কক্সবাংলা ডটকম(২৩ এপ্রিল) :: প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে উঠে আসছে দেশে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতার চিত্র। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাড়ানো হচ্ছে হাসপাতালের সংখ্যা। নমুনা পরীক্ষার সেবা দেশব্যাপী সম্প্রসারিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এরপরও দিন যতই গড়াচ্ছে পরিস্থিতি যতই জটিল হচ্ছে। আর স্পষ্ট হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা স্বাস্থ্য খাতের প্রতি সরকারের অবহেলা। একই সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে এ খাতে দুর্নীতির চিত্র। মহামারির চরম মুহূর্তেও থেমে নেই স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি।
জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কোভিড-১৯ আলো ফেলেছে দেশের স্বাস্থ্য খাতের দৈন্যদশার ওপর। বাজেটে এ খাতে কম বরাদ্দ, গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্যের দিকটি যে দিনের পর দিন উপেক্ষিত হয়ে আসছে তা এখন স্পষ্ট। এছাড়া সীমাহীন দুর্নীতির কারণে এ খাতের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে সেটিও আবার সামনে এসেছে। করোনার এই দুর্যোগেও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ও এন-৯৫ মাস্ক নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে, যা স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনার চিত্রই সামনে এনেছে।
তারা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে এ খাতের বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে কমছে। স্বাস্থ্য খাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশই সবচেয়ে কম বরাদ্দ রাখে। কিন্তু এ দেশে স্বাস্থ্য খাতে বাড়তি বরাদ্দ অন্য দেশগুলোর তুলনায় বেশি জরুরি।
সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে থাকা স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা অবশ্য বারবারই দাবি করেছেন, পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম বাজেট নিয়েও বাংলাদেশের চিকিৎসক ও নার্সরা ভালো কাজ করে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯ আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দৈন্যদশার নানা দিক তুলে ধরেছে বলে মনে করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক।
তিনি বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ রাখে। বরাদ্দকৃত অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হয় অবকাঠামো নির্মাণ ও ক্রয় খাতে। এখানেও দুর্নীতি ও অর্থের অপচয় হয়। বরাদ্দের ক্ষুদ্র অংশই জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশের জনগোষ্ঠীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা ওই বরাদ্দ দিয়ে সম্ভব নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতের দিকে সুনজর দেয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। আর এ খাতের উন্নয়নে সরকারি সেক্টরকেই যে এগিয়ে আসতে হবে তা আবারো প্রমাণিত হয়েছে। এ খাতের বেসরকারিকরণ কিংবা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কোনোটাই কাজে আসবে না।
অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেকটা সময় পাওয়ার পরও তা কাজে লাগাতে পারেনি। জনস্বাস্থ্যের এই দুরবস্থা একদিনে হয়নি। বহু বছরের অবহেলা এর জন্য দায়ী। সরকার বাজেটের সবচেয়ে কম ব্যয় হয় জনস্বাস্থ্যে। পার্শ্ববর্তী ভারতে এ খাতে ব্যয় হয় ২ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। কোনো কোনো দেশ এ খাতে ব্যয় করে ৬ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত।
আর আমাদের দেশে জনস্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয় শূন্য দশমিক ৬ থেকে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। পৃথিবীর কোনো দেশ এ খাতে এত কম অর্থ ব্যয় করে না। এ কারণেই জনস্বাস্থ্যের এমন ভঙ্গুর অবস্থা। এত কম বরাদ্দের মধ্যেও দুর্নীতি থাবা বসায়। তাই এ খাত থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশাও করতে পারি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের এক নেতা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ঠিকাদার, পিয়ন- সবাই এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। পর্দা, বই ও বালিশকাণ্ডের ঘটনা খুব বেশি দিন আগের নয়। কিছুদিন আগে শুনলাম ঢাকার এক নবনির্মিত হাসপাতালে করোনা মোকাবিলায় নতুন এক আইসিইউ স্থাপন করা হবে। জরুরিভাবে টেন্ডার দিয়ে ৪০০ টাকার জিনিস কেনা হচ্ছে ১২ হাজার টাকায়। পিপিই, মাস্ক কেনার ক্ষেত্রেও আমরা দুর্নীতি হতে দেখলাম। এসব দুর্নীতির সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ মহলেরও সখ্য রয়েছে সেই খবর গণমাধ্যমে এসেছে।
Posted ৪:২৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta