কক্সবাংলা ডটকম(২২ জুলাই) :: কভিড-১৯-এর বিস্তৃতি থামাতে এবং সম্ভাব্য লাখো মৃত্যু ঠেকাতে হলে জরুরি ভিত্তিতে একটি ভ্যাকসিন আমাদের খুব প্রয়োজন। সে পথে আমরা এখন এক ধাপ এগিয়েও গেছি। সোমবার আমরা ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের ডিজাইন করা ভ্যাকসিন সিএইচএডিওএক্স১ এনকভ-১৯-এর (যা এজেডডি১২২২ নামেও পরিচিত) ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রাথমিক ফলও প্রকাশ করেছি। এই ভ্যাকসিনের বিকাশে অক্সফোর্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
প্রাথমিক ডাটা বলছে, এটা নিরাপদ এবং একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা সব স্বেচ্ছাসেবীর মাঝে। যা আমাদের জানাচ্ছে, কার্যকর ভ্যাকসিন সম্ভবত আমাদের নাগালে চলে এসেছে।
এই ট্রায়ালে প্রথমবার মানুষকে করোনার ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। ৫৪৩ জন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ১৮-৪৪ বছর বয়সী মানুষকে সিএইচএডিওএক্স১ এনকভ-১৯ ভ্যাকসিনের একটি করে ডোজ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া আরো ৫৩৪ জনকে নিয়ন্ত্রিত ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছিল। এখানেও একই রকম অল্প প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যেখানে ইনজেকশন সাইটে লালচে ভাব ও মৃদু ব্যথা ছিল।
স্বেচ্ছাসেবীদের ইমিউন প্রতিক্রিয়া আছে (অ্যান্টিবডি ও টি-সেল উভয় স্তরেই) যা অন্তত ১২ মাস ধরে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং এটাও দেখা হবে যে তাদের মাঝে কভিড-১৯ বিকশিত হয়েছে কিনা। পরীক্ষার প্রাথমিক তথ্য পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে ভ্যাকসিনটি ২৮ দিনের মাঝে অ্যান্টিবডি রেসপন্স তৈরি করে।
এটি কোনো ব্যক্তি কভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পর যে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সে সঙ্গে ভ্যাকসিনটি এই সাহসও এখন সবাইকে দিচ্ছে যে এটি বেশির ভাগ মানুষকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সমর্থ হবে। এছাড়া ১০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ‘বুস্টার’ ডোজও দেয়া হয়েছে। যা অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়াকে আরো এক ধাপ বাড়িয়ে দেবে এবং এই গ্রুপের শতভাগ রক্তের নমুনা পরীক্ষাগারের সেটিংয়ে কভিড-১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
এই ভ্যাকসিন টি-সেলকে প্ররোচিত করে, যা কিনা বিশেষভাবে সার্স-কোভ-২ কে চিনতে পারে, এটি সে ভাইরাস যা কিনা কভিড-১৯-এর জন্য দায়ী। এটি অ্যান্টিবডি ও টি-সেলের প্রতিক্রিয়া দেখতে উৎসাহী। যৌথভাবে এটাই সঠিক ধরনের ইমিউন প্রতিক্রিয়া, যা কিনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়।
গুরুত্বপূর্ণভাবে, ভ্যাকসিন গ্রহণযোগ্য সুরক্ষা প্রোফাইল প্রদর্শন করেছে। এখানে ভ্যাকসিন দ্বারা প্ররোচিত কোনো মারাত্মক ঘটনা নেই, কোনো বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই।
ইঁদুর ও রেসাস মাকাক বানরদের ওপর উৎসাহব্যঞ্জক পরীক্ষার পর আমরা মানুষের ওপর ভ্যাকসিনের টেস্টিংয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। এর ফলে যা দেখা যায় তা হলো ভ্যাকসিনটি নিরাপদ ছিল এবং শক্তিশালী ইমিউন প্রতিক্রিয়া প্ররোচিত করে।
তাত্পর্যপূর্ণভাবে, মানুষ প্রাকৃতিকভাবে যে পরিমাণ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়, বানরের শরীরে তার চেয়ে বেশি মাত্রায় সার্স-কোভ-২-এর ডোজ দেয়ার পরও এ ভ্যাকসিনের কারণে তারা মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা পেয়েছে।
এই ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে?
ভ্যাকসিনগুলো রোগজীবাণু হিসেবে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে শনাক্ত ও লড়াই করার জন্য ইমিউন সিস্টেমকে তৈরি করে। ভ্যাকসিনগুলো এটি করে রোগজীবাণুর সহজেই শনাক্তযোগ্য অংশের সঙ্গে ইমিউন সিস্টেমকে উপস্থাপন করার মাধ্যমে। যা ইমিউন সিস্টেম মনে রাখতে পারে, ফলে এটা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এর ফলে ভবিষ্যতে একই ধরনের রোগজীবাণুকে এটি মোকাবেলা করতে পারে।
এটিসহ সার্স-কোভ-২ প্রতিরোধে তৈরি হতে যাওয়া বেশির ভাগ ভ্যাকসিন মনোযোগ দেয় স্পাইক প্রোটিনকে উপস্থাপন করতে, যা ভাইরাসের পৃষ্ঠকে সজ্জিত করে। এটা সেই প্রোটিন যে কিনা তাদের পৃষ্ঠে অণু দ্বারা আবদ্ধ হয়, যাকে বলা হয় এসিই২, যা ভাইরাসকে মানব কোষে প্রবেশ করতে দেয়।
ভ্যাকসিন ডিজাইনের জন্য বিস্তৃত পদ্ধতি রয়েছে; সিএইচএডিওএক্স১ এনকভ-১৯ যা কিনা ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন নামে পরিচিত।
এই ভ্যাকসিন তৈরি করতে বিভিন্ন নিরীহ ভাইরাসের (যাকে সিএইচএডিওএক্স১ বলা হয়) কণাকে সার্স-কোভ-২ ডিএনএর অংশবিশেষের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যা কিনা কোষকে চালিত করে স্পাইক প্রোটিন তৈরি করার দিকে।
যখন এই সিএইচএডিওএক্স১-এর কণা মানব কোষকে সংক্রমিত করে, করোনাভাইরাসের ডিএনএ তখন প্রকাশিত হয় এবং ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়ায় স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে। গুরুত্বপূর্ণভাবে ভ্যাকসিনের সুরক্ষার জন্য, ভাইরাল ভেক্টর প্রতিলিপি তৈরি করতে ও সংক্রমণ ঘটাতে পারে না।
সিএইচএডিওএক্স১ ভাইরাল ভেক্টর আটটি ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহূত হয়েছে, যা এরই মধ্যে অন্যান্য রোগের জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে। যেখানে মার্সও অন্তর্ভুক্ত।
এখন কী হবে?
আমাদের শতভাগ নিশ্চিতভাবে দেখাতে হবে যে ভ্যাকসিনটি কার্যকর। এর ফলে উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রিত ভ্যাকসিন গ্রুপের চেয়ে সিএইচএডিওএক্স১ এনকোভ-১৯ ভ্যাকসিনেটেড গ্রুপ কম করোনা (আদর্শিকভাবে শূন্য) কেস প্রদর্শন করবে।
যুক্তরাজ্যে সংক্রমণের হার হ্রাস দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য দারুণ সুখবর। কিন্তু এতে অনেক তারতম্য ঘটতে পারে। নিয়ন্ত্রিত ভ্যাকসিন গ্রহণ করা গ্রুপে যদি কভিড-১৯-এর কোনো কেস না থাকে তবে সেই গ্রুপকে ভ্যাকসিন নেয়া গ্রুপের সঙ্গে তুলনা করা অর্থহীন।
ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত করা ভবিষ্যতে সম্ভব হতে পারে (নৈতিক প্রভাব সতর্কতার সঙ্গে বিবেচিত হওয়ার পর), কিন্তু বর্তমানে তা অনুমোদিত নয়।
এ কারণে যুক্তরাজ্যের প্রায় ১০ হাজার জনের মাঝে দ্বিতীয় ট্রায়াল শুরু হয়েছে এবং আরো ট্রায়াল ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সম্পন্ন হবে, যেখানে সংক্রমণের হার অনেক বেশি।
যুক্তরাজ্যের বিস্তৃত ট্রায়াল শিশু ও বৃদ্ধদেরও অন্তর্ভুক্ত করবে—এই বয়সের গ্রুপগুলোর মাঝে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নির্ণয় করার জন্য। ৭০-এর বেশি বয়সী লোকদের ইমিউন প্রতিক্রিয়া সাধারণত অল্প বয়স্কদের চেয়ে কম থাকে।
ভ্যাকসিন প্ররোচিত ইমিউন প্রতিক্রিয়া অন্তত এক বছর সময় ধরে অনুসরণ করা জরুরি। এতে বুস্টার ইনজেকশন প্রয়োজনীয় কিনা তা হিসাব করা যাবে।
সবশেষে, যদি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়, তখন কোটি কোটি ডোজ তৈরির প্রয়োজন হবে গোটা বিশ্বে সরবরাহ করার জন্য। এ উদ্দেশ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এরই মধ্যে বড় আকারে ভ্যাকসিন উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে। তাদের লক্ষ লাখো ডোজ এ বছরের শেষ নাগাদ ডেলিভারি দেয়া।
স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশ, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য চুক্তিগুলোও এখন তৈরি হচ্ছে।
রেবেকা অ্যাশফিল্ড: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউটের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার
এবিসি নিউজ থেকে অনূদিত
Posted ১:১২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২২ জুলাই ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta