কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৯ আগস্ট) :: কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অনুদানে প্রথম প্রকল্প হাতে নিচ্ছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
‘কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কার্যক্রমে জরুরি সহায়তা’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির যৌথ অর্থায়নে।
এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৬৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং এডিবির অনুদান থেকে ৩৬০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
বুধবার প্রকল্পটি অনুমোদনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সুবীর কিশোর চৌধুরী।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ৩২টি ক্যাম্পে বর্তমানে বসবাসরত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
এছাড়া প্রকল্পের আওতায় এসব ক্যাম্পে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ সিস্টেম চালু করা, মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক স্যানিটেশন সিস্টেম উন্নয়ন, কমিউনিটিতে সামাজিক অবক্ষয় অবস্থার উন্নয়ন এবং পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনে নারীর সম-অধিকার বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানান, পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত সভায় বেশ কিছু সুপারিশ দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিপালন করা হলে পরবর্তী সময়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
এডিবির অনুদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম বুধবার বলেন, প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত নেই।
তবে সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ইআরডি এবং এডিবির মধ্যে ১০ কোটি মার্কিন ডলার ইমার্জেন্সি অ্যাসিসটেন্স প্রজেক্ট নামের একটি অনুদান চুক্তি সই হয়েছে। চলতি মাসে সই হওয়া চুক্তির আওতায় এডিবি প্রায় ৮০০ কোটি টাকা অনুদান দেবে। এ প্রকল্পটি সেই অনুদান চুক্তির অংশ।
চুক্তি শেষে কাজী শফিকুল আযম বলেছিলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য এ সহায়তা খুবই প্রয়োজনীয়। এডিবির সঙ্গে আলোচনা শুরুর মাত্র দুই মাসের মাথায় অনুদান চুক্তি করা সম্ভব হয়েছে। এজন্য এডিবির প্রেসিডেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আগে থেকেই প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ছিল। তার ওপর গত বছরের আগস্টে আরও প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে যোগ দেয়। এসব শরণার্থী বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে। কিন্তু ওইসব এলাকায় পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। এজন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- পরামর্শক নিয়োগ, যানবাহন ক্রয়, জরুরি পানি বহনে সাতটি ওয়াটার ক্যারিয়ার ক্রয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যন্ত্রপাতি ও গাড়ি কেনা হবে ৩০টি। চারটি হাইড্রোলিক মিনি রিগ ক্রয়, বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র কেনা এবং জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
বুধবার অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় যেসব সুপারিশ দেয়া হয় সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে- উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা নিশ্চিতের বিষয়টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সংযোজন, প্রকল্পের কার্যক্রমের বিস্তারিত ড্রইং ডিজাইন জানতে চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া সভায় কার্যক্রম নির্ধারণের ভিত্তি সম্পর্কেও আলোচনা হয়। অন্য কোনো প্রকল্পের সঙ্গে দ্বৈততা যাতে না হয়, তার নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যয়ের মধ্যে সরবরাহ ও সেবা খাতে সরকারি তহবিলের ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকাসহ এ খাতে প্রস্তাবিত ৬ কোটি টাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
পরামর্শক সেবা খাতে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং সরকারি তহবিলের অর্থে প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২০০ কোটি টাকার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। এ সময় বলা হয়, সরকারি খাস জমি ব্যবহার করা যায় কি না, তা বিবেচনা করা যেতে পারে।
সূত্র জানায়, ৯ আগস্ট অনুদান চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেছিলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং ইআরডির সচিব সম্প্রতি এডিবির প্রেসিডেন্টের কাছে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা চেয়েছিলেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এডিবি দ্রুততম সময়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ সময় জানানো হয়, এডিবির দেয়া অনুদানের অর্থে একটি আমব্রেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। যেখানে রাস্তার উন্নয়ন, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সংযোগ ও রান্নার জন্য জ্বালানি সরবরাহ এবং পরিবেশ উন্নয়ন ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
Posted ২:১৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta