কক্সবাংলা ডটকম(২৮ নভেম্বর) :: দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালতের দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে বিএনপির এক নেতার আবেদন খারিজে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার ‘নো অর্ডার’ এর আদেশ দেন।
এই আদেশের ফলে এ বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া গতকালের আদেশই বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
এ আদেশের ফলে দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
এ কারণেই বলা যায়, এ আদেশের আলোকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দুই বছরের বেশি সাজায় দণ্ডিত কারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকছে না।
কারণ, দুর্নীতির মামলায় সাজা ও দণ্ড পাওয়ার পর খালেদা জিয়া কেবল আপিল করেছেন। যা বাতিল বা স্থগিত হয়নি। তাই বর্তমান অবস্থায় হাইকোর্টের আদেশ খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হবে।
আপিল বিভাগের আজকের আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপিল বিভাগের নো অর্ডার আদেশের ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রয়েছে।
এর ফলে যদি কেউ নৈতিক স্থলনজনিত কারণে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজা ভোগ করে মুক্তি লাভের পর ৫ বছর সময় অতিবাহিত না হয় তাহলে সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আর আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন উচ্চ আদালতের এ নির্দেশনা মাথায় নিয়েই কাজ করবে।’
আজ আদালতে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন আহসানুল করিম ও খায়রুল আলম চৌধুরী। আর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান শুনানিতে অংশ নেন।
এর আগে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ দুর্নীতির মামলায় বিচারকি আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে আমান উল্লাহ আমানসহ বিএনপির পাঁচ নেতার করা আবেদন খারিজ করে দেন।
ওই আদেশের পর বিএনপি নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনর আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত পাচজন হাইকোর্টে দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল, যাতে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। তবে আদালত পাচঁটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।’
হাইকোর্টের আদেশের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত তাদের পাঁচটি আবেদন খারিজ করেছেন। মূলত একটাই কারণ, সেটা হলো সংবিধানের ৬৬(২) এর (ঘ) অনুচ্ছেদ। এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উনারা নির্বাচন করার যোগ্য নন। এবং তারা সাজা বাতিল চাওয়ার কোনো এখতিয়ার রাখে না।
আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আরো বলেন, আদালত তার পর্যবেক্ষণে দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়কে নিরুৎসাহিত করেছেন।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আজকের এই আদেশটা সবার উপরে বাইন্ডিং। সবার উপরে এটা প্রতিফলিত হবে। তাই উনি (খালেদা জিয়া) সম্পূর্ণ খালাস পেলে অথবা আদালত তার সাজা বাতিল করলেই কেবল তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। বর্তমান অবস্থায় নয়।
হাইকোর্টে আদেশ হওয়া পাচজনের মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়:
১) জ্ঞাত আয় বহির্গত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে বিগত ২১ জুন ২০০৭ সনে ঢাকার ১ নম্বর বিশেষ আদালত আমান উল্লাহ আমানকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করে। ২০০৭ সালের ১ অক্টোবর তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
২) জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালত ডা. এ জেড এম, জাহিদ হোসেনকে ২০০৮ সালের ২৫ মে ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লক্ষ টাকা করে। পরে ২০০৯ সলের ৩ জুন তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
৩) জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে যশোর বিশেষ জজ আদালত গত ২৫ অক্টোবর ২০১৭ সনে আলহাজ্ব মো. মশিউর রহমানকে ১০ বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৭০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করেন। তিনি ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ সনে হাইকোর্ট থেকে জামিন প্রাপ্ত হন।
৪) জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, তথ্য গোপন ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৪ টাকার সম্পদ অর্জন করায় ওয়াদুদ ভূঁইয়াকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ আদালত মোট ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেয়। ২০০৯ সালের ২৮ হাই কোর্ট থেকে জামিন পান।
৫) জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৯৩ লাখ ৩৬৯ টাকার সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে মো. আবদুল ওহাবকে যশোরের বিশেষ জজ গত বছর ৩০ অক্টোবর ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে। তিনি এ বিষয়ে আপিল করেন এবং গত বছরের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন।
দুর্নীতির এসব মামলায় বিচারকি আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. মশিউর রহমান ও মো. আব্দুল ওহাব। সেই আবেদন আজ খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তার আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন।
Posted ৪:০৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta