শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

চিকিৎসকদের নৈতিকতা : BMDC-র নীতিমালা থাকলেও মানা হচ্ছে না

বৃহস্পতিবার, ০২ আগস্ট ২০১৮
484 ভিউ
চিকিৎসকদের নৈতিকতা : BMDC-র নীতিমালা থাকলেও মানা হচ্ছে না

কক্সবাংলা ডটকম(১ আগস্ট) :: রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখতে হবে পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে। ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে উপঢৌকন বা আর্থিক সুবিধা নিয়ে ওষুধ লেখা পুরোপুরি নৈতিকতাবিরুদ্ধ। আর্থিক বা অন্য কোনো সুবিধার বিনিময়ে বিশেষ কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল বা নার্সিং হোমে রোগী পাঠানোরও সুযোগ নেই।

চিকিৎসকের জন্য এসব নৈতিকতা সুনির্দিষ্ট করে দিয়ে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। যদিও চিকিৎসকদের বড় অংশই তা মানছেন না। এসব নৈতিকতা পরিপালন হচ্ছে কিনা, তারও কোনো তদারকি নেই।

অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ নীতিমালা পরিপালন হচ্ছে কঠোরভাবে। কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে উপঢৌকন বা আর্থিক সুবিধা গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেলে তার চিকিৎসা সনদ এক বছরের জন্য রহিত করছে দেশটির মেডিকেল কাউন্সিল। আর যুক্তরাষ্ট্রে একে দেখা হয় ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে।

বাংলাদেশে নৈতিকতা নীতিমালার প্রয়োগ না থাকায় ওষুধ কোম্পানিগুলো বিক্রি বাড়াতে নানা উপঢৌকন নিয়ে চিকিৎসকের পেছনে ছুটছে। চিকিৎসকরাও রোগীর কথা না ভেবে নির্দিষ্ট কোম্পানির নির্দেশিত ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখছেন। চিকিৎসকরা এতে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগীরা।

বাংলাদেশে চিকিৎসক ও ওষুধ কোম্পানির মধ্যকার নৈতিকতার সম্পর্ক কী মাত্রায় লঙ্ঘিত হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের পাঁচ চিকিৎসক। ওষুধ কোম্পানিগুলো নগদ অর্থ, ভ্রমণ, ওয়ার্কশপের স্পন্সর, চেম্বার সাজানো, ওষুধের স্যাম্পল, পেশাগত বা পেশাবহির্ভূত নানা উপহার চিকিৎসকদের দিচ্ছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন তারা।

ওই পাঁচ চিকিৎসকের একজন বিএসএমএমইউর লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।  তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ কোম্পানিগুলো এমন উপহার দিতে পারে, যা রোগীর উপকারে আসবে। চিকিৎসককে এ ধরনের কিছু দেয়ার সুযোগ নেই। বিভিন্ন দেশে ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে নগদ অর্থ নিলে নিবন্ধন বাতিলসহ শাস্তির বিধান রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নগদ অর্থ গ্রহণের অপরাধে ফৌজদারি মামলায় এক চিকিৎসক ৩০ বছরের সাজাও পেয়েছেন।

রোগীর ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লেখা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিএমডিসির নীতিমালায়। যদিও প্রতিনিয়তই তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। এর আগে ফরিদপুরের নিবন্ধিত এক চিকিৎসক এক রোগীর ব্যবস্থাপত্রে ১৮টি ওষুধ লেখেন। এর বেশির ভাগই অপ্রয়োজনীয়— ফুড সাপ্লিমেন্ট। ব্যবস্থাপত্রটি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন দেশের খ্যাতনামা চিকিৎসকরাও। তাদের দাবি, ব্যবস্থাপত্রে লেখা চার-পাঁচটি ওষুধ সাংঘর্ষিক। অ্যাসিডিটি ও হূদরোগের একই ওষুধ বারবার দেয়া হয়েছে। এতে রোগীর ভালো হওয়ার পরিবর্তে প্রাণনাশের ঝুঁকিই বেশি।

নৈতিকতার নীতিমালা থাকার পরও তা পরিপালন না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিসির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম বলেন, আগে থেকেই চিকিৎসকদের নৈতিকতা ও শিষ্টাচার সম্পর্কে একটি নীতিমালা ছিল। বর্তমানে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সেটি মডিফাই করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব চিকিৎসকের কাছে নৈতিকতার এ বার্তা পৌঁছে দেয়া হবে। এতে চিকিৎসকদের মধ্যে নৈতিকতার চর্চা আরো বাড়বে।

বিএমডিসির কোড অব প্রফেশনাল কন্ডাক্ট, এটিকেট অ্যান্ড ইথিকস শীর্ষক নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো রোগীকে পরামর্শ গ্রহণ বা চিকিৎসার জন্য রেফার করার বিনিময়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক বা অন্য কোনো ধরনের সুবিধা (ফ্রি বা সুলভে কনসালটেশনের জায়গা বা সাচিবিক সহায়তাসহ) নিতে পারবেন না চিকিৎসক। একই সঙ্গে এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের কোনো সুবিধা দিতেও পারবেন না।

যদিও অনেক সরকারি হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক নিজেরাই বেনামে হাসপাতাল ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন। সেখানে রোগীদের রেফার করে চিকিৎসাও দিচ্ছেন তারা। বণিক বার্তার অনুসন্ধানেই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এ ধরনের একাধিক হাসপাতাল ও ক্লিনিকের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেকগুলোর আবার বৈধতাই নেই।

রোগী বা রোগীর কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে কোনো ধরনের পণ্য বা সেবা ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করে, এমন কোনো আলোচনায় লিপ্ত হওয়ার আগে এর সঙ্গে যদি চিকিৎসক বা তার পরিবারের কোনো সদস্যের আর্থিক বা বাণিজ্যিক স্বার্থ জড়িত থাকে, তাহলে তা অবশ্যই উল্লেখ করে নেয়ার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়।

এছাড়া ক্লিনিক্যাল তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক ওষুধ বা মেডিকেল পণ্য প্রস্তুত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর যৌক্তিক অংকের চার্জ ধার্য করতে পারবেন। অযৌক্তিক রকমের বেশি চার্জ ধার্য করা বা উপহার গ্রহণ পুরোপুরি অনৈতিক।

ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের সিনিয়র অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, দেশের চিকিৎসকদের জন্য কোড অব কন্ডাক্ট অনেক আগে থেকেই রয়েছে। বর্তমানে ওয়ার্ল্ড মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউএমএ) একটি আচরণবিধি তৈরি করেছে। সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সেটি গ্রহণও করেছে। তবে এ আচরণবিধি যাতে সব চিকিৎসক মেনে চলেন, সেজন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) ভূমিকা নিতে হবে। এটা লঙ্ঘন হলে বিএমডিসি ব্যবস্থা নেবে।

ওষুধের বিক্রি ও প্রচারের জন্য পৃথক কোড অব ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটিং প্র্যাকটিস প্রণয়ন করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নীতিমালার আলোকে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রচারের উদ্দেশ্যে মেডিকেল পেশার সঙ্গে জড়িত কাউকে কোনো ধরনের উপহার দেয়া বা আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব কিংবা সহায়তা করা যাবে না। চিকিৎসকদের চেম্বার সাজানো থেকে শুরু করে নগদ অর্থ প্রদান করতে পারবে না ওষুধ কোম্পানিগুলো।

যদিও এ নীতিমালাও লঙ্ঘিত হচ্ছে। নিজেদের কোম্পানির ওষুধের বিক্রি বাড়াতে নানা উপঢৌকন নিয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে হাজির হচ্ছেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা। এসব উপঢৌকনের বিনিময়ে চিকিৎসকরাও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ওষুধ রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লিখছেন।

ওষুধ কোম্পানি ও চিকিৎসকের মধ্যকার নৈতিকতার সম্পর্ক বিশ্বের অনেক দেশের চেয়েই বাংলাদেশে ভালো বলে দাবি করেন ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল মুক্তাদির।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিপণননীতি নিয়ে ঔষধ প্রশাসনের একটি নীতিমালা আছে। চিকিৎসকদের উপঢৌকন দেয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো তা মেনে চলে বলেই আমরা জানি।

একই ধরনের নীতিমালা আছে ভারতেও। অর্গানাইজেশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল প্রডাক্ট অব ইন্ডিয়ার নীতিমালা অনুযায়ী, রোগীর সেবায় ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের ওষুধের স্যাম্পল দিতে পারবে। তবে এ স্যাম্পল কোনোভাবে বিক্রি করা যাবে না। তাহলে তা আইনের লঙ্ঘন হবে। বাংলাদেশেও ওষুধের স্যাম্পল বিক্রির সুযোগ নেই। যদিও কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে পাওয়া স্যাম্পল ওষুধ প্রতিনিয়তই বিক্রি হচ্ছে।

484 ভিউ

Posted ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ আগস্ট ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com