কক্সবাংলা ডটকম(৩০ জানুয়ারি) :: দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে থাকা করোনা ভাইরাসকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। জেনেভায় স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম গ্রেবিয়াসিস।
তিনি বলেন, ‘এই ঘোষণার মাধ্যমে দুর্বল স্বাস্থ্য সেবার দেশগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া এবং তাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে’।.
চীনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া শুরু করলেও এক সপ্তাহ আগেও গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করতে অস্বীকৃতি জানায় ডব্লিউএইচও। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, তারপরে চীনে হাজার হাজার মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে মানুষের শরীর থেকে অপর জন আক্রান্ত হওয়ার স্পষ্ট নজির দেখা গেছে।
এছাড়াও সংস্থাটির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই ভাইরাস সংশ্লিষ্ট কারণে মারা যাওয়া প্রতি আট জনের মধ্যে এক জনেরই মৃত্যু হয়েছে ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনে হুবেই প্রদেশের বাইরে। ফলে আগের সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ কমিটি।
বৃহস্পতিবার গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণার কারণ হিসেবে ডব্লিউএইচও প্রধান অ্যাডানোম গ্রেবিয়াসিস বলেন, মূলত চীনে যা ঘটছে সে কারণে নয় বরং অন্য দেশে যা ঘটছে সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে চীনের সবগুলো প্রদেশ ছাড়াও অন্তত ২০টি দেশে শনাক্ত হয়েছে করোনা ভাইরাস। চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার নাগাদ ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭৩৬ জন। সারা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার একশো ছাড়িয়েছে। গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করলেও বৃহস্পতিবার ভাইরাস মোকাবিলায় চীনের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম গ্রেবিয়াসিস।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল ইমার্জেন্সি আইনগতভাবে বাধ্য কোনও ঘোষণা নয়। তবে একে জনস্বাস্থ্য সংকটের আন্তর্জাতিক উদ্বেগ হিসেবে দেখা হয়। এর মাধ্যমে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে,পরিস্থিতিকে মারাত্মক হিসেবে বিবেচনা করছে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্বের শীর্ষ পরামর্শক সংস্থাটি। এই ঘোষণার মাধ্যমে সরকারগুলো নিজ নিজ দেশের সীমান্ত বন্ধ, ফ্লাইট বাতিল, বিমানবন্দরে আগতদের পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়। এছাড়া এই ঘোষণার মাধ্যমে যে কোনও দেশই তহবিল বরাদ্দের জরুরি আবেদন জানাতে পারে। তবে করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা কম বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ চীন, জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম নিজ নিজ দেশে এই ভাইরাস ঠেকানোর খরচ বহনে সক্ষম।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই ৩৪১ জনকে এনে প্রথমে আশকোনার হজ ক্যাম্পে রাখা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখভাল করছে। আমাদের যেভাবে বলা হচ্ছে সেভাবেই প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।’
সে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন ইতিমধ্যে কাজে নেমেছেন। সংস্থাটি এই সঙ্কটে তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাচ্ছে।
মুশতাক হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আইইডিসিআর থেকে আমাকে শুক্রবার সকাল ৯টায় এয়ারপোর্টে যেতে বলা হয়েছে। সেখান থেকে আমরা হজ ক্যাম্পে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের দেশে আনার পর কোথায় রাখা হবে, কিভাবে রাখা হবে, সার্বিক বিষয় সরেজমিনে দেখার জন্য যেতে বলা হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, চীনের অনুমতি পেলে বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য উড়োজাহাজ তৈরি রাখা হয়েছে। তাদের আলাদাভাবে রাখতে হাসপাতালে বিশেষ আয়োজন করেছি। আনার পরে দায়িত্ব স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।
তবে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস চীনের সব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লেও দেশটিতে থাকা বাংলাদেশি কেউ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হননি বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। এরপর দেশটির সীমানা পেরিয়ে এই ভাইরাস বিশ্বের ১৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের বাইরে ৯১ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে চীনের বাইরে এ ভাইরাসে কারও মৃত্যুর তথ্য এখন পর্যন্ত আসেনি।
এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এখন পর্যন্ত চীনে ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে ও আক্রান্ত হয়েছেন সাত হাজার ৭৭১ জন।
Posted ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta