শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানোয় বাড়ছে অসন্তোষ : প্রতিবাদ সভার ডাক

মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮
303 ভিউ
কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানোয় বাড়ছে অসন্তোষ : প্রতিবাদ সভার ডাক

কক্সবাংলা রিপোর্ট(২২ জানুয়ারী) :: বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে না। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যকার স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী তা মঙ্গলবার শুরু হওয়ার কথা ছিল। ২৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার এই চুক্তির ২ মাস পূর্ণ হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানামারের মধ্যে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই চুক্তিতে ২ মাসের মধ্যেই তাদেরকে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে।

অথচ শুরু হলোনা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো কার্যক্রম। অবশ্য এই বিষয়ে মিয়নামার তাড়াহুড়া করলেও বাংলাদেশ ধীরে চল নীতিতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

সূত্রে জানা গেছে,মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য ট্রানজিট সেন্টার তৈরির বিশাল কাজ অসমাপ্ত এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন তালিকা অনুমোদন না করা পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছেনা।

সোমবার বাংলাদেশের কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম কক্সবাংলাকে বলেন, প্রয়োজনীয় আয়োজন অসম্পূর্ণ থাকায় তা শুরু করা যাচ্ছে না। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের পরিবার এবং গ্রাম ভিত্তিক তালিকা তৈরি করে তা মিয়ানমারের কাছে হন্তান্তর করা হবে। তারপর তা যাচাইবাাই করার পরই রোহিঙ্গাদের ফিজিক্যালি ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হরা হবে।

এদিকে দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও বাড়ছে অসন্তোষ। রাখইনে ফেরার বিষয়ে তারা দ্বিধাদন্দ্বে ভূগছে তারা। আদৌ ফেরত যেতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে মিয়ানমার থেকে বাড়িভিটা হাড়ানোর এই উদ্বাস্তুরা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, মিয়নমার চুক্তি অনুযায়ি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু তাদেরকে এখনই দেশে ফেরত পাঠানো যাচ্ছে না। আপতত আরো কিছু দিন সময় লাগবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, কেবল বিশ্বকে দেখানোর জন্যই চুক্তির ২ মাস পূর্ণ হওয়ার দিন নামমাত্র রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া শুরু করতে চায় মিয়ানমার। কেননা মুখে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বললেও কীভাবে তাদের পরিচয় যাচাই করেছে, তা স্পষ্ট করছে না দেশটি।

বাংলাদেশ চাইছে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেই প্রত্যাবাসনে যেতে; যাতে মাঝপথে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া থেমে না যায়। ফলে তাদের ফেরত পাঠাতে আরো এক থেকে দেড় সপ্তাহ লাগতে পারে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সূত্রমতে, বাংলাদেশ চায় প্রথম দিন থেকেই প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০০ জনের প্রত্যাবাসন শুরু করা এবং পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা বাড়ানো। একই সঙ্গে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা।

এর জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে স্বাক্ষরিত ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তি অনুযায়ী একেকটি পরিবারকে একক ইউনিট ধরে একটি ফরমের খসড়া প্রস্তুত করছে বাংলাদেশ। দু-এক দিনের মধ্যে খসড়াটি মিয়ানমারে পাঠানো হবে। মিয়ানমার এটি চূড়ান্ত করে ফেরত পাঠালে একক ইউনিট নির্ধারণের কাজ শুরু হবে। প্রক্রিয়া শেষ করে এই ফরম পূরণের কাজ শুরু করতেই আরো এক সপ্তাহের বেশি লাগবে।

এই বিষয়ে শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রত্যাবাসনের বিষয়ে যেসব প্রস্তুতির কথা তারা বলছেন সেটি বাংলাদেশের দিক থেকে নেয়া পদক্ষেপ। কিন্তু বিষয়টি এক পাক্ষিক নয়, বরং দ্বিপাক্ষিক। যারা প্রত্যাবাসিত হবেন তারা সেখানে গিয়ে কি অবস্থায় থাকবেন।

প্রত্যাবাসনের পর তারা কেমন থাকবেন, তাদের নিরাপত্তা কতদূর থাকবে সেটাও আমাদের দেখতে হবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এই কাজটা করবে। মিয়ানমারের দিক থেকেও তাদের প্রস্তুতির বিষয় আছে। উভয় দিক থেকে প্রস্তুতির বিষয়। তারা কিছু কাজ করেছে বলে জানিয়েছে। সেগুলোও দেখতে হবে আমাদের।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা যদি প্রত্যাবাসন কে একটি প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি তাহলে একে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা যে, কোন নীতির ভিত্তিতে প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হবে, দ্বিতীয় হলো কাঠামোগত প্রস্তুতি ও তৃতীয় হলো শারীরিক বা মাঠ পর্যায়ে প্রকৃত প্রত্যাবাসন শুরু করা।

কবে নাগাদ শুরু হবে জানতে এই কমিশনার বলেন, উভয় দিক পরিপূর্ণ প্রস্তুত হলেই প্রকৃত প্রত্যাবাসন শুরু হবে।

অন্যদিকে প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এ বিষয়টি নিয়ে রোহিঙ্গারা দ্বিধাদ্বন্ধে ভূগছে। স্বদেশে ফেরা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। পক্ষান্তরে রোহিঙ্গা ইস্যূকে পুঁজি করে ফায়দা লোটা বিদেশী এনজিও গুলোর কর্তাব্যক্তিদের ভূমিকা বেশ রহস্যজনক হয়ে উঠছে।

প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বিঘœ করতে পর্দার আড়ালে কলকাটি নাড়ছে এমন অভিযোগও উঠেছে দেশি-বিদেশী এনজিও গুলোর বিরুদ্ধে। প্রত্যাবাসনের পক্ষে বিপক্ষে কথা বলায় একের পর এক রোহিঙ্গা খুনের ঘটনাসহ নানা ধরণের জটিল সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় প্রত্যাবাসন সমস্যা হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রশাসন।

এনিয়ে মঙ্গলবার প্রত্যাবাসনের দাবিতে উখিয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদ এক প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছেন।

প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গারা ইচ্ছুক হলেও বিভ্রান্তিমূলক ধারণা মাথা ডুকিয়ে দিচ্ছে তথাকথিত এনজিও।নিরক্ষর রোহিঙ্গা গোষ্টির মনোভাব পাল্টে যাচ্ছে এই ধরণের উল্টাপাল্টা কথাবার্তায়।এখন ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে নানা দাবী-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামতে শুরু করেছে।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর রোহিঙ্গারা ৫ দফা দাবী সম্বলিত ব্যানার, প্লে-কার্ড, পেষ্টোন নিয়ে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বিদেশী এনজিও অফিসের সামনে শ্লোগানসহ প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। এখন রোহিঙ্গারা ব্যানারে এসব দাবী-দাওয়ার কথা দুই দেশের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরে স্পষ্ট থাকলেও নতুন করে এই দাবীর কোন ভিত্তি আছে কিনা প্রশ্ন উঠেছে।

এই বিষয়ে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ঘিরে এনজিও সংস্থা গুলোর অপতৎপরতা ও উসকানিমূলক ইন্ধনের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের দেখভাল ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে তাদের অবস্থান শক্ত করতে নানা কর্মকৌশল করছে।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন এনজিওতে চাকুরীরত রোহিঙ্গাদের দিয়ে প্রত্যাবাসনের বিপক্ষে কথা বলতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে কথা বলায় একাধিক রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনাও ঘটানো হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নিকারুজ্জামান চৌধুরী রবিন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কোন ধরণের নির্দেশনা এখনো হাতে আসেনি। তবে কোন কোন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে তার কাজ চলছে। গত শুক্রবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন বিরোধী ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদের খবর পেলে উপজেলা প্রশাসন দ্রুত ক্যাম্প এলাকায় গিয়ে তদন্ত করে দেখেন এবং প্রশাসন যাওয়ার আগেই তারা সরে যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে। যে সব এনজিও রোহিঙ্গাদের ভূল ধারণা দিয়ে উসকে দিচ্ছে এসব গুলোকে তালিকা করে ব্যবস্থা নেওযার জন্য সরকারের কাছে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।

অপরদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দাবিতে মঙ্গলবার(২৩ জানুয়ারী) রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটি এক প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উখিয়া রোহিঙ্গা সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) আবুল কালাম মো: লুৎফুর রহমান বলেন,রোহিঙ্গাদের পরিবার,গ্রামের তালিকা ও ট্রানজিট কেন্দ্র না করা পর্যন্ত প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছেনা। তবে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে সব ধরনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।শীঘ্রই প্রত্যাবাসন চুক্তিমতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। এতে কোন মহল বিশেষের অপতৎপরতা কাজে আসবে না। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

303 ভিউ

Posted ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com