শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কোটি কোটি ডলারের মাদক আসছে মিয়ানমার থেকে : ৮০ শতাংশই ইয়াবায় আসক্ত

বুধবার, ০৯ মে ২০১৮
342 ভিউ
কোটি কোটি ডলারের মাদক আসছে মিয়ানমার থেকে : ৮০ শতাংশই ইয়াবায় আসক্ত

কক্সবাংলা রিপোর্ট(৮ মে) :: মাদকের ভয়াবহ ধ্বংসলীলায় বাংলাদেশ। ২০ থেকে ৪০ বছরের কর্মক্ষম ৯ কোটি মানুষ মাদকের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এত তরুণ পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও নেই। দেশে বর্তমানে আসক্ত প্রায় ৭০ লাখ। এরমধ্যে ৬৫ ভাগ তরুণ। আর মাদকসেবীদের ৮০ শতাংশই এখন ইয়াবায় আসক্ত।

এনজিও ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এই তথ্য তুলে ধরলে বাস্তবে এর চেয়ে দ্বিগুণ মাদকাসক্ত। এদিকে মাদক সরবরাহ করে কোটি কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদকাসক্ত স্বামীর হাতে স্ত্রী, ভাইয়ের হাতে ভাই, ছাত্রের হাতে শিক্ষকও খুন হচ্ছেন। মাদকের কারণে তছনছ হচ্ছে পরিবার, প্রতিদিনই ভাঙছে কোনো না কোনো সংসার। বাড়ছে পারিবারিক দ্বন্দ্ব-বিভেদ, অস্থিরতা। এমনকি মাদকের টাকা সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে আদরের সন্তানকে বিক্রি করে দেয়ার মতো মর্মস্পর্শী ঘটনাও ঘটেছে। মাদকসক্ত ব্যক্তি কিংবা তরুণ দিয়ে হত্যাসহ যে কোন অপরাধ করানো সহজ। সব কিছু ছাপিয়ে সর্বনাশা মাদক ধ্বংস করছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।

এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত ৫ বছরে নেশায় সন্তানদের হাতে কমপক্ষে ৩৮৭ জন বাবা-মা নৃশংস খুনের শিকার হয়েছেন। মাদকসেবী স্বামীর হাতে প্রাণ গেছে ২৫৬ জন নারীর। মাদকাসক্ত প্রেমিক-প্রেমিকার হাতে খুন হয়েছেন ৬৭০ জন তরুণ-তরুণী। একই সময়ে মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৮৮৭টি। জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ীদের ভয়াবহ থাবায় একটি প্রজন্ম প্রায় ধ্বংসের মুখে।

মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে আমাদের যুবসমাজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এমনকি উঠতি বয়সী স্কুলমুখী কোমলমতি শিশুরাও সঙ্গদোষে জড়িয়ে পড়ছে নেশার বেড়াজালে। অনেকে আবার অল্প বয়সে দামি মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বকে জানার নামে ঢুকে পড়ছে অন্য জগতে। রাত জেগে বিভিন্ন পর্নো সাইডে প্রবেশের পর এসব অল্প বয়সী তরুণ ও কিশোররা ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদকে।

রাজধানীর নামিদামি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রাস্তায় বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোররাও ঝুঁকছে ভয়াবহ এ মরণনেশায়। তবে এমন কোন পেশা নেই যেখানে মাদকাসক্ত নেই। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট যারা এটাকে নিয়ন্ত্রণ করবে সেই আইন-শৃঙ্খলার সদস্যদের একাংশও এখন মাদকাসক্ত। তাই এটাকে নিয়ন্ত্রণ অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, ‘মাদক এমনভাবে ছড়িয়ে গেছে তাতে জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাদকের সবচেয়ে ব্যবহার বেশি হয় মেগাসিটি রাজধানী ঢাকায়।

এছাড়া ঢাকার বাইরে সকল বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, হাটবাজার, গ্রাম, ওয়ার্ড পর্যায়সহ সর্বত্রেই ব্যাপক হারে প্রকাশ্যে চলছে ইয়াবাসহ মাদকের ব্যবহার। ওপেন চলছে বেচাকেনা। কোন কোন থানা, প্রশাসন ইয়াবার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও বেশিরভাগ থানার এক শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়মিত পাচ্ছেন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উেকাচ। স্থানীয় অনেক জনপ্রতিনিধি মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এমন অবস্থায় ঢাকার বাইরে ইয়াবাসহ মাদক নিয়ন্ত্রণ করার নেই-এমন পরিবেশ বিরাজ করছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘মাদক থেকে এই জাতির আল্লাহ ছাড়া রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই। আর দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে ক্রয়ফায়ার দেওয়া।’ এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা দিলেও এর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এখন ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত। মাদক ব্যবসায়ী কাউকে গ্রেফতার করা হলেও খুব দ্রুত সে জামিনে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। আসল মাদককে ময়দা বানাতেও তাদের সমস্যা হচ্ছে না। কারণ টাকার বিনিময়ে সব কিছু তারা করে ফেলছে।

কয়েকটি থানার কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ টাকার ভাগ তো আমরা একা হজম করতে পারি না। উপরের কর্মকর্তাদের নিয়মিত ভাগ দিতে হয়। তাও মাসের প্রথম সপ্তাহে টাকার প্যাকেট পৌঁছে দিতে হয়। আর ইয়াবার ক্ষেত্রে এ টাকা আদায় করা সহজ হচ্ছে।’

এদিকে এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী মাদক ব্যবসায় সরাসরি জড়িত। জঙ্গিদেরও অর্থের অন্যতম উত্স মাদক। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী এই মাদক ব্যবসায় জড়িত। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও তারা নিয়মিত মাসোয়ারা পায়। অনুসন্ধানে এই তথ্য বের হয়ে এসেছে। তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে এক্ষেত্রে।

অনেক ছোট, বড়, মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ী ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায় ঝুঁকে পড়েছেন। এই ব্যবসায় লাভ অনেক বেশি। সহজেই গাড়ি-বাড়ি কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া যায়। অনেকে হয়েছেন। টাকার লোভে তাদের এমন পরিস্থিতি তাদের সন্তান কিংবা পরিবারের সদস্যরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে- তাদের এদিকে কোন নজর নেই। তাই সংশ্লিষ্টদের মতে, কোন বিভাগের একার পক্ষে মাদক নিয়ন্ত্রণ এখন সম্ভব নয়।

মাদক নির্মুল করতে হলে রাজনৈতিকসহ সকল পেশার মানুষ এবং প্রশাসনের সকল বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সহযোগিতাও করতে হবে। তাহলেই সম্ভব হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তারা এমনই মন্তব্য করেছেন।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গে মিয়ানমারের মাদক দ্রব্যের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বহুবার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ইয়াবা উত্পাদন ধ্বংস করার এবং বাংলাদেশে ইয়াবাসহ মাদক প্রবেশ করতে না পারে সেই অঙ্গিকার করেছিল সেদেশের প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কিন্তু বৈঠক পর্যন্তই অঙ্গিকার শেষ। বাস্তবায়ন তো করা হয়নি। বরং মিয়ানমার ইয়াবার উত্পাদন দ্বিগুণ হারে বাড়িয়ে দেয়।

মিয়ানমারের প্রশাসন ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বাংলাদেশে ইয়াবাসহ মাদক পাচারে সরাসরি সহযোগিতা করছে। নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের ইয়াবার বিশাল কারখানা রয়েছে। বাংলাদেশে ইয়াবার চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। মিয়ানমারও ইয়াবার উত্পাদন সেই হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতি দিন বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি ডলার পেমেন্ট যাচ্ছে মিয়ানমারে।

জানা গেছে, কক্সবাজার ও টেকনাথের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা আসছে। রাজশাহী সীমান্ত পথে আসছে হিরোইন।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু একার পক্ষে এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

342 ভিউ

Posted ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৯ মে ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com