নজরুল ইসলাম,কুতুবদিয়া(১১ নভেম্বর) :: কক্সবাজারের সুবিধা বঞ্চিত দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার দেড় লক্ষাধীক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র অবলম্ভন কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে কমপ্লেক্সটিকে জনবল সংকট থাকলেও সেবার মান বিচারে জেলায় এটি ৩য় অবস্থানে রয়েছে, জানালেন কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি জানান, তার ঐকান্তি প্রচেষ্টায় দ্বীপের রোগীরা সরকারী নাম মাত্র খরচে প্যাথলজি সুবিধা পাচ্ছেন। যেটা আগে ছিল না। মাত্র ৬০ টাকায় ডায়াবেটিস (আরবিএস) পরীক্ষা, মাত্র ৮০ টাকায় রোগীদের টাইফয়েড় পরীক্ষা, প্র¯্রাব প্রেগনেন্সি টেস্ট ও ই.সি.জি করা যায়। আর জন্ডিস পরীক্ষা-৫০টাকা,প্র¯্রাব ও মল পরীক্ষা ২০ টাকা , ব্লাড ইউরিয়া ৫০টাকা, লিভারের পরীক্ষা এইচ.বি.এস.এজি ১৫০ টাকা এবং ২২০ টাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি সেবাসহ মোট ১৬টি প্যাথলজি সেবা স্বল্প মূল্যে পাচ্ছেন রোগীরা।
সেবা গুলোর একটি মূল্য তালিকাও দেয়া হয়েছে হাসপাতালের দৃশ্যমান স্থানে। পরীক্ষাগুলো হাসপাতালের বাইরে করলে দ্বিগুণ টাকা খরচ হয় বলে জানালেন হাসপাতালে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনেরা।
প্যাথলজি সেবার ব্যাপারে হাসপাতালে আসা রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে সরকারীভাবে কম খরচে প্যাথলজি সেবা পেয়ে খুবই খুশি তারা। খুব কম সময়ের মধ্যে ই.সি.জিসহ সকল প্রকার পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়া হয় এখানে। তারা বলেন, এতদিন জানতাম না কুতুবদিয়া হাসপাতালে এসব পরীক্ষা করা হয়। তারা এই সেবা শুধু একদিনে সীমাবদ্ধ না রেখে পাঁচদিন চালু রাখার দাবী জানান।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ জয়নাল আবেদীনের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান হাসপাতালে চিকিৎসক শূণ্যতার কথা। তিনি বলেন, মাত্র দুই জনে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা। অন্য চার জন্য কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবের খাতা ভিন্ন। খাটনির পরোটাই তাকেই খাটতে হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, কুতুবদিয়া হাসপাতালে চিকিৎসকের মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ২৭। কাগজে কলমে কর্মরত আছেন ৬ জন। একজন আসেন সপ্তাহে একদিন সুবিধামত দিন বিবেচনা করে। অন্য একজনের দেখা মেলা ভার। বাকী দুই জন নতুন যোগাদন করেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
গত ৮ মাস ধরে পেকুয়া থেকে এসে সপ্তাহে একদিন সেবা দিচ্ছেন ল্যাব টেকনেশিয়ান আতিকুল বাহার। তার পাশাপাশি এখানে একনাড়ে দুই সপ্তাহের অধীক কাশিযুক্ত রোগীদের বিনা পয়সায় কফ পরীক্ষা করছেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ব্রাকের টি.বি প্রোগ্রামের ল্যাব টেকনলজিস্ট ও ফিল্ড অর্গানাইজাররা। ব্রাকের টি.বি প্রোগ্রামের কুতুবদিয়া শাখার ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম জানালেন ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত ব্রাক এই সেবা দিচ্ছে ব্রাক।
জনবল সংকটের ব্যাপারে ইউএইচএফপিও ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইতোমধ্যে নার্স ও মিডওয়াইফের সবগুলো পদ (২০টি) পূরণ হয়েছে। নার্সরা রোগীদের খুব ভালো সেবা দিচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের অধীনে বন্দনা দাশ নামের একজন পরিচ্ছনতা কর্মী নিয়মিত কাজ করছে এখানে।
ল্যাব টেকনেশিয়ানসহ অন্যান্য পদে হাসপাতালের জনবল সংকটের কথা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা আছে। এই হাসপাতালে ল্যাব টেকনেশিয়ান না থাকায় পার্শ্ববর্তী পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব টেকনেশিয়ান আতিকুল বাহার সপ্তাহের প্রতি রবিবার একদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দ্রুত অন্য শূণ্যপদগুলো পূরণ হওয়ার আশ্বাসও পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছেন, ডা” জাহাঙ্গীর আলম কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পরে অনেক পরিবর্তন এনেছেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাড়িয়েছেন, বহিঃবিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসরে জন্য রোগীর পাশাপাশি থাকার আলাদা ব্যবস্থা করেছেন, হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে বাগানসহ আলোক সজ্জা করেছেন।
তবে চিকিৎসক সংকট থাকায় প্রায় সময় নার্স দিয়ে বহিঃবিভাগের রোগীরে সেবা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। কর্মরত চিকিৎসকদের কর্মস্থলে থেকে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
Posted ১১:৩৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১১ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta