শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা বাণিজ্যে তৎপর ৪৭ ভুঁইফোড় এনজিও

শনিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮
313 ভিউ
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা বাণিজ্যে তৎপর ৪৭ ভুঁইফোড় এনজিও

কক্সবাংলা রিপোর্ট(৮ সেপ্টেম্বর) :: মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে নানামাত্রিক কাজ করে যাচ্ছে দেশি-বিদেশি প্রায় ২৫০টি এনজিও। এগুলোর মধ্যে একটি অংশ এনজিও ব্যুরোর অনুমতি সাপেক্ষে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে এলেও বেশ কিছু এনজিও কোনো অনুমোদন ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উসকানি এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কাজ করা ৪৭টি এনজিওকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর এখনো বেশ কয়েকটি চিহ্নিত এনজিও তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

দেশি-বিদেশি স্বনামখ্যাত এনজিও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের কেন্দ্র করে কক্সবাজার এলাকায় এখন বাহারি কর্মসূচি নিয়ে তৎপর রয়েছে ভুঁইফোড় কিছু এনজিও।

আর এসব এনজিওর পেছনে কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছেন শত শত সাংবাদিক, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক ও তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা, যাদের অধিকাংশেরই সংশ্লিষ্ট কাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। আর এভাবেই চলছে কোটি কোটি ডলারের এনজিও বাণিজ্য।

এদিকে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার লেদা, মুছনী, বাহারছড়া, কুতুপালং ও বালুখালী এলাকায় আশ্রয় দেওয়ার পর থেকেই একটি গোষ্ঠী ‘ব্যবসায়িক ফায়দা’ লুটছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। আর সে জন্য কারণে-অকারণে গেল বছর ধরেই অব্যাহত রয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা।

রোহিঙ্গাদের সেবার নামে সীমান্ত এলাকায় আসে নিষিদ্ধ-ঘোষিত এনজিও ইসলামী আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা (আইআইআরও), ইসলামী রিলিফ ওয়ার্ল্ডওয়াইড (আইআরডব্লিউ), আল হারামাইন, ইত্তেহাদুল মুসলিমিন, ওয়ামি, মুসলিম এইডসহ আরও অনেক এনজিও।

কিছুদিন পর এসব এনজিওর বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ থাকায় রোহিঙ্গা শিবিরে তাদের কার্যক্রম সরকার নিষিদ্ধ করে দেয়। এর পরও ‘রোহিঙ্গা সেবকদের’ তৎপরতা থেমে নেই।

পাকিস্তান, সুদান, সৌদি আরব, চীন, আফগানিস্তান, তুরস্ক ও মালয়েশিয়া থেকে নানা এনজিওর নামে প্রতিনিধিদল সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে আসে। প্রতিনিধিদের অনেকেই ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে এনজিও কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। ইতিপূর্বে এ ধরনের অনেককে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়।

৪ জুলাই টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টাকা বিতরণকালে পাঁচ চীনা নাগরিকসহ সাতজনকে আটক করেছিলেন বিজিবি সদস্যরা। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা ও পাঁচটি মোবাইল ফোনসেট।

চীনা নাগরিক ছাড়া আটক দুই বাংলাদেশি হলেন টেকনাফ গোদারবিল আনাস বিন মালিক মাদ্রাসার পরিচালক মৌলভি মো. শফিউল্লাহ ও চট্টগ্রামের বেসরকারি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জামিল তাহের।

গেল বছর টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা আজিজ উদ্দিনকে ৯৯টি গরুসহ টেকনাফ থানা পুলিশ আটক করেছিল। তুরস্কের এনজিওর টাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য তিনি এসব গরু কিনেছিলেন।

এদিকে ৪ জানুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত সাত বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির সুপারিশ গেছে এনজিও ব্যুরোতে। সরকারবিরোধী প্রচারণা, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে দ্বিতীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া, রোহিঙ্গা শিশুদের বাংলা ভাষায় পাঠদানসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ সুপারিশ করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

এই সাত এনজিওর মধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনও রয়েছে। অন্য এনজিওগুলো হচ্ছে—এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সার্ভিস (ইডিএএস), মোয়াস (এমওএএস), এমডিএস, কোডাক (সিওডিইসি), এসআরপিবি ও শেড।

গোয়েন্দা নজরদারিতে ওই সাত এনজিওর বিতর্কিত কার্যক্রমের প্রমাণ পাওয়ায় তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে সুপারিশ পাঠানো হয় বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

এদিকে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) মাধ্যমে তাদের কাজের সমন্বয় করার নিয়ম থাকলেও খাদ্য, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও খাওয়ার পানির ব্যাপারে যথাযথ জবাবদিহি করছে না কোনো এনজিও।

আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সমন্বয়ে কর্মরত এনজিওগুলো রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার দিকে নজর না দিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে

অন্যদিকে মালয়েশিয়া, তুরস্ক ও ইরান সরকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হাসপাতাল তৈরি করছে, যার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসন অবহিত নয়। বিদেশি সাহায্য সংস্থার শত শত কোটি টাকা বেহাত করার জন্য এ কাজে দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে স্বার্থান্বেষী এসব মহলের তৎপরতার বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে যুক্ত এমন কোনো সংস্থাকে এখানে কাজ করতে দেওয়া হবে না।

দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে যারা রোহিঙ্গাদের সেবার নামে বিভিন্ন বাণিজ্য চালাচ্ছে, ইতিমধ্যে এমন ‘রোহিঙ্গা ব্যবসায়ী’দের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদেরই বেশি রয়েছে। কিন্তু দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে মানবিকতা কোনোভাবেই দেখানো হবে না।’

জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিদেশি এনজিওর হয়ে এক থেকে দেড় হাজার লোক কাজ করেন। তারা কে কোথা থেকে কীভাবে কোন ভিসায় এসেছেন, যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয়গুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার নামে ক্যাম্পগুলোতে কয়েকটি বিদেশি এনজিও কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়া ভ্রমণ ভিসায় (টি ভিসায়) এসে এনজিওকর্মী সেজে কাজ করছেন।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে এমন আরও কয়েকটি এনজিওর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনজিও ব্যুরো থেকে কোনো অনুমতি ছাড়াই রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে গরিব ইয়াতিম অ্যান্ড ট্রাস্ট, আল খালিল এডুকেশন অ্যান্ড কালচার, ইকরা ইন্টারন্যাশনাল।

এ ছাড়া লন্ডনভিত্তিক পাকিস্তানি এনজিও উম্মাহ কেয়ার ফাউন্ডেশন, গ্রিমকল শরিফ মসজিদ বার্মিংহাম কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই কাজ করছে এসব এলাকায়। নীতিমালা না মেনে তারা রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দিচ্ছে নগদ অর্থ। যেসব এনজিও এসব কাজ করছে, এর বেশির ভাগ পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে আসা। তারা পর্যটন ভিসায় বাংলাদেশে এসেছে। নিয়ম না মেনে কাজ করার ফলে এ পর্যন্ত ৪৭টি এনজিওর কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে এসব এনজিওর সঙ্গে কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছেন অনভিজ্ঞ অনেক সংবাদকর্মী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও চিকিৎসক। এ কাজের বিনিময়ে তারা প্রত্যেকেই মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা নিচ্ছেন। আর এ ধরনের কনসালটেন্সিও এক ধরনের ব্যবসাবৃত্তিতে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন প্রকৃত বিশেষজ্ঞরা।

313 ভিউ

Posted ১:১৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com