বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারে বাড়ছে পরিবেশ বিপর্যয় : কমছে জলাভূমি কমছে ভূ-গর্ভের মিঠা পানি

মঙ্গলবার, ০৫ মে ২০২০
484 ভিউ
কক্সবাজারে বাড়ছে পরিবেশ বিপর্যয় : কমছে জলাভূমি কমছে ভূ-গর্ভের মিঠা পানি

আহমদ গিয়াস(৫ মে) :: বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম এর প্রাণ হিসাবে পরিচিত জলাভূমি আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে কক্সবাজার শহরে। ৩ দশক আগেও যেখানে ২৭% এর বেশি এলাকাজুড়ে ছিল জলাভূমি। এখন নগরায়ণের ফলে সেখানে জলাভূমির পরিমাণ ঠেকেছে ৫% এর নিচে। ফলে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে ভূ-গর্ভস্থ মিঠাপানির জলাধারে। এতে শুষ্ক মৌসুমে শহরের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ব্যাপকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। আর এসব পানিতে বেড়ে যাচ্ছে সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লবণাক্ততা ও ইউরেনিয়াম-থোরিয়ামের মতো ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি।

কক্সবাজার শহর দক্ষিণে মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর বড়ছড়া খাল পর্যন্ত এবং উত্তরে বাঁকখালী নদীর নাজিরারটেক মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১০ কি.মি. সৈকত এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এরমধ্যে দরিয়ানগর থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৭ কি.মি. সৈকত এলাকাকে পাহাড়ের পাদদেশীয় ভূমি বলা যায়।

আর এ অঞ্চলে পাহাড় থেকে নেমে আসা অন্তত ১১টি স্বচ্ছ পানির ছড়া রয়েছে। যারমধ্যে ৮টি ছড়া বন্ধ কিংবা গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। ছড়াগুলো হল, (দক্ষিণ দিকে উত্তরে) শুকনাছড়ি, ধইল্যাছড়ি, গইয়মতলীর ছড়া, ঝরঝরি কুয়া, বটতইল্যার ছড়া, পরবাইস্যার ছড়া, মওভাইনার ছড়া ও মোহনার ছড়া। যেগুলো সরাসরি সাগরে গিয়ে মিলিত হত এবং মোহনায় জলাভূমি তৈরি করত।

এগুলো ছাড়াও কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮৪ কি.মি. দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণকালে আরো অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বা গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। ফলে হারিয়ে গেছে জলাভূমিও। পরিবেশ সমীক্ষা না করেই মনগড়া এমন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর কারণে বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার ইকোসিস্টেমস ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মনে করেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

রাজধানীর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর রাগিবউদ্দিন আহমদ বলেন, উন্নত বিশ্বে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আগে পরিবেশ সমীক্ষা করা হয়। সমীক্ষায় যদি পরিবেশগত ক্ষতির তুলনায় উন্নয়ন প্রকল্পটি লাভজনক হয়, তবেই সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়াই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের কারণে লাভের চেয়ে ক্ষতির হারই বেশি হচ্ছে।

তিনি জানান, ১৯৯২ সালে ভিয়েতনামের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে থাইল্যান্ডে বিদ্যুৎ আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিবেশ সমীক্ষায় যখন দেখা যায় যে, থাইল্যান্ডের বনাঞ্চলের উপর দিয়ে ১৩২ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক লাইন আনতে হবে এবং এর বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের কারণে বনাঞ্চলে মৌমাছির প্রজনন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে; তখন থাইল্যান্ড সরকার প্রকল্পটি থেকে সরে আসে। আমাদের দেশেও যদি এই ধরনের সমীক্ষার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হত, তাহলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হত না।

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বাস্তুতন্ত্রে জলাভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশবিদ্যায় জলাভূমিকে কার্বন সিঙ্ক বা কার্বন শোষক, দূষণ ফিল্টার, বন্যা নিয়ন্ত্রক, বন্যজীবন নার্সারি, উর্বর খামার জমি এবং ঝড় ও বাতাস প্রতিরোধক হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। জলাভূমি ভূ-গর্ভস্থ পানীয় জলের মজুদ ঠিক রাখে। ভূ-গর্ভস্থ পানির অতি ব্যবহারের কারণে জলাধারে ইউরেনিয়াম-থোরিয়ামের মত তেজস্ক্রিয়তা ও ক্ষতিকর পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে। আর এই দূষণ ঠেকিয়ে দেয় জলাভূমি। বিনোদন ও পর্যটনের জন্যও জলাভূমির গুরুত্ব অতুলনীয়। কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে কক্সবাজার শহর ও শহরতলীতে জলাভূমির সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে।

এক জরিপে দেখা গেছে, ১৯৮৯ সালে কক্সবাজার শহরের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বা ২৯.৫৮% ভাগ এলাকা ছিল লতা-গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ আচ্ছাদিত। আর দ্বিতীয় স্থানে ছিল জলাশয়, যা শহরের ২৭.২৯% ভাগ এলাকা। ওই সময় শহরের মাত্র ১২.৬৯% ভাগ এলাকায় ঘরবাড়ি ছিল, আর ৯.৯% ভাগ এলাকায় ছিল বালিয়াড়ি। এছাড়া শহরে বন ছিল ৬.৪৪% ভাগ এলাকায় এবং কৃষি জমি ছিল ১২.৮৯% ভাগ। কিন্তু মাত্র ২১ বছরের ব্যবধানে ২০১০ সালের জরিপে জনবসতি বেড়ে দাঁড়ায় ৩১.৩৯% ভাগে, লতা-গুল্ম-ঝোঁপঝাড় কমে দাঁড়ায় ২৩.৬০% ভাগ, জলাশয় ১৭.৩১% ভাগ, কৃষি জমি ৯.৯২% ভাগ, বালিয়াড়ি ২.২৭% ভাগ, বন ৫% ভাগ এবং আদ্র জমি ৫.৩০% ভাগ। কিন্তু ২০২০ সালে এসে ভূমির ব্যবহার আরো ব্যাপক মাত্রায় পরিবর্তিত হয়েছে বলে মনে করেন সমন্বিত উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও জরিপকারী গবেষক দলের অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ আশরাফুল হক।

তিনি মনে করেন, গত ১০ বছরে শহরে জনবসতির হার আরো অনেক বেড়েছে, কমে গেছে জলাশয়, বন, কৃষিজমি, লতাগুল্ম ও বালিয়াড়ি। তবে এনিয়ে নতুন কোনো জরিপ হয়নি।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফ মনে করেন, বর্তমানে শহরে ৫% জলাশয়ও আছে কিনা সন্দেহ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকী বলেন, গত ৩১ বছরে কক্সবাজারে ভূমির ব্যবহারে ব্যাপক মাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানীয় জলের জলাধারের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এ কারণে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর ব্যাপকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে, ভূ-গর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ত ও ইউরেনিয়াম-থোরিয়ামের মতো ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি সহনীয় মাত্রায় চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে। তিনি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কক্সবাজার শহরে মিঠাপানির জলাশয় গড়ে তোলার এবং ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন।

 

484 ভিউ

Posted ১২:২৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ মে ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com