কক্সবাংলা রিপোর্ট(৭ ডিসেম্বর) :: কক্সবাজার হয়ে পর্যটননগরী সেন্টমার্টিন পৌঁছাতে পর্যটকদের জন্য বিকল্প রুটের সন্ধানে সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই বিকল্প পথের দিকে যেতে হচ্ছে তাদের।
কেননা রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুই দেশের মধ্যে শীতল সম্পর্ক সেন্টমার্টিনে আসা-যাওয়া পর্যটকদের জন্য হুমকি-এ ধরনের শঙ্কা থেকেই বিকল্প রুটের চিন্তার শুরু বলে জানা যায়। কারণ পার্শ্ববর্তী দুই দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমঝোতা এবং আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও রাখাইন রাজ্যে দেশটির নিধনযজ্ঞ এখনো বন্ধ হয়নি।
পাশাপাশি আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কারণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে সরকারকে। সবকিছুকে আমলে নিয়ে কক্সবাজার হয়ে সেন্টমার্টিনে যেতে বিকল্প রুট হিসেবে ‘ঋজু খাল’কে কাজে লাগাতে চান সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি সমুদ্রপথে সি-ক্রুজ সার্ভিস চালু করা সংক্রান্ত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ বিকল্প রুট চালু করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। খালটি চালু করতে সম্ভাব্যতা নিয়েও আলোচনা হয়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সরকার নিজ দেশীয় রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নির্যাতন ও নিধনযজ্ঞে নেমে পড়ে। আন্তর্জাতিক বিশ্ব দেশটির এই বর্বরোচিত হামলাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘের পাশাপাশি পোপ ফ্রান্সিসও সফর করেছেন দেশটিতে। এ ইস্যুতে সবাই উদ্বেগ জানিয়েছেন। এতেও চেতন ফেরেনি মিয়ানমার সরকারের। উল্টো রাখাইন রাজ্যে হামলার পক্ষে সাফাই গাইয়ে চলেছেন তারা।
তাদের নির্যাতন ও প্রাণভয়ে আত্মরক্ষাতে সীমান্ত পেরিয়ে কক্সাবাজারের কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেন। এখন পর্যন্ত তাদের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়ালেও নিবন্ধন হয়েছে সাত লাখ।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছালে বড় ধাক্কা লাগে পর্যটননগরী সেন্টমার্টিনের ওপর। কক্সবাজার হয়ে সমুদ্রপথে সেন্টমার্টিন যেতে টেকনাফের মিয়ানমার সীমান্ত স্পর্শ করতে হয়। ঘটনার পর প্রায় দুই মাস পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
গত ১৫ অক্টোবর থেকে সীমিত পরিসরে পর্যটক আনা-নেওয়া শুরুর উদ্যোগ নিয়েও তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নভেম্বর মাস থেকে কোস্টগার্ড ও বিজিবির সহায়তায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমানার কাছাকাছি সীমিত আকারে জাহাজ চলাচল চলছে।
পর্যটননগরী সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের পাশাপাশি নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচল অব্যাহত রাখতে বিকল্প রুটের সন্ধানে নেমে পড়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। পরবর্তী ঋজু খালকে বিকল্প রুটের জন্য নির্বাচিত করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) চেয়ারম্যান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেশে পর্যটন সুবিধা চালু এবং ক্রুজ জাহাজ চালু করার পক্ষে আমরা। এর জন্য ঋজু খালে পর্যটন সুবিধা, জেটি নির্মাণ, চ্যানেল ড্রেজিং ইত্যাদি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বন্দরের পক্ষ থেকে সুপারিশ রয়েছে। কাজটি করার জন্য ন্যূনতম সাত-আট মাস অপেক্ষা করতে হবে। এ সময়ের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বিকল্প পথটি চালু করা যাবে কি না।’
চবকের চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা সমস্যা, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ইত্যাদির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সেন্টমার্টিনে সারা বছর যাত্রী চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে একটি বিকল্প রুট চালু করা যায়। এর জন্য ঋজু খালটি সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হতে পারে।
তিনি বলেন, সরকারের নৌ মন্ত্রণালয় এ বিকল্প খালটি ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ তা রক্ষণাবেক্ষণ করবে এবং এ খাতে আগের খরচ অর্থবহ হবে। পাশাপাশি সংস্কারের পর ঋজু খাল পর্যন্ত যাত্রীসেবা চালু করতে পারি বলে অভিমত দেন চেয়ারম্যান।
আর বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান সভায় বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ১৫ অক্টোবর থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিলেও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে এক মাস অপেক্ষা করার পর মধ্য নভেম্বর থেকে কোস্টগার্ড ও বিজিবির সহায়তায় জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন উত্তর-পূর্ব রুটে ড্রেজিং এবং টেকনাফে জেটি নির্মাণের জন্য দুটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। তিনি বলেন, বর্তমানে দু-তিনটি জাহাজ চালু রয়েছে এবং বাকি জাহাজ শিগগিরই চালু হবে। এ ছাড়া মহেশখালী থেকে বাকখালী রুটে একটি সার্ভিস চালু প্রক্রিয়াধীন।
সূত্রমতে, রোহিঙ্গা পরিস্থিতিতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চালুর বিষয়ে শঙ্কা থাকলেও এখন অনেকটা স্বাভাবিক। রোহিঙ্গা সংকট না কাটা পর্যন্ত সতর্ক থাকতে নির্দেশ রয়েছে সরকারের।
পরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যটননগরী সেন্টমার্টিন রুটে যাত্রী চলাচল বছরজুড়ে নির্বিঘ্ন রাখতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটের বর্তমান পরিস্থিতি এবং কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন বিকল্প রুট চালুর পক্ষে সভায় তারা মতামত দেন।
Posted ২:১০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta