বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কুতুবদিয়ায় “দ্বীপ রক্ষা বাঁধ কস্তুরা” বিষয়ক সেমীনার

বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০১৭
1091 ভিউ
কুতুবদিয়ায় “দ্বীপ রক্ষা বাঁধ কস্তুরা” বিষয়ক সেমীনার

এম.নজরুল ইসলাম,কুতুবদিয়া(১৮ মে) :: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ এর উদ্যোগে ১৮ মে কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী দ্বীপ কুতুবদিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে “কুতুবদিয়ার রক্ষা বাঁধ কস্তুরা” শীর্ষক সেমিনার। একই সাথে অনুষ্ঠিত হয় কুতুবদিয়া উপজেলার  শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে “চল সাগরকে জানি” শীর্ষক সমুদ্র বিষয়ক সচেতনতামূলক “সমুদ্র সাক্ষরতা অভিযান” বা ওশান অলি¤িপয়াড।

“চল সাগরকে জানি” শীর্ষক প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞান প্রদর্শনী ও ওশান অলি¤িপয়াড এর উদ্বোধন করেন, কক্সবাজার-২  আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আশেক উল্লাহ রফিক ।

“কুতুবদিয়া রক্ষায় কস্তুরা বাঁধ” শীর্ষক সেমিনারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজের পরিচালক এম জাহেদুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক জনাব আলী হোসেন, এডিসি শিক্ষা ও আইসিটি, কুতুবুদিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার জনাব সুজন চেšধুরী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান  এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী , সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীসহ এলাকার জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকামন্ডলী।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজের অধ্যাপক  ড. এম. শাহাদাত হোসেন  মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজের সহকারী অধ্যাপক ও নেদারল্যান্ডস এর ডধমবহরহমবহ টহরাবৎংরঃু এর পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী ।

বক্তাগন তাদের বক্তব্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৈর্শি¦ক জলবায়ু পরিবর্তনে কুতুবদিয়া সহ বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী অন্যান্য  অঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়নে টেকসই, পরিবেশবান্ধব, জৈবপ্রকৌশল প্রযুক্তির দিকে জোর দেন। গবেষক মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী সমুদ্রের ভাঙন ঠেকাতে কস্তুরা শামুক এর ব্যবহার এবং এর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা ও সুষ্ঠু বাস্তুতন্ত্রের জন্য কস্তুরার উপযোগিতার কথা তুলে ধরেন।

কক্সবাজার এলাকার উপকূলবর্তী কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, মহেশখালী, কলাতলী এবং হিমছড়ি অঞ্চল ব্যাপকভাবে ভাঙনের সম্মুখীন। প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের ফলে এই জনপদের অসংখ্য মানুষ হয়েছন গৃহহারা। তলিয়ে যা”েছ ফসলী জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মাছের খামার। রাস্তা-ঘাট সাগরে বিলীন হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে অসংখ্য মানুষ। বছরের পর বছর প্রচুর অর্থ ব্যয়ে গতানুগতিক প্রকৌশল ও প্রযুক্তি   যেমন কনক্রিট ব্লক, বালির বস্তা / টিউব অথবা মাটির বাঁধ নির্মাণ করে  ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহন করলেও তা ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় এর সুফল উপকূলের মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে না।

অন্যদিকে বিকল্প ও দীর্ঘমেয়াদী টেকসই কৌশল হিসেবে অপেক্ষাকৃত কম খরচে সৈকত পরিপুষ্টকরণ, ঢেউ প্রতিবন্ধক, বালিয়াড়িতে ঘাস রোপণ, ঝিনুক প্রাচীর নির্মাণ প্রভৃতি প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছেছ না। উপকুলীয় অঞ্চলের ভাঙনরোধ না করে দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব না। তাই প্রতিবেশ-বান্ধব স্থায়ী ও কার্যকর সমাধান এখন সময়ের দাবী।

উপকূলবাসীর প্রত্যাশিত সেই দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের লক্ষ্যে বিকল্প অভিযোজন কৌশল উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে কস্তুরা (ঙুংঃবৎ) কে কাজে লাগিয়ে   পদ্ধতি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। ইতোমধ্যেই নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া সহ বহু উন্নত দেশ এ ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। এছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন- চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, ভিয়েতনাম, লাওস, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশসমূহে খাদ্য হিসেবে কস্তুরা (ঙুংঃবৎ) বেশ জনপ্রিয়।

ঊপড়-বহমরহববৎরহম   পদ্ধতির প্রধান নিয়ামক ঊপড়ংুংঃবস বহমরহববৎং অথবা ইরড় ইঁরষফবৎং হচ্ছে একপ্রকার সামুদ্রিক জীব যারা বিভিন্ন ধরনের শক্ত অবলম্বনের সাথে সংযুক্ত হয়ে তৈরি করা বাসস্থানকে নিজেদের কর্মকা-ের মাধ্যমে আঁকার আকৃতি বৃদ্ধি করতে থাকে। এই সকল জীব তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ব্যবস্থার উপযোগী রূপান্তর ও বিকাশ ঘটাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে যা অন্যান্য জীবের বসবাসের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং ভাঙন প্রতিরোধের জন্য ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এবং সামুদ্রিক স্রোতের শক্তি  প্রশমনে সহায়তা করে। এ সমস্ত জীবের প্রাচীরসম বাসস্থান সমুদ্রের স্রোত, ঢেউ, জোয়ার-ভাটা এবং বালি ও পলির প্রবাহ  নিয়ন্ত্রন করে। কাজেই উপকূল সংরক্ষণ ও ভাঙন রোধে ঊপড়- বহমরহববৎরহম  পদ্ধতির সম্ভাবনা ব্যাপক।

তাছাড়া জীব বৈচিত্র্য  সংরক্ষণ, মাছের মজুদ বৃদ্ধি , খাদ্য উৎপাদন এবং সুষম প্রতিবেশ গঠনে ঊপড়-বহমরহববৎরহম  পদ্ধতি ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বর্তমানে উপকূলীয় ভাঙন এর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের দক্ষিন উপকূলীয় অঞ্চলের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত  সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপ কুতুবদিয়ায় ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ এর সহকারী অধ্যাপক জনাব মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী পিএইচডি গবেষণার লক্ষ্যে নেদ্যারল্যান্ডস এর গরহরংঃৎু ড়ভ ঊফঁপধঃরড়হ এবং গরহরংঃৎু ড়ভ ঋড়ৎবরমহ অভভধরৎং এর সহযোগিতায় ঘবঃযবৎষধহফং ঋবষষড়ংিযরঢ় চৎড়মৎধসসব (ঘঋচ) এর আওতায় ওহংঃরঃঁঃব ভড়ৎ গধৎরহব জবংড়ঁৎপবং ধহফ ঊপড়ংুংঃবস ঝঃঁফরবং (ওগঅজঊঝ) , ডধমবহরহমবহ টহরাবৎংরঃু  ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ   এর যৌথ উদ্যোগে  প্রাকৃতিক শক্তি নির্ভর  ঊপড়- বহমরহববৎরহম এর মাধ্যমে সমুদ্র ভাঙন রোধে টেকসই ও প্রতিবেশ বান্ধব জৈব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে  আসছেন।

ঊপড়ষড়মরপধষ ঊহমরহববৎরহম ভড়ৎ ঈড়ধংঃধষ চৎড়ঃবপঃরড়হ বিষয়ক এই গবেষণার অংশ হিসেবে মাঠ পর্যায়ের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, টেকসই জৈবিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও উপযোগিতা পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা যায়, উপকূলীয় অঞ্চল কস্তুরার বৃদ্ধির জন্য উপযোগী এবং অঞ্চলভেদে কস্তুরার যে মজুদ রয়েছে তা  জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিযোজন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখতে সক্ষম।

২০১৫ সাল থেকে চলমান এই গবেষণার জন্য কুতুবুদিয়া দ্বীপে কংক্রিট রিং স্থাপন করে তাতে কস্তুরার পোণার পর্যাপ্ত উপস্থিতি এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতি অবলম্বন করে কস্তুরার বৃদ্ধির হার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।  গবেষণায় প্রাপ্ত উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় কস্তুরার প্রাচীরের উতা ২০ সে.মি. বৃদ্ধি পেতে সময় লাগবে ৫ বছর যা সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির  হারের চেয়েও দ্রুততর।

এছাড়াও কস্তুরা প্রাচীর উপকূলে বছরে সর্বোচ্চ ২৫ সে.মি. পর্যন্ত  পলি জমাতে সক্ষম যা নতুন চরাঞ্চল সৃষ্টি, প্যারাবন গঠন, উরি ঘাস জন্মানোর জন্য উপযোগী ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। শুধু তাই নয়, স্রোতের প্রভাবে মাটির ক্ষয় রোধ করে  উপকূল রক্ষায় নির্মিত বাঁধ এর সুরক্ষা প্রাচীর  হিসেবেও কাজ করে। একই সাথে কস্তুরা চাষের মাধ্যমে মৎস্য ও মাৎস্য স¤পদের মজুদ বৃদ্ধি ও জীব বৈচিত্র্য  সংরক্ষনের প্রক্রিয়া সহজতর হয়।

মাঠ পর্যায়ের গবেষনায় জানা যায়কস্তুরা দ্বারা নির্মিত প্রাচীর ৩৪ প্রজাতির মাছ, ১১ প্রজাতির কাকড়া , ১৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৩৫ প্রজাতির শামুক বা খোলশ জাতীয় প্রাণী এবং অসংখ্য সন্ধিপদী  প্রাণীর উপযুক্ত আবাস্থল তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

অন্যদিকে প্রতি বর্গমিটার এলাকা হতে বছরে ৬ কেজি হারে কস্তুরা আহরণ করা সম্ভব। এতে সামগ্রিকভাবে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, আয়ের উৎসের প্রসার ঘটবে এবং সর্বোপরি জীবন মানের উন্নয়ন সাধিত হবে।

কুতুবদিয়ার জনপ্রতিনিধি গণ তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরেন এবং উক্ত  গবেষণা হতে প্রাপ্ত ফলাফল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবিত ইধহমষধফবংয উবষঃধ চষধহ-২১০০ এর আলোকে উপকূলীয় অঞ্চল ব্যবস্থাপনা ও সমুদ্র ভাঙন এর হাত থেকে উপকূল রক্ষায় করনীয় নির্ধারণে যথোপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়নে একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে বক্তাগন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

1091 ভিউ

Posted ১০:০০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com