শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কী ঘটেছিল সেদিনের ‘বিডিআর’ দরবারে

মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৭
285 ভিউ
কী ঘটেছিল সেদিনের ‘বিডিআর’ দরবারে

কক্সবাংলা ডটকম(২৮ নভেম্বর) :: দিনটি ছিল বিডিআরের (বাংলাদেশ রাইফেলস্) বার্ষিক দরবারের দিন। অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল ৯টায় সদর দফতরের দরবার হলে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, উপ-মহাপরিচালক (ডিডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএ বারী, বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাসহ প্রায় দুই হাজার ৫৬০ জন সদস্য।

বিশেষ আদালতে দেয়া সাক্ষীদের বক্তব্য ও তদন্ত কর্মকর্তাদের বক্তব্য থেকে জানা গেছে, সেদিন সকাল ৯টার দিকে কোরআন তেলাওয়াত ও তরজমার পর তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক শাকিল আহমেদ উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দরবার শুরু করেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মঞ্চে ডিজির পাশ থেকে ১৩ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সিপাহি মাইন স্টেজে উঠে ডিজির দিকে অস্ত্র তাক করে ধরেন।

এ সময় ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সিপাহি কাজল তার পেছনে পেছনে আসে। এ পরিস্থিতিতে ক’জন সেনা কর্মকর্তা সিপাহি মাইনকে ধরে ফেললে সে মাটিতে পড়ে যায়। এরপর সিপাহি কাজল দরবার হলের গেট দিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন দরবারে বসা সৈনিকদের মধ্য থেকে কিছুসংখ্যক সৈনিক সমস্বরে ‘জাগো’ বলে উচ্চস্বরে চিৎকার দিয়ে ওঠে। শুরু হয় বিদ্রোহ।

এ চিৎকার শুনে দরবারের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ডিএডি, জেসিও, এনসিও ও বিভিন্ন পদবির সৈনিক দাঁড়িয়ে যায়। তখন ডিজি সবাইকে বলেন, ‘আপনারা সবাই বসুন, কেউ বাইরে যাবেন না, আমি আপনাদের সব কথা শুনব।’ ওই সময় দরবার হলের বাইরে গুলির শব্দ হলে উপস্থিত সেনা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সৈনিক উঠে বিভিন্ন দিকে জানালার কাচ ভেঙে যে যেদিকে পারে বের হয়ে যায়। সৈনিকরা বেরিয়ে যেতে শুরু করলে ডিজি মাইকে বলেন, ‘সব পর্যায়ের অধিনায়করা যার যার ইউনিটে গিয়ে পরিস্থিতি ও সৈনিকদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করুন।’

এরপর থেকেই দরবার হলের বাইরে থেকে গুলির আওয়াজ আসতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে লাল-সবুজ রঙের কাপড় দিয়ে নাক-মুখ বাঁধা বিদ্রোহী জওয়ানরা দরবার হল ঘিরে গুলি শুরু করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্রোহীরা কর্মকর্তাদের দরবার হল থেকে সারিবদ্ধভাবে বের করে আনে।

ডিজির নেতৃত্বে কর্মকর্তারা দরবার হলের বাইরে পা রাখা মাত্র মুখে কাপড় ও মাথায় হলুদ রঙের হেলমেট পরা চারজন ডিজিকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করেন। বিদ্রোহীরা বিডিআরের তৎকালীন ডিজিসহ ৫৭ জন পদস্থ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। বিদ্রোহীদের হাতে ৯ জন বিডিআর জওয়ানসহ একজন সেনা সদস্যও নিহত হন। এ ছাড়া ছাত্র, দোকানি মিলিয়ে মারা যায় আরও সাতজন। সব মিলিয়ে হত্যার শিকার হন ৭৪ জন।

ডিজিকে হত্যার পর থেকে পিলখানার ভেতরে ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট ছাড়া হলে ওই হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন বিদ্রোহীরা। এ সময় প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে বিদ্রোহীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। তারা মাইকে জানায়, আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পিলখানায় আসতে হবে।

আলোচনার মাধ্যমে বিদ্রোহীদের নিরস্ত্রীকরণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বেলা দেড়টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সাদা পতাকা নিয়ে পিলখানার ৪ নম্বর ফটকের সামনে যান তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও হুইপ মির্জা আজম।

বিকাল পৌনে ৪টার দিকে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে ডিএডি হাবিব, ডিএডি নাসির, ডিএডি রহিম, ডিএডি জলিল, সিপাহি সেলিম রেজা, সিপাহি মনির, সিপাহি মনিরুজ্জামান, হাবিলদার রফিকসহ ১২-১৪ জন বিডিআরের একটি দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন বাসভবন যমুনায় আসেন।

প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনার জন্য আগত বিডিআর সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমরা আত্মসমর্পণ করো এবং অফিসার ও পরিবারদের এখনই ছেড়ে দাও। এখনই পিলখানায় ফোন করে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দাও। বিদ্রোহীদের তিন বাহিনীর প্রধানদের দেখিয়ে বলেন, তিন বাহিনীর প্রধানরা এখানে আছেন। তোমরা যদি আত্মসমর্পণ না করো, তাহলে তারা কঠিন অ্যাকশনে যাবে।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে নানক বিদ্রোহীদের উদ্দেশে জানান, প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন এবং অস্ত্র সমর্পণ করে ব্যারাকে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন।

কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণাকে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবি করেন বিদ্রোহী জওয়ানরা। তারা আগের মতো উচ্ছৃঙ্খল আচরণ শুরু করেন। সন্ধ্যায় পিলখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের লাশ মাটিতে পুঁতে ও বিভিন্নভাবে সরিয়ে ফেলা হয়।

২৬ ফেব্রুয়ারি বেলা আড়াইটায় টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণ করে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পিলখানায় সেনা অভিযানের ঘোষণা শুনে বিকালে অনেক বিডিআর সদস্য সীমানা প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায়। আর যারা সেখানে ছিল পুলিশ সদস্যরা তাদের বিডিআর হাসপাতালে নিয়ে আটকে রাখে।

পিলখানায় এ বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। শুরু হয় বিডিআর পুনর্গঠনের কাজ। পরবর্তীকালে বিডিআরের নাম, পোশাক, লোগো ও সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করা হয়। বিডিআরের নাম বদলে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয় মৃত্যুদণ্ড।

বিদ্রোহের ঘটনায় ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর বিচারিক আদালতে ৬৩৭ জনের রায় দেয়া হয়। রায়ে ৬৯ জনকে খালাস দিয়ে বাকিদের মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছিল। পরে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ৬০৩ জন। ২৬ ও ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। এছাড়া যাবজ্জীবন দেয়া হয় ১৮৫ জনকে। আর খালাস পেয়েছেন ৪৯ জন। এছাড়া মামলা চলাকালে মারা যায় ৬ আসামি।

বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ এ রায় দেন।

285 ভিউ

Posted ২:২২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com