বিশেষ প্রতিবেদক(২১ জুলাই) :: টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কায় কক্সবাজার জেলায় বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই জেলার পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে দুই লাখেরও বেশি মানুষ। এসব মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জনসাধারণকে সতর্ক করতে জেলাব্যাপী চলছে ব্যাপক মাইকিং।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, টানা চার দিনের বর্ষণে কক্সবাজার জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কায় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে লোকজন সরিয়ে নিতে কোথাও কোথাও অভিযানও চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে করা হচ্ছে মাইকিং।
তিনি আরও জানান, পাহাড়ধসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কায় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হলেও তারা সাড়া দেন না। এ অবস্থায় প্রবল বর্ষণের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করতে কর্মকর্তাদেরও ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে স্থানীয়দের সঙ্গে রোহিঙ্গারাও ব্যাপক হারে পাহাড় দখল করছে। পাহাড় কেটে তারা অবৈধ বসতি গড়ে তুলছে। বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি নরম হলে পাহাড় কাটা শুরু হয়। ফলে এই সময় পাহাড়ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা বেড়ে যায়। গত ৫ বছরে কক্সবাজার জেলায় পাহাড়ধসে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হলেও থামছে না ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস ও পাহাড় কাটা।
সদর উপজেলার পাহাড়তলী, বৈদ্যরঘোনা ও কলাতলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রবল ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে। টানা এই বৃষ্টিতে কেউ কেউ পাহাড়ও কাটছে। ফলে পাহাড়ধসে মাটি নেমে এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে শহরের নালা-নর্দমা।
বৈদ্যরঘোনায় পাহাড়ের চূড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা জাফর আলম। তিনি বলেন, ‘থাকার জায়গা নেই, তাই ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়েই বাস করছি।’ পাশেই আরেকটি ঝুপড়ি ঘর তুলে বাস করছেন মহেশখালীর শাপলাপুর থেকে আসা নজির আহমদ। এতো ঝুঁকি নিয়ে কেন পাহাড়ে বসবাস করছেন—জানতে চাইলে তার উত্তর, ‘আল্লাহ ভরসা, যা হয় হবে।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান জানান, এই জেলায় পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বাসকারীদের তালিকা তৈরি করে ৫ হাজার পরিবারকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। গত ক’দিন ধরে অভিযান চালিয়ে শতাধিক পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরও অনেক পরিবারকে অন্যত্র সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, টেকনাফ উপজেলা সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও বাহারছড়া এলাকায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর পাহাড় রয়েছে অবৈধ দখলে। এসব পাহাড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন সিদ্দিক জানান, টানা বর্ষণের ফলে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছে না। এতে বাধ্য হয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।
উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় বন বিভাগের পাহাড়ে ঘর তুলে বাস করছে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা। তাদের অধিকাংশ রয়েছে প্রবল ঝুঁকির মধ্যে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির জানান, জনবল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে তারা অসহায়। নিরাপত্তার জন্য প্রচার চালানো হলেও কেউ আমলে নিচ্ছে না। বনভূমি অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেও এদের নিভৃত করা যাচ্ছে না।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, জেলায় শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৯ ঘণ্টায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কক্সবাজারে আগামী দুই দিন ভারি বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া পুরো বর্ষা মৌসুমেই জেলায় বৃষ্টিপাত হবে। ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে ভূমিধসের সংকেত রয়েছে।
Posted ১১:৩৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta