কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৫ সেপ্টেম্বর) :: পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহর এখন ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার আওতায় এসেছে।শহরের ৪০টি স্থানে ৬৭টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও অপরাধ প্রবণ স্থানগুলোকে সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে আসল। এছাড়া বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে আসা-যাওয়ার রাস্তা থেকে শুরু করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোও অত্যাধুনিক ক্যামেরা নজরদারিতে আনা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে দুপুরে সিসিটিভি কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধন করেন।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়,সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ৪০টি পয়েন্টে ৬৭টি এ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা ধরে এসব ক্যামেরায় ধারণ করা হচ্ছে শহরের চলমান চিত্র। আর জেলা পুলিশ অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা কন্ট্রোল রুমে বসেই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে পুরো শহরটি। পর্যটন শহরটিকে অপরাধমুক্ত রাখতে কক্সবাজার জেলা পুলিশের এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন এ সময় বলেন, দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন শহরটিকে অপরাধমুক্ত করার স্বপ্ন বুনেছিলাম এখানে যোগদান করার পরই। সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হল।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসু লোকজন বেড়াতে আসেন। এ কারণে এ শহরেই নানা অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত লোকজনের তৎপরতাও থাকে বেশী। শহরের সাগর পাড় থেকে শুরু করে বাস টার্মিনাল, হোটেল-মোটেল জোন এবং কেনাকাটার মার্কেটগুলোতে ওৎ পেতে থাকে ছিনতাইকারির দল। সে কারনেই ‘কোন অপরাধী বা ছিনতাইকারীর হাতে ট্যুরিস্ট কিংবা স্থানীয় কেউ যাতে অসুবিধায় না পড়ে সেজন্যই কিন্তু আমাদের এই বৃহৎ পরিকল্পনা হাতে নেয়া।
মাত্র দুবছর আগেও ছিনতাইকারীদের ধরতে গিয়ে একজন পুলিশ সদস্য প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। অনুরুপ ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন বেশ ক’জন পর্যটকও। নিত্যদিনের এসব অপরাধজনক ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য জেলা পুলিশ উপায় খুঁজছিলেন।
পুলিশ সুপার বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সিসিটিভি ক্যামেরায় শহর নিয়ন্ত্রণের মতো এক ব্যয়বহুল উদ্যোগ তিনি অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই কাঁধে নেন। অতপর তিনি শহরের নানা পেশার লোকজনের সাথে মত বিনিময় করা শুরু করেন। সবার নিকট সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে যান।
শেষ পর্যন্ত এগিয়ে আসে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশনও (ইউএনএইচসিআর), কক্সবাজারের ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন, কক্সবাজার পৌরসভা,পরিবহন কোম্পানী, হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি থেকে শুরু করে শহরের ব্যবসায়ীরাও। ইউএনএইচসিআর ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা কন্ট্রোল রুমের অত্যাধুনিক বিশাল পর্দ্দাটির (স্ক্রিন) ব্যবস্থা করে দেন।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সাইফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ৪০টি পয়েন্টে ৬৭টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সাগর পাড়, বাস টার্মিনাল ও শহরের গেইটওয়ে হিসাবে পরিচিত কলাতলি বঙ্গবন্ধু চত্বর (ডলফিন পয়েন্ট) সহ আরো কয়েকটি স্থানে বসানো ক্যামেরাগুলো রয়েছে প্রতিনিয়ত ঘূর্ণায়মান অবস্থায়। এসব পয়েন্টগুলোর চব্বিশ ঘণ্টার চলমান ধারণ করা চিত্র পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জেলা পুলিশ অফিসে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসেই। চব্বিশ ঘণ্টায় পালাক্রমে সিসিটিভি নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন এসব চিত্র পর্যবেক্ষণের কাজে। দিনের বেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে থাকেন নারী পুলিশ সদস্যরা আর রাতের বেলায় থাকেন পুরুষ সদস্যরা।
জেলা পুলিশের আয়োজিত অনাড়ম্ববর আনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার আরও জানান, এমন একটি মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে সরকারি তহবিলের একটি টাকা ছাড়াই। কেবলমাত্র স্থানীয় কমিউনিটি এবং ইউএনএইচসিআর এর দেওয়া অনুদানেই এতবড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবার পর থেকে ইতোমধ্যে ভালো ফলাফলও পাওয়া যাচ্ছে। ক্যামেরা বসানোর পর থেকেই শহরের অপরাধজনক ঘটনা কমে গেছে। অপরাধীরাও জানতে পেরেছে, কোনো অপরাধ করলেই তারা ক্যামেরায় চিহ্নিত হয়ে যাবে।
উদ্ধোধনী আনুষ্ঠানে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক এবং কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, ইউএনএইচসিআর এর সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার এলিজাভেথ মার্কার, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
Posted ৫:৫৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta