এম নজরুল ইসলাম,কুতুবদিয়া(১৪ সেপ্টেম্বর) :: কুতুবদিয়ায় নারী মক্কেলকে ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগে ফিরোজ আহমদ নামের এক আইনজীবীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। কুতুবদিয়া থানায় দায়ের করা এক অভিযোগের ভিত্তিতে ওই আইনজীবীকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই দিন সন্ধ্যায় বড়ঘোপ ইউনিয়নের অমজাখালী গ্রামের আবদুল হাকিমের স্ত্রী মাজেদা বেগম ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসার ৮ শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে হ্যাপিকে (১৬) নিয়ে কুতুবদিয়া আদালতের আইনজীবী ফিরোজ আহমদের চেম্বারে যায়।
এসময় মাজেদা বেগম আইনজীবীকে জানান যে, তার মাদ্রাসাগামী মেয়ে আসা-যাওয়ার পথে এক যুবক নিয়মিত উত্যক্ত করে চলেছে। বিষয়টি কুতুবদিয়া নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট অভিযোগ আকারে দেয়ার জন্য পরামর্শ চান তিনি।
ঐ ঘটনার বিষয়ে আইনজীবী ফিরোজ আহমদ অভিযোগ লেখা অবস্থায় মেয়েকে চেম্বারে রেখে মাজেদা বেগম প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে বাইরে গেলে যুবতী মেয়েকে একা পেয়ে ওই আইনজীবী ধর্ষণের চেষ্টা করে। মাজেদা বেগম চেম্বারে ফিরে এসে মেয়েকে কান্না করতে দেখে কি হয়েছে জানতে চাইলে আইনজীবী ও মাজেদা বেগমের মধ্যে তুমুল তর্ক লেগে যায়।তাদের চিৎকার শুনে পাশ্ববর্তী দোকানের লোকজন ঘটনাস্থলে এলে বিষয়টি এলাকায় তুলপাড় সৃষ্টি করে।
আইনজীবীর চেম্বার থেকে হ্যোপি আকতারকে উদ্ধার করে কুতুবদিয়া সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করালে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর অবস্থা আশংকাজনক দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করেন।
পরে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। এসময় জনতা বিক্ষোভ মিছিলসহ ওই আইনজীবীর অফিস ভাংচুরের উদ্যোগ নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে এবং আইনজীবীর নিরাপত্তার স্বার্থে এডভোকেট ফিরোজ আহমদকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।
কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ দিদারুল ফেরদাউস জানান, ধর্ষনের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ধর্ষনের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মিছিল ও মানববন্ধন করলে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ধর্ষক (এডভোকেট ফিরোজ আহমদ)কে থানায় নিয়ে আসে।
পরে এ ঘটনায় ভিকটিমের মা মাজেদা বেগম বাদি হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করলে ফিরোজ আহমদকে ওই মামলায় আটক দেখানো হয়। পরের দিন বুধবার সকালে কুতুবদিয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আসামী ফিরোজ আহমদকে হাজির করা হলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
ওইদিনও বিষয়টিকে ঘিরে এডভোকেট ফিরোজ আহমদের আইনজীবি সনদ বাতিল চেয়ে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগসহ কয়েকটি সংগঠন।
পরে ওই আইনজীবীর সনদ বাতিল চেয়ে বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে এর্টনি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ঢাকার বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন কুতুবদিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রোজিনা আকতার ও সম্পাদক হাছিনা আকতার বিউটি।
স্বারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, এডভোকেট ফিরোজ আহমেদ একজন মাদক সেবী, টাউট এবং মামলাবাজ ব্যক্তি। তিনি চেম্বারে বসে নিয়মিত মাদক সেবন করেন এবং উপজেলায় একটি টাউট সিন্ডিকেট তৈরি করে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দায়ের করে নিরীহ জনগণকে হয়রানি করে ও অর্থ আদায় করছেন।
এদিকে বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র বলে দাবী করেছেন,এডভোকেট ফিরোজ আহমদের স্ত্রী শাহিন আরা বেগম। তিনি দাবী করেন, তার স্বামী সম্পূর্ণ সাদামনের একজন মানুষ। তিনি এই ধরনের ঘৃনিত্ব কাজ কখনো করতে পারেন না। তিনি আরো দাবী করেনম ঘটনাটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক এবং সাঁজানো। এলাকারর কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী স্বার্থন্বেশী মহলের বিরুদ্ধে আদালতে আইনী লড়াই করায় তাকে পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু জুডিসিয়াল তদন্ত দাবী করেছেন।
বিষয়টিকে ঘিরে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সবার একটাই প্রশ্ন ঘটনা কি সত্য? নাকি সাঁজানো নাটক! সবার দাবী যদি সত্যি হয় তাহলে উপযুক্ত শাস্তি হোক।
Posted ১:২৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta