কক্সবাংলা ডটকম(১০ নভেম্বর) :: জিয়া আর্থিক সংস্থার তহবিল তছরুপের দায়ে জেলবন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া৷ তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী৷ তাঁকে মুক্তি দিতে বিরোধীরা সওয়াল করলেও সরকারপক্ষ অনড়৷ আইন আইনের পথেই চলবে বলে জানানো হয়েছে৷
নির্বাচনে যেতে হলে শনিবার বা রবিবারের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেই হবে বিএনপিকে। কারণ, রবিবারই নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিতভাবে জানাতে হবে কোন দল কোন জোটের সঙ্গে ‘জোট’ করবে৷ ফলে এসপার ওসপার সিদ্ধান্ত নিতেই বৈঠক বিএনপির৷ দলটির একাধিক সূত্র দাবি করেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে দল।
গত দশম জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েও পরে রিগিংয়ের অভিযোগ তুলে বয়কটের পথে হেঁটেছিল বিএনপি৷ এরপরেই জোট সঙ্গী জামাত ইসলামির সঙ্গে মিলে গণতন্ত্র বাঁচাও আন্দোলনে নামেন খালেদা জিয়া৷ শুরু হয় ব্যাপক তাণ্ডব৷ এতে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়৷ সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে বিএনপি-কে সতর্ক করা হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক মহল থেকেও বিএনপি-কে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে বলা হয়েছে৷
বিএনপি নেতারা আগেই জানিয়েছেন-দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে কোনওভাবেই নির্বাচনে যাওয়া হবে না৷ এখানেই প্রশ্ন, অবস্থান বদল করবেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ? নাকি পুরনো পথেই ভোট বয়কট ? উত্তর ঘোরাফেরা করছে গুলশনের বিএনপি কার্যালয়ের চারপাশে৷
এদিকে কোনো ফলাফল ছাড়াই সংলাপ শেষ হওয়ার পরেই দিনই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কমিশনের তফসিলও ঘোষণা হয়ে গেছে। ২৩ ডিসেম্বর ভোট। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে এখন একটাই প্রশ্ন; কী করবে বিএনপি?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নির্বাচন একটি বড় ইস্যু। নির্বাচন থেকে বিরত থেকে কোনো দল রাজনীতিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। সংসদে অল্প সংখ্যক প্রতিনিধিত্ব থাকলেও কথা বলা যায়, দাবি-দাওয়া উত্থাপন করা যায়, নিজেদের দাবি নিয়ে প্রতিবাদ করা যায়।
রাজনৈতিক দল হিসেবে সক্রিয় থাকার মূল প্ল্যাটফর্মটাই হলো নির্বাচন এবং সংসদ। নির্বাচনে অংশ না নিলে রাজনীতি হয়ে পড়ে বিরোধীদলহীন। জবাবদিহির কোনো তোয়াক্কা না করে রাষ্ট্র পরিচালনা করার পথ অবাধ হয়ে যায়। আর বিরোধীদল হয়ে পড়ে মূল্যহীন, নিস্ক্রিয়, নেতাকর্মী, সমর্থকদেরও ধুকতে হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি যেমন ক্ষমতাসীনদের উন্মুক্ত ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে, তেমনি করেছে নিজেদের ক্ষতি।
প্রায় এক যুগ ক্ষমতা এবং ১০ বছর সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি এখন অস্তিত্বের সংকটে, দলের নেতাকর্মীরা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে। মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত বিএনপির এখন একমাত্র বিকল্প নির্বাচনে অংশগ্রহণ।
এসব বিবেচনা নিয়েই বিএনপি যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, নির্বাচনের ফলাফল পরের বিষয়। ফলাফল যায়ই হোক না কেন, দলটির দৃষ্টি এখন পুরোপুরি নির্বাচনের দিকেই আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণাই পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার বলেন, আমার মনে হয় হয় বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে। এই মুহূর্তে বিএনপির দুটি অপশন হাতে আছে। প্রথমত-এমন গণআন্দোলন গড়ে তোলা যাতে, তাদের বেগম জিয়াকে মুক্তি দেয়াসহ যে দাবি তা মেনে নিতে বাধ্য হয় সরকার।
‘‘কিন্তু এক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনের মতো মানুষ ২০১৪ সালের মতো এমন কোনো আন্দোলনকে সমর্থন দিবে না। তবে তারা যদি তাদের পুরনো সঙ্গী জামায়াতের সাথে এক হয়ে করতে চায় তারা করতে পারে। তাদের সে শক্তি আছে। আমার মনে হয় না এবার বিএনপি সে পথে হাঁটবে।”
বিএনপির দ্বিতীয় অপশন নিয়ে তার বক্তব্য, ‘যদি রাজপথ কাঁপিয়ে দেয়ার মতো কোনো আন্দোলন করতে না পারে তাহলে তাদের উচিত হবে নির্বাচনে যাওয়া। নির্বাচনে এসে যতো পারে সরকারের সমালোচনা করুক। বেগম জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করা হয়েছে বলে ইমোশনালি প্রচার করে তাদের কট্টর সমর্থকদের সমর্থন বাড়াতে পারে। আমার মনে হয় বিএনপি নির্বাচনে যাবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা নির্বাচনে যাবে। এই মুহূর্তে এটাই তাদের কাছে বেটার অপশন।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। এবারও সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবিধানের ভেতরে থেকে নির্বাচন দেয়ার ব্যাপারে অনড় তিনি। ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপিকে নির্বাচন করতে হলে তার অধীনেই করতে হবে।
বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপিতে দুই ধরনের অবস্থান। একটি অংশ চায়, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। এই দাবি আদায়ে প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনে যাবে। আন্দোলন করেই দাবি আদায় করা হবে।
আরেকটি অংশটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। তাদের যুক্তি হলো, গণতান্ত্রিক ধারায় টিকে থাকতে হলে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রয়োজন। সংসদে প্রতিনিধি থাকা চায়।
তাদের বক্তব্য, জনগণ সুযোগ চায়। এই সরকারের পরিবর্তন চায়। তাই সুযোগ পেলেই ভোট দিয়ে সরকারকে সরিয়ে দেবে। বিএনপির এই গ্রুপে রয়েছে শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ববৃন্দ।
বিএনপির শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, ‘আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। কিন্তু সরকার চায় আমরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করি। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই তারা বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখেছে। কিন্তু তাতে লাভ হবে না। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমেই এই সরকারের পতন ঘটাবো’।
বিএনপির আরেকটি সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপি নির্বাচন করবে। শেখ হাসিনার অধীনে হোক কিংবা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। তা হলে ভালোই। না হলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে।
তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, আমরা নির্বাচনে না যাওয়ার কথা কখনো বলিনি। নির্বাচনে আমরা যাবো।কিন্তু শেখ হাসিনাকে ৭ দফা দাবি মানতে হবে। না মেনে উপায় নেই।
জানা গেছে, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকা বিএনপি নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে আজ সন্ধ্যায় গুলশানে বৈঠক করবে।
সন্ধ্যা ৬টায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা এ বৈঠকে অংশ নেবেন। বৈঠকে নির্বাচন, মনোনয়ন ও আগামী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।
একই বিষয়ে আবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারাও ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে ঐকফ্রন্টের র্শীষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
জোট সূত্র জানায়, জোটগত বৈঠক ও ঐক্যফন্টের সঙ্গে বৈঠকে নেতাদের মতামত নেয়ার পর আগামীকাল রোববার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
এছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বিএনপি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাবে কি না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে তথা শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
Posted ৬:৪৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta