিছুই নেই। প্রতিদিনই উত্তাপ বাড়ছে। নির্বাচনের আর মাত্র তিন দিন বাকি। অথচ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটাররা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর, ককটেল নিক্ষেপ ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘটনার জন্য নির্বাচনী প্রতিপক্ষকে দায়ী করছেন প্রধান দুই জোটের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। কোথাও কোথাও এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করা হচ্ছে।
সর্বশেষ গত ২৫ ডিসেম্বর পেকুয়ার উজানটিয়া ও মগনামা ইউনিয়নে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রাথী এডভোকেট হাসিনা আহমদের ধানের শীষ প্রতীকের সমথনে আয়োজিত গণমিছিলে হামলায় অন্তত ১০ জন নেতা-কমী আহত হন। এছাড়াও একজন বিএনপি নেতাসহ ৬ জনকে আটক করে বিজিবি ও পুলিশ। এছাড়াও হারবাং ইউনিয়নে বিএনপির মিছিলে হামলার ঘটনায় ৯ জন আহত হয়। পৃথক এসব ঘটনায় অন্তত ১৯ জন আহত হয়েছেন। আটক নেতারা হলেন ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক কায়ছার উদ্দিন, শ্রমিক দল নেতা ফোরকান ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন, মগনামা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফয়সাল চৌধুরী ও ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহিন।
পেকুয়ায় মহাজোট প্রার্থীর পাঁচটি নির্বাচনী অফিস ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মামলায় এজাহারনামীয়সহ মোট ৫২৫ জন বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়। এসব মামলায় ৩৭২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামী দেখানো হয়েছে ১৫৩জনকে।অথচ এই ঘটনার সাথে আসামীদের কোন সম্পৃক্ততাই ছিল না বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের।
হাসিনা আহমদ বলেন বলেন, বাধা দিয়ে, হামলা করে কিংবা মামলা দিয়ে ধানের শীষ বিজয় যাত্রা রুখে দেয়া যায় না। ধানের শীষ হলো মানুষের প্রাণের প্রতীক। এই প্রতীক তো মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। হামলা করে কী মানুষের অন্তর থেকে ধানের শীষের ভালোবাসা মুছে ফেলা যাবে না। একই সাথে চকরিয়া-পেকুয়ায় সুষ্টু নির্বাচনী পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনী ও রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রতি আহবান জানান।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের বিএনপি মনোনিত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী গত শুক্রবার জরুরী সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেছেন, উখিয়া ও টেকনাফে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও পরিকল্পিত হামলা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের সব জায়গায় নালিশ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং প্রশাসনের উর্ধ্বতন কেউ বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের প্রতিকার করছেন না। প্রতিকার না পেয়ে হামলা ও মামলার ভয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
অপরদিকে ধানের শীষের প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজল অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কক্সবাজার-৩ আসনের সদর ও রামুতে ধানের শীষ সমর্থক প্রায় আড়াই হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রুজু করা হয়েছে এবং এরমধ্যে দেড়শতাধিক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে রামু থানায় ১৮টি এবং কক্সবাজার সদর থানায় ৬টি মিথ্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। এতে ২৩ দলীয় ঐক্য জোটের নেতাকর্মীসহ ধানের শীষের প্রায় আড়াই হাজার কর্মী-সমর্থককে আসামী করা হয়েছে এবং এসব মামলায় এই পর্যন্ত দেড় শতাধিক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া সদর থানায় আরো ৪টি মিথ্যা মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলছে।’
এ ব্যাপারে মহাজোট নেতারা বলেন, আমরা পুলিশকে কোনোভাবে প্রভাবিত করছি না। তারা বলেন,মহাজোটের দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যালয় ও প্রচার মাইকে হামলা ও প্রচার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ভাংচুর করা হচ্ছে।
অপরদিকে, বিএনপি নেতাদের অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নিজেদের ওপর হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়ে পুলিশ দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার ও হয়রানি করছে।
Posted ৩:৩৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta