কক্সবাংলা রিপোর্ট(৮ ডিসেম্বর) :: কক্সবাজারের স্বামধন্য বলে পরিচিতি পাওয়া ‘শেভরণ’ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরী। এ প্রতিষ্ঠানটির সুনামের পেছনে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ড্যাব ও কিছু আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাচীপের কিছু নামকরা সরকারী ডাক্তারদের চেম্বার। আরএর মালিকানায় রয়েছেন তারা। তবে শনিবার জেলা স্বাস্থ বিভাগ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে উঠে এসেছে এর আসল পরিচয়।
প্রশাসনের অভিযানে দেখা গেছে,এ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন টেকনোলজিস্ট নেই। খালি প্যাডে আগে থেকেই সরকারী হাসপাতালের এক ল্যাব টেকনোলজিস্টের স্বাক্ষর করা থাকে। ওই প্যাডে প্রতিনিয়ত দেওয়া হচ্ছে শত শত ভুল রিপোর্ট।এ কারণে প্রতিনিয়ত ঠকছে রোগিরা। খোদ ল্যাবের লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে দেড় বছর আগে।
পরীক্ষাগারে ব্যবহার করা হয় অনুমোদনহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশি ওষুধ। সব মিলিয়ে কক্সবাজারে রোগ নির্ণয়ে জালিয়াতির কারখানায় পরিণত হয়েছে ‘শেভরণ’ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরী।
এর আগে গত শুক্রবার এই শেভরণ’ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার ভুল রিপোর্টের শিকার হন মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের মা শহীদ জননী আলমাছ খাতুন। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন শহীদ জননী আলমাছ খাতুন রক্ত ও ইউরিন পরীক্ষা করতে দিয়ে এ ভুল রিপোর্ট পান। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট সেলিম শেখ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনার পর কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ও সিভিল সার্জনসহ একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত গিয়ে অনিয়ম-জালিয়াতির দায়ে ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষকে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। একই সঙ্গে ল্যাবরেটরির পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, মন্ত্রিপরিষদসচিবের মায়ের মতো একজন অশীতিপর বৃদ্ধা নারীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভুল করার মতো ঘটনা খুবই দুঃখজনক। প্রাথমিক তদন্ত শেষে তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে একই নামের দুই রোগী হওয়ায় একজনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ তাড়াহুড়োতে অন্যজনের হাতে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আরো তদন্ত করা হবে বলে তিনি জানান।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট সেলিম শেখ জানান, কক্সবাজার জেলা শহরের হাসপাতাল সড়কের এই ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা কাজের বিষয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। ল্যাবরেটরিটির কাজের কোনো অনুমোদন নেই। নেই ল্যাবরেটরিতে কর্মরত টেকনিশিয়ানদের কোনো সনদও। এমনকি এখানে অনুমোদন ছাড়া বিদেশি ওষুধও ব্যবহার এবং বিক্রি চলছে অবাধে। এসব কারণেই ভ্রাম্যমাণ আদালত তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। গেল বছরও অনুরূপ অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাবের একটি দল ওই ল্যাবরেটরিটিকে চার লাখ টাকা জরিমানা করেছিল।
অভিযোগ রয়েছে, অদক্ষ টেকনোলজিস্টরা টেস্ট গুলো করে নির্ধারিত প্যাডে প্রিন্ট করে রোগির স্বজনের কাছে হস্তান্তর করে। এর ফলে বেশির ভাগই ভুল রিপোর্ট তৈরী হচ্ছে। আর রোগ নিরাময়ের বিপরীতে আরও জটিল অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয় অনুমোদনহীন বিদেশি ওষুধ। ২০১৭ সালের জুন মাসে শেভরণের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। অকেজো যন্ত্রপাতি দিয়ে ল্যাব চালানোর কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শেভরণকে আর অনুমোদন দেয়নি। কিন্তু তারপরও দিব্যি কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।কক্সবাজারের শেভরণ হলো চট্টগ্রাম শেভরণের শাখা। আর এটি পরিচালনা করেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ড্যাব ও কিছু আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাচীপের কয়েকজন চিকিৎসক। হাসপাতালের নানা অপকর্মে নেতৃত্ব দেন ম্যানেজার সদীপ শর্মা ও বাহারছড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি।
Posted ২:১৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta