আব্দুল কুদ্দুস রানা
(৯ এপ্রিল) :: আসুন, মহিমান্বিত এ রজনীতে হাততুলি মহান আল্লাহর কাছে, থাকি করোনামুক্ত। অদৃশ্য শত্রু করোনাাভাইরাস প্রতিদিনই কেড়ে নিচ্ছে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ। পৃথিবীর শক্তিশালী, ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো ভাইরাস প্রতিরোধে তেমন কিছুই করতে পারছে না । করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পযর্ন্ত ২০৯ টি দেশ ও অঞ্চলে মারা গেছে প্রায় ৮৯ হাজার মানুষ। আক্রান্ত ১৫ লাখের বেশি মানুষ । সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে প্রাণহানি আর আক্রান্তের সংখ্যা। করোনার হানায় বিপর্যস্ত আজ গোটাবিশ্ব। জনমনেও চরম আতঙ্ক আর উদ্বেগ- মৃত্যুর এই মিছিল থামবে কখন ?
করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার। মারা গেছে ১৫ হাজার ৭৮৮ জন।স্পেনে আক্রান্ত ১ লাখ ৪৮ হাজার ২২০ জন। মারা গেছে ১৪ হাজার ৭৯২ জন। ইতালিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪২২ জন। মারা গেছে ১৭ হাজার ৬৬৯ জন।
আর বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছে ২১৮ জন। মারা গেছে ২০ জন। সংক্রমণ যেন দ্রুত ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সরকার কক্সবাজারসহ দেশের ছয়টি জেলা ও রাজধানীর ৫৪টি এলাকাকে ‘লকডাউন’ করেছে।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৮ মার্চ। এক মাসের বেশি সময়ের ব্যবধানে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার দুটোই বেড়ে চলেছে। আমরা সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে অবস্থান করছি।
চতুর্থ স্তরে পৌঁছানোর অর্থ হলো- করোনা সংক্রমণ ব্যাপক জনগোষ্টীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া। এসময় করোনায় আক্রান্ত হবে অগনিত মানুষ। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে। এই ক্রান্তিকাল মোকাবিলার শক্তি ও প্রস্তুতি যেন সরকারের থাকে, আজকের পবিত্র শবে বরাতের মহান রজনীতে আমাদের প্রত্যাশা সেটাই ।
গত ১ মার্চ থেকে কক্সবাজারে এসেছে ২ হাজার ২ জন বিদেশফেরত ব্যক্তি। এরমধ্যে ১ হাজার ১২১ জনের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়। বিদেশফেরত অবশিষ্ট ৮৮১ জনকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা কোথায় আছেন ? কীভাবে আছেন ? কেউ জানে না।
উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে মিয়ানমারের সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। সেখানেও লকডাউন চলছে। জেলায় সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্প ও মানবিক সহায়তায় কাজ করছেন প্রায় দুই হাজার বিদেশি। ঘনবসতি এবং নানা কারণে পযটন রাজধানী কক্সবাজার করোনা ঝুঁকিতে। সুখবর হচ্ছে-কক্সবাজারে এখন পযর্ন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত দুইজন চিকিৎসার পর সুস্থ্য হয়ে ওঠেছেন বলে জানানো হয়েছে।
কক্সবাজারের কেউ যেন করোনায় আক্রান্ত না হন-তার জন্য সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলতে হবে। ঘরে থাকতে হবে। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদেরও সচেতন করে তোলতে হবে।
বিলম্বে হলেও কক্সবাজার লকডাউন হয়েছে। লকডাউনের ক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকার কী হবে তাও ভাবতে হবে। কীভাবে তাদের কাছে খাবার ও সাহায্য পৌঁছানো যায়, সেই কৌশলও নিতে হবে জেলা প্রশাসনকে। যদিও জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে বাড়ি বাড়ি খাবার ও ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন।
বাংলাদেশে ২২ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ প্রায় চার কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন। করোনা সংকট হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে চলা এই দরিদ্র মানুষগুলোর আয়-রোজগারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। তাঁরা খেয়ে না খেয়ে, অনাহারে অর্ধাহারে জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের কারো জানা নেই-কতদিন ধরে চলবে এই সংকট ? ততদিন কীভাবে কাটবে দরিদ্র মানুষগুলোর জীবন ?
যত দিন করোনা সংকট থাকবে, তত দিন অভাবী মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারসহ সমাজের প্রভাবশালী, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের। তা না হলে দেশে প্রাণে বেঁচে থাকার আরেক যুদ্ধ শুরু হবে। তখন এলাকায় দেখা দিতে পারে চুরি ডাকাতি ছিনতাইসহ নানা অপরাধকর্ম।
করোনা অদৃশ্য ভাইরাস। চোখে দেখা যায় না। টিকাও তৈরি হয়নি। টিকা আবিস্কার করতে সময় লাগবে আরও ১২ থেকে ১৮ মাস। তাই আপাতত আমাদের সামাজিক দুরত্ব, বিচ্ছিন্নকরণ, সঙ্গনিরোধ ও অবরুদ্ধ থাকার বিকল্প নেই।
আজ পবিত্র শবে বরাত। মহিমান্বিত এক রজনী-লাইলাতুল বরাত । শবে বরাতের মধ্য দিয়েই শুরু হয় রমজান মাসের সিয়াম সাধনার প্রস্তুতি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ফজিলত ও বরকতের বিশেষ এই রাতটির জৌলুস থামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাই বলে মনের ঈমানীজোর এবং রাতের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেললে চলবে ?
এই রাতে মহান আল্লাহর দরবারে আমরা মুসলিম নর-নারীরা দুইহাত তুলে প্রার্থনা করবো- করোনা ভাইরাসের কবল থেকে যেন দেশ ও বিশ্বের মানুষ মুক্তি পান। করোনা সংক্রমণে আক্রান্তরা যেন দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন। করোনার হানায় যেন আর কারো মৃত্যু না হয়।
আসুন, ঘরে থাকি, নিরাপদে থাকি। করোনামুক্ত বাংলাদেশ গড়ি-এটাই হোক আজকের পবিত্র রজনীর অঙ্গীকার।
——————————
লেখক : আব্দুল কুদ্দুস রানা,
প্রথম আলো কক্সবাজার অফিস
Posted ৭:৩৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta