কক্সবাংলা রিপোর্ট(২১ ডিসেম্বর) :: মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে। আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গারা জাতীয় নির্বাচনের সময় নাশকতায় তাদের ব্যবহার হতে পারে, এমন আশংকা করছে কক্সবাজারবাসী। এই অবস্থায় রোহিঙ্গারা যাতে কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা বা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য তাদের ক্যাম্পের বাইরে যেতে না দেয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গারা যেন নির্বাচনি প্রচারণা কিংবা অন্য কোনও কর্মাকান্ডে অংশ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলিতে। আগেই রোহিঙ্গাদের জঙ্গিযোগ ও নির্বাচন চলাকালীন জঙ্গি হামলার সতর্কবার্তা জারি করেছে গোয়েন্দা বিভাগ। এসব শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে আগে থেকে পুলিশ ও আনসার বাহিনী নিয়োজিত থাকলেও নির্বাচন উপলক্ষে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কড়া নির্দেশনা গুরুত্ব দিয়ে পালন করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন নতুন করে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা টহল দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি রোহিঙ্গা শিবিরে দলনেতাদের (মাঝি) স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। এর মধ্যে ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ১৪৬ জন। কিন্তু উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা; যা কিনা স্থানীয় জনসংখ্যার দ্বিগুনেরও বেশি। পূর্বে আসা অনেক রোহিঙ্গা কৌশলে ভোটার তালিকায়ও অর্ন্তভুক্ত হয়েছেন। এদের অনেকেই কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া নানা কারণে নির্বাচন কেন্দ্রীক রোহিঙ্গাদের নিয়ে বেড়েছে শংকা। টাকার লোভে পড়ে রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষদের জাল ভোট দানে ব্যবহার করা হতে পারে। এর আগে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে এসে কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আটক করছিলেন। তা মাথায় রেখে রোহিঙ্গাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।আর নির্বাচনের আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিদেশি অতিথিদের ভ্রমণও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মহম্মদ আবুল কালাম জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নির্বাচনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ব্যবহার করা হতে পারে। ফলে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে শরণার্থী শিবিরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে শুধু চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনও কারণে আশ্রয় শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের বের হতে দেওয়া হবে না ।এছাড়া শরনাথী শিবিরের প্রত্যেক সিআইসিকে কঠোর নিদের্শনা দেওয়া রয়েছে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন,নিবার্চনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করার সুযোগ কোনও গ্রুপকেই দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নজাদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
উখিয়ার কালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি (নেতা) জাকের হোসেন বলেন,‘বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাসহ সব ধরনের কর্মকান্ডে যাতে কোনো রোহিঙ্গা সম্পৃক্ত না হয় সে জন্য শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আমরা উদ্বাস্তু হিসেবে এ দেশে বসবাস করছি।
টেকনাফ নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল রব বলেন, প্রতিদিন ক্যাম্পে যৌথ বাহিনীর তিনটি দল টহল দিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে এ টহল বাড়ানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের চলাচল সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন,নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা-বাহিনীর অতিরিক্ত নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোনোভাবেই নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেন,নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের পাশপাশি কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা। শরণার্থী শিবিরসহ আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গাড়ি, অটোরিকশা থামিয়ে যাতায়াতকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করা হচ্ছে। ক্যাম্প’র বাইরে যাতে রোহিঙ্গারা যেতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রয়েছে।প্রয়োজনে নির্বাচনের সময় ক্যাম্প সিল করে দেওয়া হবে।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বলেন,কক্সবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনে ৩০ ডিসেম্বর যাতে শান্তিপূর্ণভা ভোট হয় সে বিষয়টিতে খেয়াল রাখা হচ্ছে।পাশাপাশি নির্বাচনে রোহিঙ্গারা যাতে বিশৃঙ্খলা চালাতে না পারে সে ব্যাপারে সকলেই সজাগ রয়েছি।
প্রসংগত কক্সবাজার সীমান্তে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করছে এনজিওর আড়ালে কাজ করা জেহাদিরা। সম্প্রতি ঢাকা ও কক্সবাজারে কাউন্টার টেরিজিম এবং পুলিশ অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওর ছদ্দবেশে কাজ করা স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ(এসকেবি) নামের এনজিওর ৩০ জন সদস্যকে আটক করে। এদিকে সম্প্রতি বিএনপি-আইএসআই আঁতাঁতে নাশকতার আশঙ্কাও রয়েছে শাসক শিবিরে। তাই রোহিঙ্গা শিবিরে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা বলেই মনে করা হচ্ছে।
Posted ৬:৪৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta