কক্সবাংলা ডটকম(২১ আগস্ট) :: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তৎকালীন বিএনপি সরকারকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, এ হত্যাযজ্ঞে খালেদা জিয়া এবং তার সন্তান তারেক রহমান সরাসরি জড়িত এতে কোন সন্দেহ নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের যেকোনো সমাবেশের নিরাপত্তা বজায় রাখতে স্বেচ্ছাসেবক এবং ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তারা সাধারণত পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন ভবনের ছাদ থেকে এ দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু ওই দিন তাদের (স্বেচ্ছাসেবকদের) সমাবেশের আশেপাশের কোন ভবনের ছাদে থাকার অনুমতি দেয়া হয়নি। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, কারা এ হামলায় জড়িত।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গ্রেনেড হামলায় হতাহতদের স্মরণে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন।
এর আগে তিনি সেদিনের ঘটনাস্থল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের নিচে নিহতদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, হামলার সময় সেখানে উপস্থিত সেনা গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে ফোন করে এখানে কি হচ্ছে জানতে চাইলে তাকে ধমক দিয়ে সেখান থেকে সরে যেতে বলা হয়।
যেসব পুলিশ কর্মকর্তারা একটু সাহায্য করতে চেয়েছে তাদের সরকার ও বিএনপি’র পক্ষ থেকে তিরস্কার করে সেখান থেকে সরে যেতে বলা হয়।
হতাহতদের সাহায্যে এগিয়ে না এসে পুলিশ বরং যারা সাহায্য করতে এসেছিল তাদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে খুনিদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন বিএনপি-জামায়াত থেকে দলে কাউকে নেয়া যাবে না। এরা দলের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে অপকর্ম করে। কাজেই তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ক্ষমতায় থাকতে তো বটেই আর এখনও এরা আওয়ামী লীগে এসে নেতা-কর্মীদের হত্যা ও অত্যাচার নির্যাতন করে যাচ্ছে বলেও সতর্ক করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় দল ভারী করতে আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপি এমনকি জামায়াত থেকে নেতা-কর্মীদের নিয়ে এসেছেন। আর দলে অনুপ্রবেশের বিষয়টি গত কয়েক মাস ধরেই তুমুল আলোচিত।
যদিও ক্ষমতায় আসার পরেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, অন্য দল থেকে কাউকে আনার দরকার নেই। তারপরও এই প্রবণতার চলতে থাকা দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন ছাড়া কাউকে নেয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। সেটিও যখন কাজে আসছে না, তখন ভোটের বছরে নেতা-কর্মীদের এবার প্রকাশ্যেই সতর্ক করলেন শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাযজ্ঞের কথাও তুলে ধরেন জাতির জনকের কন্যা। আর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা গ্রহণ, পরে খালেদা জিয়ার আমলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিষ্পেষণের কথাও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বহু নেতা-কর্মী এখনও নানাভাবে নির্যাতন, হত্যার শিকার হয়। বিএনপি-জামায়াত জোটের যারা ঘাপটি মেরে থাকে, তাদের অনেকেই আমাদের দলের সাথে মিশে যায়। দলে ঢুকেই সেখানে গোলমাল করে আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করে, আমাদের ওপরই দোষ চাপায়।’
‘যারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারতে পারে, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করতে পারে, যারা শিশু হত্যা করতে পারে, যারা নারী হত্যা করতে পারে, আমরা বিরোধী দলে ছিলাম, সেই বিরোধীদলের র্যালিতে প্রকাশ্য দিবালোকে যারা গ্রেনেড হামলা করতে পারে, তারা কখনও কোনো দেশের কল্যাণ করতে পারে না, কারও মঙ্গল করতে পারে না। তারা শুধু রক্ত নিতেই জানে।’
‘কাজেই তাদের সম্পর্কে দেশবাসীকেও সজাগ থাকতে হবে আর আমাদের নেতা-কর্মীদেরকেও বলব, এদের দলে যেন কেউ না ঢুকায়।’
‘এদের উত্থানই হচ্ছে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মধ্য দিয়ে। এদের চরিত্র কখনও বদলাবে না।’
‘এরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ, সেইগুলোই তারা জানে, নিজেরা ভোগ করতে জানে, মানুষকে দিতে জানে না।’
শেখ হাসিনার আজকের বক্তব্যের সিংহভাগই ছিল তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো গ্রেনেড হামলার আগে পরের নানা বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী এদিন সমাবেশস্থলে এসেই প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অস্থায়ী বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ নেতা-কর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ এবং ১৪-দলীয় জোট নেতৃবৃন্দ, ২১ আগস্টে নিহতদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন এবং সেদিন যারা আহত হন তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
Posted ৫:৩১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta