কক্সবাংলা ডটকম(২৯ অক্টোবর) :: বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। এর মধ্যে আছে এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। ভুল স্বীকার করায় তাকে এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আইসিসি।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) আইসিসির নিজস্ব সাইটে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করে তারা। আইসিসির কোড অব কনডাক্টের তিনটি ধারা ভাঙায় বাংলাদেশের এই ক্রিকেট তারকাকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এই দু বছর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ। জানিয়েছে আইসিসি। সম্প্রতি তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা বেতন ও পারিশ্রমিক সহ ১১ দফা দাবি তুলে ধর্মঘট করেন।
কলকাতায় ইডেনে প্রথমবার বাংলাদেশ টেস্ট খেলার আগে এই ঘটনার তীব্র চাঞ্চল্য়। ছড়ায় ক্রিকেট মহলে। পরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ধর্মঘটি ক্রিকেটারদের সঙ্গে বৈঠকের পর সব দাবি মেনে নেয়। এই ধর্মঘটের নেতা ছিলেন সাকিব। কিন্তু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানান, ধর্মঘট ডাকার পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে। বাংলাদেশকে ছোট করার চেষ্টা হয়েছে। এরই মাঝে বিদ্রোহী নেতা সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে আইসিসি ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে তদন্তে নামে।
এতে উঠে এসেছে, জুয়াড়িদের সঙ্গে কথা বললেও সাকিব সরাসরি জুয়োতে অংশ নেননি। আইসিসি জানায়, সাকিব ও জুয়াড়িদের ফোনে আড়ি পেতে সব পরিষ্কার হয়েছে। সাকিব জুয়াড়িদের অফার ফিরিয়ে দেন । তবে তিনি আইসিসি’র কাছে সব গোপন করেন। জানা গিয়েছে, মোট তিনবার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে তা আইসিসি-কে না জানানোয় তার বিরুদ্ধে দু বছরের নিষেধাজ্ঞার মতো শাস্তির ব্যবস্থা নিল বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।
তদন্তে উঠে এসেছে, ২০১৮ সালে ঢাকায় ত্রিদেশীয় সিরিজ ও আইপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের জন্য জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। তবে এই শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন সাকিব। আপিলে তার বক্তব্য যদি আইসিসি সন্তুষ্ঠ হয় তাহলে তার এই শাস্তির মেয়াদ এক বছর কমতে পারে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই আসন্ন ভারত সফর বা ইডেনের. ঐতিহাসিক প্রথম টেস্ট খেলতে পারবেন না বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার ।
আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিট- আকসু সাকিবের বিরুদ্ধে ৩ বার জুয়াড়িদের কাছ থেকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও গোপন রাখার অভিযোগ তুলেছে। তদন্ত দলের কাছে দোষ স্বীকার করায় সাকিবের ১ বছরের সাজা স্থগিত করা হয়েছে। ফলে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর থেকে সাকিব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন বলে জানিয়েছে আইসিসি। এ সময়ে আকসুর সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করবেন সাকিব। বিশেষ করে তরুণ ক্রিকেটাররা যেন এমন ভুল না করে সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করবেন সাকিব।
ডলারের প্রস্তাবে জুয়াড়ির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন সাকিব!
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বিরোধী আইনের তিনটি নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে আইসিসি। মঙ্গলবার সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তাকে দুই বছর নিষিদ্ধ করেছে তারা, এর মধ্যে এক বছরের স্থগিতাদেশ নিষেধাজ্ঞা। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি বিরোধী ইউনিট (এসিইউ) গত ২৩ জানুয়ারি ও ২৭ আগস্ট পর্যন্ত সাকিবের সাক্ষাৎকার নেয়। সেখানে তিনি জানান, দীপক আগারওয়াল নামের এক জুয়াড়ির ডলারের প্রস্তাব পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।
সাকিব ওই সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেছেন- ২০১৭ সালের নভেম্বরে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলার সময় তিনি জানতেন, তারই পরিচিত একজন আগারওয়ালকে তার ফোন নম্বর দেন। ওই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা খেলোয়াড়দের ফোন নম্বর দেওয়ার জন্য বলেছিলেন আগারওয়াল।
আগারওয়ালের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকবার মেসেজও চালাচালি হয়েছে সাকিবের। ২০১৮ সালের জানুয়ারি জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে ডাক পান বাঁহাতি অলরাউন্ডার। এই সিরিজেও হোয়াটসঅ্যাপে তাদের সঙ্গে কথোপকথন হয়। ওই বছর ১৯ জানুয়ারির ম্যাচে ম্যাচসেরা হওয়ার পর সাকিবকে অভিনন্দন জানান আগারওয়াল। সেখানে একটি বার্তা ছিল, ‘আমরা কী কাজ শুরু করবো নাকি আইপিএল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।’ কাজ বলতে বোঝানো হয়েছে, দলের ভেতরের তথ্য তাকে দেওয়ার কথা। এই যোগাযোগের কথা দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটের কাছে গোপন করেন সাকিব।
চার দিন পর ২৩ জানুয়ারি আবারও আগারওয়াল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে আরেকটি প্রস্তাব দেন, ‘ব্রো, এই সিরিজে কিছু হবে?’ সাকিব স্বীকার করেছেন, ওই ত্রিদেশীয় সিরিজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভেতরের তথ্য তাকে সরবরাহ করতে এই বার্তা দেন আগারওয়াল। এই প্রস্তাবও গোপন করেন সাকিব।
২৬ এপ্রিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে আইপিএল ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সঙ্গে ম্যাচ খেলার সময় তৃতীয়বার প্রস্তাব পান সাকিব। ওইদিন তার কাছে আগারওয়াল জানতে চান একটা নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ব্যাপারে যে তিনি খেলবেন কিনা ওই ম্যাচে। এরপর আরও ভেতরের খবর জানতে চান ওই জুয়াড়ি।
কথা আরও চালিয়ে যান আগারওয়াল। একপর্যায়ে সাকিবের বিটকয়েন, ডলার অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে জানতে চান তিনি। ডলার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত জানতে বেশি তোরজোড় করেন আগারওয়াল। এপরই সাকিব তাকে বলেন, ‘আগে’ তার সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি।
ওইদিনের বেশ কয়েকটি মেসেজ ডিলিট করা হয়েছিল। সাকিব নিশ্চিত করেন, ভেতরের খবর জানতে চেয়েই ছিল ওই মেসেজগুলো। আগারওয়ালকে নিয়ে আগে থেকেই উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন সাকিব। এই কথোপকথনে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, আগারওয়াল একজন জুয়াড়ি। কিন্তু তৃতীয় প্রস্তাবেও দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটকে জানাননি সাকিব।