এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(২৫ মে) :: চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোনের রামপুর মৌজার ৩০ একর আয়তনের একটি চিংড়ি প্রকল্পে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা হানা দিয়ে ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে। ওইসময় ঘের পরিচালক ও কর্মচারীদেরকে বেদড়ক পিটিয়ে অন্তত লক্ষাধিক টাকার মাছসহ মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। আহতদেরকে স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
আহতরা হলেন ঘের পরিচালক গোলাম রহমান (৫৪), কর্মচারী আবদুল হামিদ (৪০), বশির আহমদ (৩৮), আইয়ুব (৩৫) ও মানিক (২৮)। চারদিন আগে ২১ মে রাতে চিংড়িঘেরে লুটপাটের ঘটনাটি ঘটলেও দুর্বৃত্তদের হুমকির মুখে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ঘের পরিচালক আইনের আশ্রয় নিতে থানা পুলিশের কাছে আসতে সাহস পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ তুলেছেন।
চিংড়ি প্রকল্পের পরিচালক গোলাম রহমান জানান, চিংড়িজোনের রামপুর মৌজার ৫নম্বর স্লুইচের ৪২৩, ৪২৪ ও ৪২৫ নম্বর প্লটের ৩০ একর আয়তনের চিংড়ি ঘেরটি তিনি মালিক এনায়েতুল করিমের কাছ থেকে রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব দিয়েছেন। বিপুল টাকার পোনা অবমুক্ত করে তিনি এবছরও মৎস্য চাষ শুরু করেছেন। বর্তমানে ঘেরের মাছ গুলো বিক্রি উপযুক্ত হয়েছে।
গোলাম রহমান জানান, গত সোমবার (২১ মে) রাতে ঘেরে মাছের খাদ্য দিয়ে তিনিসহ সকল কর্মচারী ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত আনুমানিক দুইটার দিকে ১০-১২জনের অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত হঠাৎ করে ঘেরে ঢুকে পড়ে তাদের উপর চড়াও হয়। ঘটনার এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তরা তাকেসহ কর্মচারীদের বেদড়ক পিটিয়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মাছসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। তবে ওইসময় আশপাশের ঘের মালিক ও কর্মচারীরা এগিয়ে আসলে দুর্বৃত্তরা তাদের ব্যবহৃত একটি নৌকা বোট ফেলে পালিয়ে যায়। পরে নৌকাবোটটি ঘের পরিচালক হেফাজতে নেন।
ঘের পরিচালক গোলাম রহমান অভিযোগ করেছেন, তাঁর চিংড়িঘেরে হামলার সময় অস্ত্রধারীদের মধ্যে কয়েকজনকে চিনতে পেরেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে বদরখালী ইউনিয়নের রুবেল ও আবু জাফর প্রকাশ টিপু।
ঘটনার ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিতে চেষ্টা করলেও দুর্বৃত্তদের নানা ধরণের হুমকির কারনে গত চারদিন ধরে তিনি থানা পুলিশের কাছে আসতে ভয় পাচ্ছেন বলে দাবি করেন গোলাম রহমান।
স্থানীয় এলাকাবাসি ও চিংড়িঘের মালিকরা জানান, অভিযুক্ত রুবেল ও টিপু উপকুলীয় অঞ্চলের চিংড়িজোনের ত্রাস। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দলবল নিয়ে চিংড়িঘেরে হানা দিচ্ছে। লুটে নিচ্ছে মাছসহ মালামাল। পুনরায় হামলার আশঙ্কায় ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা। বর্তমানে রুবেলের বিরুদ্ধে রামপুর চিংড়ি প্রকল্পের সরকারি প্রদর্শনী খামার ডাকাতিসহ ও টিপুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
এলাকাবাসি অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্ত টিপু ও রুবেল বাহিনী তৈরী করে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রি, চুরি, ছিনতাইসহ নানা ধরণের দুস্যতা ঘটনার সাথেও জড়িত রয়েছে। সম্প্রতি সময়ে প্রতিবেশি মৃত মেহের আলীর ছেলে আবু ছৈয়দের একটি নৌকা চুরি করে মহেশখালীর শাপলাপুররে বিক্রিকালে হাতেনাতে ধরা পড়ে টিপু। একইভাবে অপর প্রতিবেশি হাজি লাল মিয়ার ছেলে আলী আকবরের বাড়ি থেকে একটি সেলো পাম্প মেশিন চুরি করে টিপু। ভুক্তভোগী মালিক থানায় অভিযোগ দায়ের করলে বদরখালী পুলিশ ফাঁিড়র আইসি অভিযান চালিয়ে টিপুর বাড়ি থেকে চুরি হওয়া ওই মেশিনটি উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
এলাকাবাসির দাবি, টিপুর মতো তাঁর ভাই রুবেলও একই ধরণের ঘটনায় জড়িত। কিছুদিন আগে বদরখালী ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের পুকুরিয়াপাড়া জামাল উদ্দিনের ছেলে মনোয়ার আলমের একটি পালিত গরু চুরি করে রুবেল। গরুটি ইলিশিযা বাজারে বিক্রি করতে গেলে দিনদুপুরে জনতার হাতে ধরা পড়ে রুবেল। অপরদিকে একই গ্রামের বাসিন্দা মৃত আমিনুল ইসলামের ছেলে আড়তদার সিরাজুল ইসলামের বাড়ি থেকে সৌর বিদ্যুৎ চুরি করতে গিয়ে এলাকাবাসির হাতে ধরা পড়ে রুবেল।
চকরিয়া থানার ওসি মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চিংড়িঘেরে লুটপাটের ঘটনায় কেউ অদ্যবদি থানায় অভিযোগ দেয়নি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Posted ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৬ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta