কক্সবাংলা রিপোর্ট(১ ফেব্রুয়ারি) :: দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের কল্যাণে অন্যতম পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বিশ্বমানচিত্রে আলাদা অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে কক্সবাজার। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা দেশের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলায় তিনটি ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। লক্ষ্য বাস্তবায়নে বেজা এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
ট্যুরিজম পার্ক তিনটি স্থাপন হলে পাঁচ বছরে প্রায় দুই লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে। পাশাপাশি এ খাত থেকে বছরে অতিরিক্ত প্রায় ২০০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ তৈরি হবে।
পর্যটন খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ সি রিসোর্টে আয়োজিত ‘আনলকিং ট্যুরিজম অপরচুনিটিজ: এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম পার্কস ইন কক্সবাজার’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বক্তারা পর্যটন খাতে ট্যাক্স হলিডে নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি হোটেল ব্যবসায়ীদের কর প্রণোদনা দেয়ার জন্যও সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) পবন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন বেজার নির্বাহী সদস্য ড. এম এমদাদুল হক, মো. হারুনুর রশিদ ও মোহাম্মদ আইয়ুব।
সেমিনারে জানানো হয়, বেজা এরই মধ্যে নাফ ট্যুরিজম পার্ক স্থাপন প্রকল্পে উন্নয়নকাজ শুরু করেছে। সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনে সুপার ডাইক নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেডকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক স্থাপন প্রকল্পে বিভিন্ন উন্নয়নকাজের জন্য সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন শুরু করা হয়েছে এবং এ দ্বীপে বসবাসকারীদের পুনর্বাসনে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, পর্যটন খাতে ট্যাক্স হলিডে নিশ্চিত হলে বা কর কিছুটা কমানো হলে এ ব্যবসার প্রসার ঘটবে ও সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়বে। তিনি আশা করেন, বেজা যেসব ট্যুরিজম পার্ক স্থাপন করছে, সেগুলো বিদেশী পর্যটক আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, নাফ ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ও সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পর্যটন খাতের কেন্দ্রবিন্দু হবে। এর মাধ্যমে কক্সবাজার অর্থাৎ দেশের পর্যটন শিল্পের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। তিনি সরকারকে হোটেল ব্যবসায়ীদের জন্য কর প্রণোদনা দেয়ার অনুরোধ করেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন, পরিকল্পিত ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে সরকারের অন্যান্য বিভাগের মতো গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা ও পরিকল্পিত ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনে নাফ ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রেলপথ নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন হলে এসব ট্যুরিজম পার্কে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তিনি ভিলেজ ট্যুরিজম অক্ষুণ্ন রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সেমিনারের সভাপতি পবন চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক মানের ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনে যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা দূরীকরণে যা কিছু প্রয়োজন, বেজা তা করতে চায়। তিনি আশা করেন নাফ, সাবরাং ও সোনাদিয়ার চলমান উন্নয়নকাজ দ্রুত শেষ হবে এবং পর্যায়ক্রমে পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, তিনটি ট্যুরিজম পার্ক ছাড়াও কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করবে বেজা। এর মধ্যে মহেশখালী-৩ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিশ্ববিখ্যাত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসকে গ্যাস ও টিকে গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সুপার পেট্রোকেমিক্যাল প্রাইভেট লিমিটেড প্রায় ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগামী মাসের ১৫ তারিখে বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগ প্রস্তাব আহ্বান করা হবে।
Posted ১:৩৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta