রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

এইডসের মরণফাঁদ ও এইচআইভি ভ্যাক্সিন

শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮
1190 ভিউ
এইডসের মরণফাঁদ ও এইচআইভি ভ্যাক্সিন

কক্সবাংলা ডটকম(১৯ ডিসেম্বর) :: পৃথিবীজুড়ে বর্তমানে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভির সাথে বাস করে। এইডসের সূচনাকাল থেকে এ পর্যন্ত ৭০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ৩৫ মিলিয়ন মানুষ। ২০১৭ সালেই এইচআইভি সংক্রান্ত জটিলতায় বিশ্বজুড়ে ৯ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এইচআইভির প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বা চিকিৎসা এখন সহজলভ্য হলেও এর জন্য খুব বেশি কার্যকরী ভ্যাক্সিন নেই। এই ব্যাপারে আজকাল অনেক উদ্যোগই নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। চলছে বিশাল পরিসরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ভ্যাক্সিন তৈরির উদ্যোগগুলো মূলত এইডস প্রতিরোধমূলক বা কোষের ভেতর লুকিয়ে থাকা এইচআইভি বের করার অভীষ্টে পরিচালিত হয়ে থাকে।

Image Source: el.gr

এইচআইভি বা এইডসের জন্য কোনো স্বীকৃত ভ্যাক্সিন নেই। কিন্তু বিজ্ঞানীরা পূর্বের যেকোনো সময়ের চাইতে এখন এইডসের একটি কার্যকরী ভ্যাক্সিন তৈরির অনেক বেশি কাছাকাছি রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৯৬ সালের পর থেকে এখন অবধি এইচআইভি সংক্রমণের হার ৪৭% কমে এসেছে, কিন্তু সেই সাথে গত বছর নতুন করে বিশ্বজুড়ে ১.৮ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতি বছর প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে চতুর্থ বৃহত্তম ঘাতক এইডস। পৃথিবীর কোথাও এই এইচআইভি নিয়ন্ত্রণের ধারেকাছে নেই। যদিও এইচআইভির চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই কার্যকরী উপযোগিতা পেয়েছেন বা পাচ্ছেন, কিন্তু যেকোনো মুহূর্তে যে এই ভাইরাস ভয়ানকভাবে প্রত্যাবর্তন করতে পারে, তারও যথেষ্ট নিদর্শন পাওয়া গেছে। বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে প্রচলিত এইডসের ওষুধগুলোর প্রতি এইচআইভির ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধ প্রবণতা, সাহারা অঞ্চলে জনসংখ্যা বিষ্ফোরণ এবং অপর্যাপ্ত জনস্বাস্থ্য সম্পদ, এ সবকিছুই একটি দ্বিতীয় এইডস মহামারীর দিকেই দিকনির্দেশ করছে।

ভ্যাক্সিন কী?

ভ্যাক্সিনের কাজ হলো কোনো জীবাণুকে পরাস্ত করার জন্য আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার হাতে সঠিক অস্ত্র তুলে দেওয়া। ভ্যাক্সিন মূলত শরীরের জন্য একটি প্রশিক্ষণমূলক ব্যাপার। এটি শরীরকে রোগ-জীবাণুর মুখোমুখি দাঁড় না করিয়েই তাদের সাথে লড়াই করার পদ্ধতি শেখায়। কোনো রোগের ভ্যাক্সিন তৈরি করা হয় সেই রোগেরই জীবাণু দ্বারা। তবে জীবাণুটি হয় মৃত বা দুর্বল, অর্থাৎ রোগ সৃষ্টি করতে অক্ষম। এই জীবাণুগুলো শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথে তৎপর হয়ে ওঠে শরীরের অতন্দ্র প্রহরী ‘শ্বেত রক্ত কণিকা’। শ্বেত রক্ত কণিকায় রয়েছে ম্যাক্রোফেইজ, বি লিম্ফোসাইট বা বি-সেল, আর টি লিম্ফোসাইট বা টি-সেল।

ম্যাক্রোফেইজের কাজ হলো জীবাণুগুলোকে ধরে গিলে ফেলা। এরপরে জীবাণুদের অংশবিশেষ অ্যান্টিজেনগুলো রক্তে রয়ে যায়। এসব অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অ্যান্টিবডি তৈরি করে বি-লিম্ফোসাইট, যা অ্যান্টিজেনগুলোকে আক্রমণ করে। টি-লিম্ফোসাইট বা টি-সেলগুলো শ্বেত রক্তকণিকার স্মৃতিভান্ডার হিসেবে কাজ করে। এরা পরবর্তীতে একই জীবাণুর সম্মুখীন হলে স্মৃতি ব্যবহার করে সেটিকে ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি করতে নেমে যায়।

দেহের অতন্দ্রপ্রহরী শ্বেত রক্তকণিকা; Image Source: infoletter.co

এইচআইভি’র ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিন তৈরির সমস্যা

দুঃখজনকভাবে, এইচআইভি বা হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস অতি বেশি পরিমাণে অভিযোজনক্ষম ও চালাক। এটি সরাসরি টি-সেলগুলোকেই আক্রমণ করে। টি-সেলের প্রোটিনগুলোকে ব্যবহার করে এরা বংশবৃদ্ধি করে। ফলে টি-সেলগুলো একে একে ধ্বংস হতে থাকে। দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটিই এভাবে ভেঙে পড়ে। তাছাড়া এই ভাইরাস প্রয়োজন অনুযায়ী এর উপাংশগুলো পরিবর্তন করে ভোল পাল্টে ফেলতে পারে। ফলে একে চেনা বা খুঁজে বের করা মুশকিল হয়ে পড়ে।

সহজ নয় এই রোগের ভ্যাক্সিন তৈরি করা; Image Source: bbc.co.uk

এই ভাইরাসের গঠনগত ও মানবদেহের সাথে মিথষ্ক্রিয়ার ধরনগত কারণেই এর ভ্যাক্সিন তৈরির উদ্যোগগুলো যথেষ্ট সফল হয়নি। এসব উদ্যোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি উদ্যোগ হলো ‘RV144 HIV Trial’। ২০০৯ এ থাইল্যান্ডে এই ভ্যাক্সিনটির পরীক্ষণ চালানো হয়েছে। এই ভ্যাক্সিনটি যথেষ্ট নিরাপদ ও সহনক্ষম ছিল, কিন্তু এর কার্যকারিতা ছিল মধ্যম মানের। এটি এইচআইভি সংক্রমণের হার ৩১.২% কমিয়ে আনে। এই পরীক্ষণটি যদিও সফল ছিল না, কিন্তু এর মাধ্যমে পরীক্ষণের পরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সংশ্লেষণ করে প্রতিরোধ ক্ষমতা ও প্রতিরোধ ক্ষমতাহীনতার সাথে সম্পর্কিত সংকেতসমূহ পাওয়া যায়। আরও ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেবার ক্ষেত্রে এগিয়ে দিয়েছে এই পরীক্ষণ। ইন্টারন্যাশনাল এইডস ভ্যাক্সিন ইনিশিয়েটিভ (IAVI) এর মানব রোগ-প্রতিরোধবিদ্যার নির্বাহী পরিচালক ড. জিল গিলমোর বলেন, “নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে মিলে আমাদের পরিকল্পনা আজ অনেক বেশি বিচিত্র ও বলিষ্ঠ।” এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস থামাতে কার্যকরী ভ্যাক্সিন ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাভিত্তিক মধ্যস্থতা তৈরি করার সম্ভাবনা ও সুযোগ এর সাথে অনেক বেড়ে গেছে।

এইচআইভি ভ্যাক্সিনের প্রকারভেদ

এইচআইভি ভ্যাক্সিন মূলত দুই প্রকার। একটি হলো প্রিভেন্টিভ বা প্রতিরোধমূলক ভ্যাক্সিন, অর্থাৎ এইচআইভি নেগেটিভ মানুষদের জন্য। চিরাচরিত উপায়ে মৃত এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করিয়ে অ্যান্টিবডি উৎপাদনের মাধ্যমে শরীরকে পূর্বে থেকে তৈরি করে রাখা। আর দ্বিতীয়টি হলো থেরাপিউটিক ভ্যাক্সিন, যা সংক্রমিত দেহে সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং রোগের বিস্তারকে প্রলম্বিত করবে। এই ভ্যাক্সিনগুলো শরীরের সংক্রমিত হওয়া কোষগুলো খুঁজে বের করে এবং তাদের কপি বা প্রতিলিপি তৈরি করতে বাধা দেয়।

অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো আসবে এইডসের কার্যকরী ভ্যাক্সিন; Image Source: health138c.com

ভ্যাক্সিন পরীক্ষণ প্রক্রিয়া

এইচআইভি ভ্যাক্সিন প্রাথমিকভাবে গবেষণাগারে ও বিভিন্ন প্রাণীর উপর প্রয়োগ করে পরীক্ষা করা হয়। মানুষের উপরে চূড়ান্ত প্রয়োগের আগে বহু বছরের পরীক্ষানিরীক্ষার দরকার পড়ে ভ্যাক্সিনগুলোর। একটি এইচআইভি ভ্যাক্সিনের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা যাচাই করা হয় তিনটি ধাপে। প্রথম ধাপটি চলে ১২ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ চলে ২ বছর। আর তৃতীয় ধাপটি চলে ৩ থেকে ৪ বছর অবধি। প্রতিটি ধাপে সময়ের সাথে সাথে পরীক্ষণের জন্য এইচআইভি নেগেটিভ মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়।

এইচআইভি’র এমন বেশ কিছু ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। চলতি বছরের শুরুতে এমন একটি ভ্যাক্সিনের মানবদেহের উপর ফেজ- ওয়ান পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দেয়া হয়। এই পরীক্ষণটি ২০১৯-এ সম্পন্ন করা হবে। এই নির্দিষ্ট ভ্যাক্সিনটি ভাইরাসের দেহে ফিউশন পেপটাইডকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে। পেপটাইড হলো অ্যামিনো এসিডের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিকল। এই পেপটাইডগুলো ব্যবহার করে এইচআইভি মানবকোষে প্রবেশ করে। এছাড়া বর্তমানে একটি ভ্যাক্সিন ফেজ-টু পরীক্ষণের মধ্যে আছে, যা ২০২২ সাল পর্যন্ত চলবে। RV144 ভ্যাক্সিনটিরও নিরীক্ষণ চলছে ২০১৬ সাল থেকে। এটি চলবে ২০২১ এর মাঝামাঝি অবধি।

HIV এর অঙ্গসংগঠন; Image Source: twitter.com

জনসচেতনতার অভাব, সরকারী উদ্যোগে প্রচারণার অভাব, ধর্মীয় সংকীর্ণতাবোধ প্রভৃতি কারণে এইচআইভি ও এইডস সম্পর্কে জনমনে ভ্রান্তি ও অজ্ঞতার প্রভূত আধিক্য বিরাজমান। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোতে এইডস সংক্রমণের হার বেশি। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, দারিদ্র, শিক্ষার অভাব, চিকিৎসা সেবার দুর্লভতা প্রভৃতি কারণ এর জন্য দায়ী। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে খুব শীঘ্রই হয়তো এইচআইভি’র জন্য কার্যকরী একটি ভ্যাক্সিন মানুষ বানিয়ে ফেলতে সমর্থ হবে। কিন্তু তাকে সর্বস্তরে সহজলভ্য করাটাই হবে মুখ্য বিবেচ্য। নগর পুড়লে যেমন দেবালয় এড়ায় না, ঠিক তেমনি এই মরণব্যাধির সংক্রমণ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে না ঠেকালে কোনো ভ্যাক্সিনেরই প্রকৃত কার্যকারিতা আসবে না।

1190 ভিউ

Posted ২:৫৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com