কক্সবাংলা রিপোর্ট(৫ ফেব্রুয়ারী) :: কক্সবাজারে উচ্ছেদ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। মঙ্গলবার কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ ও শিশু রাস্তায় নেমে আসে ঢালাওভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। কক্সবাজার শহরতলীর জেল গেট থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক কার্যালয় পর্যন্ত এসব লোকজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
কক্সবাজারে সরকারি জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া জনতা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সড়ক দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এ ছাড়া আন্দোলন জোরদার করে তুলতেও দৃপ্ত শপথ নিয়েছে উচ্ছেদ হওয়া এসব মানুষ। কক্সবাজারে একদিকে উচ্ছেদ অভিযান চলছে অন্যদিকে চলছে আন্দোলনও।
গৃহহীন এসব বিক্ষোভকারীদের সমাবেশে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেছেন, পুনর্বাসন ব্যতীত কোনো বসতি উচ্ছেদ হবে না। প্রধানমন্ত্রীর এ কথা বাংলাদেশের সকলকে মানতে হবে। গতকাল কক্সবাজার জেল গেইট এবং এর আগে ফাতের ঘোনায় যে উচ্ছেদ চালানো হয়েছে, তাতে দেখা গেছে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বাড়ি যেমন রয়েছে, তেমনি বেশির ভাগই সমতল এবং খতিয়ানভুক্ত জমির বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ উচ্ছেদ অভিযানে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তীব্র শীতে খোলা আকাশের নিচে সাধারণ মানুষ মানবেতর জীপন কাটাচ্ছে। অনেক পরিবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না। জনস্বার্থে বাস্তব অবস্থা চিন্তা করে উচ্ছেদ অভিযান চালানো দরকার।
তিনি বলেছেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং এবং উচ্ছেদ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবো। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আজকে থেকে কোন উচ্ছেদ করা যাবে না। যদি উচ্ছেদ করেন তাহলে যার দায়িত্বে সে করবেন। আমরা কোনো দায়িত্ব নেব না।
এমপি কমল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই গৃহহীনকে ঘর নির্মাণ করে দওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছেন। সেখানে উল্টো দরিদ্র পরিবারের মানুষকে গৃহহারা করা হবে এটা চিন্তাও করা যায় না। তিনি লোকজনকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি নিয়ে কক্সবাজারের এমন ঘটনার কথা অবহিত করব।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের লাখ লাখ মানুষ বসতি করে বাস করতে পারে। অথচ বাংলাদেশের নাগরিক বাস করতে পারছে না। অভিযানের নামে শুধুমাত্র গরিব মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙ্গচুর করা হচ্ছে। যাদের মাথা গোছাবার জায়গা নেই তাদের উপর চলছে জুলুম নির্যাতন। অথচ প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সরকারি জায়গা দখল করে বাস করছে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে না।
বিক্ষুব্ধ লোকজনের অভিযোগ হচ্ছে, সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারের নামে প্রশাসন কোন বাচবিচার ছাড়াই লোকজনের বাড়ীঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। গত কয়েক দিনের মধ্যে শহরের লাইট হাউজ, ফাতেরঘোনা ও জেল গেইটসহ আরো কয়েকটি এলাকায় কয়েক শ বাড়িঘর ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে শত শত লোক মাঘের এমন শীতের সময় গৃহহারা হয়ে পড়েছে।
প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের শিকার হওয়া লোকজনের আরো অভিযোগ, ঢালাওভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে অনেক জোত জমির মালিকদের ঘরবাড়িও গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কক্সবাজার জেলা কারাগারের সামনে গত সোমবার প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের সময় এরকম নিষ্কন্টক জোত জমির মালিকদের ঘরদুয়ারও ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে লোকজন জানান। এমনকি জেল গেইট এলাকায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনও ক্ষতির শিকার হয়েছে। একারনে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শিক্ষানবীশ শিশু ভিক্ষুরাও নেমেছে রাস্তায়।
তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “সরকারি জমিতে রোহিঙ্গাদের বসতি, স্থানীয়দের উচ্ছেদ” এ কেমন বিচার? এ বিষয়ে তারা দ্রুত প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এতে বক্তব্য রাখেন বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রজ্ঞাপাল, মৌলানা আজিজুল হক, রাজিব দাশ, ফাতেমা আক্তার, মুনিরা বেগম, তপন পাল, সুমন বড়ুয়া, জসিম উদ্দিন, আমান উল্লাহ প্রমুখ।