এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(৫ জুন) :: চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রমী আয়োজনে এবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে উপজেলার অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফলজ, বনজ ও ওষুধীসহ রকমারি একলাখ গাছের চারা রোপন করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গাছের চারা রোপনের মাধ্যমে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরউদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান একযোগে চারা রোপন কর্মসুচি উদ্বোধন করেছেন।
মঙ্গলবার (৫ জুন) নেকম-ক্রেল প্রকল্পের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসনের এই আয়োজনে অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
সকালে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করি’ নিরাপদ পরিবেশ গড়ি’ স্লোগানে চকরিয়া প্রশাসন ও নেকম-ক্রেল প্রকল্পের উদ্যেগে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের কর্মসৃুচি শুরু কর হয়। দিনব্যাপি কর্মসুচির মধ্যে সকাল দশটার দিকে উপজেলা পরিষদ সড়কে নানা রংয়ের ফেস্টুন ও স্লোগান সজ্জিত বর্নাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নূরদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমানের নেতৃত্বে র্যালী পরবর্তী শুরু হয় গাছের রোপন কর্মসুচি। উপজেলা পরিষদে গাছের চারা রোপনের মাধ্যমে প্রধান অতিথি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরউদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান একযোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রায় একলাখ গাছের চারা রোপন কর্মসুচি উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার নূরুদ্দীন মোহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিতে চারা রোপনের এই কর্মসুচি মাসব্যাপি চলবে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যনকে আহবায়ক করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের শিক্ষক, ইউপি সদস্য ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সংশ্লিষ্টরা প্রতিটি এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পতিত জায়গা গাছের চারা রোপনের ব্যবস্থা নেবেন।
সবুজ বুননের এমন উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিনদিন বাড়ছে দূর্যোগ ও দূর্ভোগ, এ থেকে রেহাই পেতে এই সম্মিলিত প্রয়াস। শুধু রোপন নয় যেন পরবর্তী যতœ সঠিকভাবে নেওয়া হয় সে ব্যাপারে তিনিসহ সকলে তীক্ষè দৃষ্টি রাখবেন। ক্রেল প্রকল্পের সাইট অফিসার মোঃ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, নিজের জন্য, সবার জন্য ও আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর শ্যামল পরিবেশ গড়তে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। আজকের এই চারা লাগানোর উদ্যোগ সব সময় বজায় রাখতে হবে সুন্দর নির্মল পরিবেশ গড়ার জন্য।
পরিবেশ দূষণরোধে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন টিআইবির সহযোগি প্রতিষ্ঠান সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)।
মঙ্গলবার (৫জুন) চকরিয়া উপজেলা সনাকের আয়োজনে বিশ^ পরিবেশ দিবসের আলোচনা সভায় পরিবেশ দূষণরোধে আটটি দাবি তুলে ধরা হয়। সনাকের উদ্যোগে বিশ^ পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এদিন র্যালি ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
সনাক চকরিয়ার সভাপতি অধ্যাপক এ. কে. এম. শাহাবুদ্দিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তরা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও নিশ্চিত করতে পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে। আর পরিবেশ দুষণ বন্ধ করতে হলে পরিবেশ সুরক্ষায় গৃহিত প্রতিটি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী “রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্য প্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন” মর্মে সুনির্দিষ্ট সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পবিবেশ সংক্রান্ত সংবিধানের বাধ্যবাধকতাও নিশ্চিত করা হচ্ছেনা।
পরিবেশ দূষণ রোধে সনাক-টিআইবির পক্ষ থেকে নি¤েœাক্ত সুনিদিষ্ট দাবী উত্থাপন করা হচ্ছে।
দাবি সমুহের মধ্যে রয়েছে (১) প্লাস্টিকের বেআইনী উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহার রোধে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং তার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অনুকরণযোগ্য ইতিবাচক অবদানের জন্য পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। (২) প্লাষ্টিক উৎপাদন ও ব্যাবহার নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সব অংশীজনের সাথে সমন্বিতভাবে কম্যুনিটিভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে হবে। (৩) প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা উন্নত করে উৎপাদিত প্লাস্টিক পুর্নব্যাবহার নিশ্চিতে সরকার ও বেসরকারি খাত কর্তৃক বিভিন্ন প্রণোদনা মূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। (৪) সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ/সীমিত করতে হবে এবং প্লাস্টিকের পরিবেশবান্ধব বিকল্প উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা করতে হবে। (৫) সমুদ্র সম্পদ, বনভূমি, নদ-নদী, খাল-বিল রক্ষা এবং অবৈধ দখল হতে তা উদ্ধার ও সুরক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। (৬) টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৪ এর অর্জন নিশ্চিতে সমুদ্র দূষণ রোধের পাশাপাশি সমুদ্র সম্পদের সংরক্ষণ নিশ্চিতে সমুদ্র অধিদপ্তর, কোষ্ট গার্ড, নৌবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত তদারকি এবং দূষণ আইনের ব্যবহারে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহায়তা নিতে হবে (৭) ‘প্যারিস চুক্তি’ বাস্তবায়নে সকল শিল্পোন্নত দেশের অংঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে, বিশেষ করে স্বচ্ছতার সাথে বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের জন্য প্রতিশ্রুত তহবিল দ্রুত ও সহজতর পদ্ধতিতে ছাড় করতে হবে। (৮) দূষণ রোধে ব্যবহৃত তহবিলসহ সার্বিকভাবে জলবায়ু অর্থায়নে কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতে গৃহিত সকল কার্যক্রমে জন অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে এবং আর্থিক লেনদেন ও কর্মসম্পাদন প্রতিবেদন স্ব-প্রণোদিতভাবে প্রকাশ করতে হবে।
Posted ১১:৩২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta