সাইফুল ইসলাম(১৭ সেপ্টেম্বর) :: কক্সবাজার শহরের যানজট নিরসনে অন্তত: শতাধিক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১৫ জন। তাও কয়েকজন ছুটিতে থাকেন প্রায় সময়। পাঠক, ট্রাফিক বিভাগের পিলে চমকানো এমন তথ্যে অবাক হবার কিছু নেই!। শান্তনা হলো-এখানে পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন কনস্টেবলের দুইগুন, অর্থাৎ ৩০জন।
সব মিলিয়ে বিশাল পর্যটন শহরকে যানজট মুক্ত রাখার কর্তব্যে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে মাত্র ৪৫ জনের ছোট্ট ট্রাফিক বহর। শূণ্যতায় ভরা বহরটি চলছেও খুড়িয়ে খুড়িয়ে। এতে চরমভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দেশী-বিদেশী পর্যটক ও স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এই শহরে যানজট লেগেই থাকে। ছোট-বড় গাড়ির যত্রতত্র পার্কিং ও প্রধান সড়কের দুই পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান, ফুটপাতে দখল, প্রধান সড়কের আশপাশে সিএনজির মিনি টার্মিনাল, টমটম ও বড় বড় বাস-ট্রাক দাড়িয়ে থাকার কারণে শহরটিতে যানজট স্থায়ীভাবে রূপ নিয়েছে।
প্রত্যেকদিন প্রায় ১ থেকে ২ ঘন্টা যানজটের কারণে থমকে থাকে জনজীবন। এতে কক্সবাজারের উন্নয়নের গতিও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন সুশীল সমাজ।
জানা যায়, শহরের অভ্যন্তরে প্রায় ছয়টি স্থানে বেশির ভাগ যানজট লেগে থাকে। তৎমধ্যে বার্মিজ মার্কেট বৌদ্ধমন্দির সড়কের চৌরাস্তার মোড়ে, বাজারঘাটা আইভিপি রাস্তার মাথায়, ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্পের পাশে, খুরুশকুল রাস্তার মাথায় ও পৌরসভার সামনে প্রধান সড়কে।
শহরের পিটিস্কুল থেকে টমটম যোগে বাজারঘাটা আসতে যেখানে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ মিনিট, সেখানে যানজটের কারণে প্রতিদিন প্রায় ১ ঘন্টারও বেশি সময় পার হচ্ছে বলে জানান যাত্রীরা।
অনেক যাত্রী জানায়, ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছা করলে শহরকে যানজটমুক্ত করতে পারেন। কিন্তু এরা প্রতিনিয়তেই যানজট নিরসনের চেয়ে সিএনজি, টমটম, মোটরসাইকেল ও অনুমোদনহীন গাড়ি থেকে টাকা আদায়ে ব্যস্ত থাকেন।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বাংলাবাজারের বাসিন্দা মো. আব্দুস সালাম বলেন, কক্সবাজার শহর নাকি পর্যটন এলাকা। এখানে রাস্তার কোন নিয়মনীতি নেই। দিন দিন সড়কে যানজট বাড়তেই দেখা গেছে। এ যানজটের কবলে পড়ে বার্মিজ মার্কেট থেকে হাসপাতালে আসতে আধা ১ ঘন্টা সময় লাগছে।
জামাল উদ্দিন মাহমুদ নামে এক ব্যাংকার বলেন, “সরকারী বন্ধ ছাড়া রুমালিয়ারছড়া থেকে প্রতিদিন আমাকে ব্যাংকে যেতে হয়। যে ব্যাংকে যেতে ৮ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগে, সেখানে প্রায় ১ ঘন্টা পূর্বে বাসা থেকে বের হতে হয়। তা না হলে ঠিক মতো একদিনও ব্যাংকে উপস্থিত হতে পারিনা।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা এক পর্যটক দম্পতি জানান, যে কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায় তারা আবার আশপাশের চায়ের দোকানে আড্ডায় ব্যস্ত থাকেন। সড়কে এতো যানজটের মাঝেও সংশ্লিষ্ট উর্ধতন মহলের কোন মাথা ব্যথা না থাকাটা খুবই দু:খজনক।
মহিউদ্দীন নামে এক আইনজীবী জানান, যানজটতো মানুষের জন্য নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে রয়েছে। এ যানজটের কবলে পড়ে প্রতিদিন কর্মজীবন থেকে ২ থেকে ৩ ঘন্টা অপচয় হচ্ছে। তিনি বলেন, পেশাগত কাজে আদালতে যেতে অর্ধ ঘন্টা সময়ের জায়গায় এখন লাগে প্রায় ২ ঘন্টা। অসহনীয় যানজটের কারনে অনেক সময় কর্মস্থলে উপস্থিতও হতে পারিনি।
কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর বিনয় কুমার বড়–য়া বলেন, “পর্যটন নগরী হিসেবে চাহিদামতো ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় নানা সংকট রয়েছে। তাই মাঝে মধ্যে কিছুটা যানজট হয়ে থাকে। তবে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি শহরকে যানজটমুক্ত রাখার।” তিনি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে যানজট সমস্যা সমাধানে কক্সবাজারে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন মহলের প্রতি অনুরোধও জানান।
Posted ১০:২৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta