বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

চকরিয়ায় দুইদফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিরা খাজনা মওকুফ ও প্রণোদনা চান

শনিবার, ০৫ আগস্ট ২০১৭
291 ভিউ
চকরিয়ায় দুইদফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিরা খাজনা মওকুফ ও প্রণোদনা চান

বিশেষ প্রতিবেদক,চকরিয়া(৪ আগস্ট) :: কক্সবাজারের চকরিয়ায় দুই দফায় লাগাতার ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও অস্বাভাবিক জোয়ারে তির শিকার হয়েছে চিংড়িসহ মৎস্য খাত। এরপর চিংড়ি ঘেরে ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়ায় চিংড়িসহ মৎস্য খাতের ক্ষতি সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে বলে চাষিরা দাবি করছেন।

পুরো মৎস্য খাতে বিশাল এই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে উঠবেন এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কয়েক হাজার চাষি। এই অবস্থায় সরকারিভাবে লিজপ্রাপ্ত চিংড়ি ঘেরের ইজারাদাররা সরকারি খাজনা মওকুফ এবং অন্য প্রজাতির মৎস্য চাষিরা এই খাতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়ার দাবি তুলেছেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, অন্তত দুই হাজার চিংড়ি চাষির প্রায় ৩৪ হাজার একর জমির চিংড়ি ঘের দুই দফায় তলিয়ে যায়। এছাড়াও উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন, একটি পৌরসভার ১ হাজার ৯০১টি পুকুর ও দীঘি, ১৩২টি বাণিজ্যিক মৎস্য খামার, ১৭৪টি সাধারণ চিংড়ি খামারের ২ হাজার ৬৯৩ দশমিক ৬৭ হেক্টরে ৯৬ কোটি ৪৮ ল ৬৩ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সবমিলিয়ে চিংড়ি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি দেড়শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে চিংড়ি ও মৎস্য চাষিরা জানিয়েছেন।

অপরদিকে বন্যা পরবর্তী উপজেলার চিংড়ি জোনের কয়েক মৌজার প্রায় ৪৫ হাজার একর চিংড়ি জমিতে ভাইরাসের আক্রমণে প্রথম জো’তেই (চিংড়ি ধরার সময়) একসঙ্গে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার ক্ষতি গুণতে হয়েছে ঘের মালিকদের। এতে চিংড়িসহ মৎস্য চাষিরা চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি চাষি ও মৎস্য খামারিদের অভিযোগ, প্রায় একযুগ ধরে চকরিয়ার চিংড়িজোন একেবারেই অর হয়ে পড়ে রয়েছে। এই অবস্থায় লাগাতার ভারি বর্ষণ, মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও পূর্ণিমার প্রভাবে সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে প্রায়শই তলিয়ে যায় চিংড়িজোন। এতে ব্যক্তিগত, সরকারিভাবে লিজপ্রাপ্ত মৎস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের চিংড়ি ঘের মালিকেরা ভয়াবহ বন্যা হলেই পথে বসেন।

ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি-এভাবে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া চিংড়ি চাষিদের লিজের বিপরীতে সরকারি খাজনা মওকুফ, অরক্ষিত চিংড়িজোনে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, জরাজীর্ণ ুইচ গেট টেকসইভাবে নির্মাণ ছাড়াও চিংড়িজোনের পানি ভাটির দিকে নামার একমাত্র পথ ভরাট ছড়াখালগুলো খননের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যাম্ভাবী হয়ে পড়েছে। তা না হলে এভাবে বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়ে অর্থনৈতিকভাবে মার খেয়ে দেউলিয়া হয়ে যাবেন। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে প্রতিবছর চিংড়ি খাত থেকে রপ্তানির বিপরীতে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও হবে না।

ভূমি ও মৎস্য মন্ত্রণালয় ও ব্যক্তিগত চিংড়ি চাষিদের দেয়া তথ্যমতে, চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোন সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চরণদ্বীপ, বদরখালীর কাঁকড়াদিয়া, খুটাখালী ইউনিয়নের বহলতলী মৌজাসহ বিভিন্ন মৌজায় সরকারি তালিকাভূক্ত ও তালিকা ছাড়া সর্বমোট ৪৫ হাজার একর চিংড়ি ও মৎস্য জমি রয়েছে। তন্মধ্যে এক নম্বর খাস খতিয়ানের জমি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি, মৎস্য বিভাগের জমি এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সন ভিত্তিক লিজ দেয়া জমি রয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চকরিয়ায় মৎস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২৪ হাজার একর এবং ব্যক্তিগতভাবে আরো ১০ হাজার একরসহ ৩৪ হাজার একর চিংড়ি জমি রয়েছে। তন্মধ্যে ৭২০টি চিংড়ি ঘের ভূমি এবং ৪৮৮টি মৎস্য মন্ত্রণালয়ের ঘের রয়েছে। এসব ঘের ১০, ২০ ও ৩০ একর করে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে লিজ দেয়া আছে। এছাড়াও সরকারে অন্যান্য দপ্তরেরও অবশিষ্ট চিংড়ি জমির লিজপ্রাপ্তরা বেশি ক্ষতির শিকার হন এবারের ভয়াবহ বন্যায়।

চকরিয়া উপজেলা চিংড়ি খামার মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম উল্লাহ বলেন, ‘পর পর দুইবার ভয়াবহ বন্যার সময় দুই জো’তে আমার প্রায় ৩০ একরের চিংড়ি ঘেরের প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে ঘেরে বিনিয়োগকৃত টাকার ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে উঠবো এ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’ তিনি আরো জানান, বন্যা পরবর্তী চিংড়ি জোনের প্রায় ৪৫ হাজার একর চিংড়ি জমিতে ভাইরাস আক্রমণ করায় প্রায় দুই হাজার ঘের মালিক ক্ষতি গুণেছেন প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার। ভাইরাসের আক্রমণে ঘেরের মধ্যেই চিংড়ি মরে গিয়ে লালচে হয়ে গেছে।

চিরিঙ্গা ইউনিয়নের বুড়িপুকুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হামিদ মেম্বার বলেন, ‘বন্যায় চকরিয়ার চিংড়িজোনের রামপুর মৌজায় তার মালিকানাধীন ২শ’ একরের বেশ কয়েকটি চিংড়িঘেরের ব্যাপক তি হয়েছে। পর পর দুইবার বন্যায় কম করে হলেও অর্ধ কোটি টাকার চিংড়ি ও অন্য প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। ভেঙে খান খান হয়ে গেছে ঘেরের চতুর্পাশের বেড়িবাঁধও। এছাড়াও বন্যা পরবর্তী ঘেরে ভাইরাস আক্রমণ করায় আরো ২০ কোটি টাকার চিংড়ি মরে যাওয়ায় চোখেমুখে অন্ধকার দেখছি, কিভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো।

আরেক বৃহৎ চিংড়ি চাষি কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য ও পশ্চিম বড় ভেওলার বাসিন্দা মো. আবু তৈয়ব বলেন, ‘ভয়াবহ বন্যা এবং বন্যা পরবর্তী চিংড়ি চাষিদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। চিংড়ি জোনের রামপুর মৌজায় আমার মালিকানাধীন ৬০০ একরের চিংড়ি জমি রয়েছে। পর পর দুইবারের ভয়াবহ বন্যা আমার এই চিংড়িঘের লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। এতে কম করে হলেও ৫০ কোটি টাকার উৎপাদিত চিংড়ির ক্ষতি গুণতে হয়েছে। এই অবস্থায় ব্যাংকের দায়-দেনা পরিশোধসহ কিভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো কোন কূল-কিনারা দেখছি না।’

উপজেলা চিংড়ি খামার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নুর মোহাম্মদ পটু, সাধারণ সম্পাদক দলিলুর রহমানসহ সমিতির অন্যান্য সদস্য জানিয়েছেন, লাগাতার ভারি বর্ষণ, উজান থেকে মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা ঢলের পানি ও পূর্ণিমার প্রভাবে সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় চকরিয়ার চিংড়ি জোন।

সরকারের প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি ও মৎস্য চাষিদের দাবি-তারা চিংড়ি ও মৎস্য উৎপাদন করে দেশে আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছেন। পাশাপাশি এখানকার চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করে প্রতিবছর দেশের জন্য হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন। কিন্তু বরাবরের মতোই চিংড়ি জোনে নেই কোন স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ, টেকসই ুইচ গেট। যদি এসব সমস্যা অতিদ্রুত সমাধান করা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে এই খাতে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বড় ধরণের মার খাবে। পাশাপাশি কয়েক হাজার চিংড়ি ও মৎস্য চাষি দেউলিয়া হয়ে পথে বসবে।

তারা আরো দাবি করেন, পর পর দুইবারের ভয়াবহ বন্যায় সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন সরকারিভাবে লিজপ্রাপ্ত বৈধ চিংড়ি ঘের মালিকেরা। এই অবস্থায় সরকারি খাজনা মওকুফ করা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা না হলে এতবড় তির সম্মুখিন হওয়ার পর কিভাবে সরকারি খাজনা পরিশোধ করবেন সেই দুশ্চিন্তায় পথে বসবেন চাষিরা।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান বলেন, পর পর দুটি ভয়াবহ বন্যায় একাকার হয়ে গেছে পুরো উপজেলা। বন্যার এই তাণ্ডবে পড়ে চকরিয়ার চিংড়িজোন, পুকুর-দীঘি, বাণিজ্যিক খামারসহ চিংড়ি ও মৎস্য প্রকল্পে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সরকারিভাবে লিজপ্রাপ্ত ঘের মালিকদের খাজনা মওকুফের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নয়, আমাদের দায়িত্ব ক্ষতির চিত্র নিরুপণ করে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা। তবে আমাদের সুপারিশ রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সরকারিভাবে যাতে প্রণোদনা দেয়া হয়, যাতে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা আর্থিক ক্ষতি কাটিতে উঠতে পারেন।

(ছোটন কান্তি নাথ)

291 ভিউ

Posted ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৫ আগস্ট ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com