কক্সবাংলা ডটকম(১৮ এপ্রিল) :: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। উদ্দেশ্য ছিল বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের পাশাপাশি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার সঙ্গে অবধারিতভাবে জড়িয়ে পড়েছে ডব্লিউএইচও। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি-ধমকিতে বৈশ্বিক এই সংস্থাটি পড়েছে আস্থার সংকটে। অথচ মহামারির এই সময় ঐক্যবদ্ধ থাকাটাই ছিল সঙ্গত।
ডব্লিউএইচওর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, সংস্থাটি করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্য গোপন করেছে এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সংস্থাটি খুব বেশি ‘চীনঘেঁষা’। ফলে বার্ষিক ৪০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে তথ্য-উপাত্ত বলছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলে অর্থায়নের পরিমাণ কমানোর কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। ডব্লিউএইচওর বিরুদ্ধে তখন ‘চীনঘেঁষা’ বা ‘তথ্য গোপনে’র অভিযোগ ছিল না।
ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা মনে করেন, ডব্লিউএইচও করোনাভাইরাস সম্পর্কে আগে থেকে সতর্কবার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি চীনের স্বচ্ছতার বিষয়ে একেবারেই নীরব। অথচ জানুয়ারির প্রথম দিকেই ডব্লিউএইচও করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করে দেয়। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বিমান যোগযোগ বন্ধ করার আগেই ‘জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নিজ দেশেই সমালোচনার শিকার হচ্ছেন ট্রাম্প। ঠিক তখনই তিনি উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর খেলাটা খেললেন। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনকে দায়ী করে ভাইরাসটিকে ‘চায়নিজ ভাইরাস’ বলে উল্লেখ শুরু করলেন। সংকট মোকাবিলায় খাপছাড়া অবস্থা হওয়ায় পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দায়ী করলেন। এর পর রাজ্য গভর্নরদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোর পাশাপাশি ডব্লিউএইচওকে ‘বলির পাঁঠা’ বানালেন।
তবে শুধু ট্রাম্পকে একতরফা দোষ দিয়ে ডব্লিউএইচওর অভ্যন্তরীণ সংকট ও ব্যর্থতার বিষয়টি বোঝা যাবে না। করোনাভাইরাসের আগে ২০১৪-১৫ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছিল ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ। তখন ডব্লিউএইচওর প্রধান ছিলেন মার্গারেট চ্যান। তিনি ইবোলা মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে দায়িত্বে অবহেলার পরিচয় দিয়েছিলেন।
তখন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সংস্থাটিকে নতুন করে সাজানোরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাতে রাজি ছিলেন না। চীনের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন কমিশনের তদন্তে বলা হয়েছিল, ডব্লিউএইচওর তহবিলে অর্থায়নের পরিমাণ বহু বছর ধরে বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালে ডা. টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস সংস্থাটি সংস্কার ও তহবিল বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতা রয়েছে ঠিকই; কিন্তু করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তার যে পদক্ষেপ, তাতে কোনো ঘাটতি দেখতে পাননি বহু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
অর্থায়ন বন্ধে ট্রাম্পের ঘোষণা দেওয়ার অনেক আগে থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থ সংকটে ভুগছে। এটি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ব্রিটেনের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক গণস্বাস্থ্য বিষয়ের চেয়ারম্যান দেবী শ্রীধর বলেন, করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময় সংক্রমণ ঠেকাতে ডব্লিউএইচও মূলত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করছে। এই সময়ে সংস্থাটির আরও অর্থ দরকার ছিল। অথচ এমন এক সংকটময় মুহূর্তে ট্রাম্প অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিলেন।
সূত্র :দ্য গার্ডিয়ান।
Posted ২:৩৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta