বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প তৈরিতে হারিয়ে গেছে হাজার হাজার প্রাণীকূল ও বৃক্ষ : ৮ হাজার একর বনাঞ্চল ধ্বংস

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৯
287 ভিউ
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প তৈরিতে হারিয়ে গেছে হাজার হাজার প্রাণীকূল ও বৃক্ষ : ৮ হাজার একর বনাঞ্চল ধ্বংস

আহমদ গিয়াস(২৩ নভেম্বর) :: একটি গুইসাপ, শিয়াল বা একটি পেঁচা বছরে পরিবেশগত যে সেবা দেয় তার অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা। ১০ বছর বয়সী একটি তেঁতুলগাছ যে অক্সিজেন উৎপাদন করে তা ১৫০ জন মানুষের জন্য যথেষ্ট। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভাষায় নিমগাছ হলো পলিউশন ক্লিনার, যে দূষিত বাতাস পরিশুদ্ধ করে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প তৈরি করতে গিয়ে ৮ হাজার একর বনাঞ্চলে এই ধরনের হাজার হাজার বৃক্ষ ধ্বংস হয়েছে, বিভিন্ন প্রাণীকূলও হারিয়ে গেছে।

বাংলাদেশে ১৩৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৭১২ প্রজাতির পাখি, ১৯৯ প্রজাতির উভচর ও সরীসৃপ এবং ২৫৩ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ, ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও ১৪৮ প্রকার প্রজাপতি রয়েছে। খাদ্য শৃঙ্ক্ষলের কারণে প্রকৃতিতে বিভিন্ন প্রাণীর বৈচিত্র্য মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থে অপরিহার্য হিসাবে বিবেচনা করেন বিজ্ঞানীরা।

রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের প্রফেসর রাগিবউদ্দিন আহমদ বলেন, যদি একটি সাপ, একটি শিয়াল অথবা একটি পেঁচার পরিবেশগত সেবার অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করি, তাহলে এর মূল্য দাঁড়ায় বছরে ২৫ লাখ টাকা। এখন হারিয়ে যাওয়া কয়েকশ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে যদি একটি গুইসাপ প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা ৮ হাজারটিও ধরা হয়, তাহলে পরিবেশগত অর্থনীতির মূল্যায়ন সূত্র অনুযায়ী কেবল এই এক প্রজাতির প্রাণীর হারিয়ে যাওয়ার কারণে পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে ২ হাজার কোটি টাকা।

তিনি জানান, পরিবেশে প্রত্যেক প্রাণীর উপস্থিতি মানুষের অস্তিত্বের জন্যই গরুত্বপূর্ণ হলেও ইঁদুরের মতো অনিষ্টকারী প্রাণী নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গেলে তা মানুষের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, একটি ইঁদুর প্রতিদিন গড়ে ২শটি করে ধানের শীষ কাটে। আর একটি গুইসাপ, পেঁচা বা একটি শিয়াল প্রতিদিন গড়ে ৫০টি করে ইঁদুর শিকার করে। এদের প্রধান খাদ্য ইঁদুর। এভাবে অন্যান্য প্রাণীরও স্ব স্ব কার্যক্রম রয়েছে, যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানান, একজন মানুষের অক্সিজেনের জন্য ২৫ বর্গফুটের উদ্ভিদ আচ্ছাদন প্রয়োজন। বৃক্ষ শুধু অক্সিজেন উৎপাদন করে না, দূষিত কার্বনও শোষণ করে।

তবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে হারিয়ে যাওয়া বনের কার্বন শোষণ ও অক্সিজেন উৎপাদন মূল্যায়ন এবং পশু-পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীর হারিয়ে যাওয়ার সংখ্যা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর।

তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে বনভূমি, বনজ সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য গত ৫ নভেম্বর বনবিভাগের পক্ষ থেকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন।

এছাড়া কমিটিতে রয়েছেন একই বিভাগের প্রফেসর ও বনসম্পদ অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ড. মো. দানেশ মিয়া এবং ঢাকার ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবেশ অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ড. একেএম এনামুল হক।

কমিটিতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক আবদুল আউয়াল সরকার ছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) চট্টগ্রামের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থার (আইইউসিএন) প্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের একজন করে প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে।

 

এর আগে গত ১৮ অক্টোবর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে ধ্বংস হওয়া বনজ সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২,৪২০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ১,৮২৯ কোটি টাকা এবং বনজ দ্রব্যের ক্ষতি ৫৯১ কোটি টাকা বলে ধরা হয়। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে নতুন ও পুরনো মিলে ৩৪টি শরণার্থী শিবিরে সরকারের হিসাব অনুযায়ী ১১ লাখ ১৯ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

বনবিভাগের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের কারণে ৮ হাজার একর বন ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে বসতি নির্মাণ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৬৪ একরের উপর। রোহিঙ্গাদের জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের ফলে ধ্বংস হয়েছে আরো ১ হাজার ৮৩৭ একর বনভূমি। সেখানে শত বছরের প্রাকৃতিক বন ছিল ৪ হাজার ১৩৬ একর এবং সামাজিক বন ছিল ২ হাজার ২৭ একর।

তথ্য প্রকাশের পর এই পরিসংখ্যান নিয়ে দেশের পরিবেশ অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা প্রতিবেদনটিকে অনুমান নির্ভর ভুল প্রতিবেদন আখ্যায়িত করেন এবং এই ধরনের প্রতিবেদনের কারণে পরিবেশ পুনরুদ্ধারে তহবিল সংগ্রহে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মহলে সমস্যায় পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেন। পরে সমালোচনার মুখে গত ৫ নভেম্বর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।

কীভাবে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে জানতে চাইলে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, মহেশখালীতে বাস্তবায়নাধীন ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ প্রকল্পে যেসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নির্ণয় করা হয়েছে, সেই পদ্ধতিতে উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বনজ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি ব্যবহার করা হয়নি।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেখানে সৃজিত বন, প্রাকৃতিক বন ও আর জীববৈচিত্র্য মূলত তিন ভাগে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে নতুন করে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এখনো কাজ শুরু করেনি বলে জানা যায়।

এ প্রসঙ্গে এই কমিটির সদস্য (জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি) উখিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল এহসান খান বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক, বনসম্পদ অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ ড. মো. দানেশ মিয়া বিশেষজ্ঞ কমিটিতে তাঁকে রাখার বিষয়টি অবগত হলেও এখনো কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি বলে জানান। কবে নাগাদ এই কমিটি কাজ শুরু করবে তা-ও নিশ্চিত নন তিনি।

কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক আবদুল আউয়াল সরকার  বলেন, বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে কাজ শুরু করবে কমিটি।

কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন বলেন, প্রকৃতিতে একটি গাছের পানি ধরে রাখা, মাটি ধরে রাখা, খাদ্য উৎপাদন, অক্সিজেন উৎপাদন ও কার্বন শোষণসহ নানা মাপকাঠিতে পরিবেশগত অর্থনৈতিক মূল্যায়ন নির্ধারণ করা হয়।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ রাগিবউদ্দিন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে ধ্বংস হওয়া বনাঞ্চলে কত প্রজাতির পশু-পাখি ও অন্যান্য প্রাণী ছিল তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব না হলেও বনাঞ্চলটি টেকনাফ গেম রিজার্ভের অংশের মতোই জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল।

 

টেকনাফ গেম রিজার্ভে ২৯০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৮৬ প্রজাতির পাখি, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৩ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে বলে ইতিপূর্বে করা বিভিন্ন জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য ধ্বংস হওয়া বনাঞ্চলেও টেকনাফ গেম রিজার্ভের মতো কম-বেশি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল ছিল বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞানী রাগিবউদ্দিন বলেন, বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে পরিবেশ অর্থনীতি বিষয়টি অনেক ব্যাপক ও জটিল। কোনো প্রাণীর পরিবেশগত অর্থনীতির মূল্যায়নের বিষয়টিও কঠিন। মানবকল্যাণে প্রাণীকূলের ব্যবহার সম্পর্কে গবেষণার মাধ্যমে দিন দিন নতুন নতুন তথ্য জানা যাচ্ছে।

সর্বশেষ প্রাপ্ত গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন প্রাণী ও গাছের পরিবেশগত অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা হিসাব করলে প্রকৃত ক্ষতির বিষয়টি জানা যাবে।

287 ভিউ

Posted ১:১২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com