কক্সবাংলা ডটকম(১৪ জুন) :: দারুণ পোশাক তবে শুধু বুদ্ধিমান মানুষই এই জামা দেখতে পাবে। এমনটা বলেই রাজাকে উলঙ্গ করে মাঝদরবারে হাজির করেছিল দুই চতুর বণিক। গল্পটি প্রায় সবারই জানা। তবে সেই ‘একদা’ বা ‘সুদূর দেশের’ রাজা না থাকলেও, চতুর বণিকরা কিন্তু রয়েই গিয়েছে। এবং তাদের ছল-চাতুরিতে আরও শান পড়েছে। আধুনিক বিশ্বে সেই চতুর বণিকের জায়গা দখল করেছে চিন। এবং বিশেষজ্ঞদের মতে শীঘ্রই উলঙ্গ রাজার জায়গা নিতে চলেছে বাংলাদেশ,পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।
গত মাসে বেজিংয়ে দারুণ ঘটা করে অনুষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ সম্মেলন। বাংলদেশ,পাকিস্তান-সহ বিশ্বের প্রায় ২৯টি দেশ ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। তবে ‘চিন পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর’ (সিপিইসি) নিয়ে চরম বিরোধিতা করে সম্মেলন বয়কট করে ভারত।
এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকাকে যুক্ত করে প্রভূত অর্থনৈতিক উন্নতির স্বপ্ন দেখিয়ে চিন যে নিজের অভিসন্ধি পূরণের পথে তা নিয়ে একমত বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সংবাদ সংস্থা এএনআইতে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে ‘ওবিআর’ প্রকল্পের জেরে দেওলিয়া হয়ে যেতে পারে পাকিস্তান, বাংলাদেশ-সহ একাধিক দেশ।
জানা গিয়েছে, ওই প্রকল্পের অন্তর্গত পরিকাঠামো উন্নতির নামে চিন মুক্তহস্তে বিভিন্ন দেশগুলিকে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। তবে যে দেশগুলি ঋণ নিয়েছে, তাদের ১৬ শতাংশ করে সুদ দিতে হবে এবং তা চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি হবে।বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির পক্ষে ঋণের টোপে পা দিয়ে ফেলা অস্বাভাবিক নয়। এবং একবার ঋণের বোঝা চাপলে কার্যত চিনের কাছে বিকিয়ে যাবে তারা।
ইতিমধ্যে, চিনের সুরে সুর মিলিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির গান গাইছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। বাস্তবে ‘ওবিআর’ প্রকল্পের মাধ্যমে চিন নিজের মুদ্রা ‘ইউয়ান’ কে ডলারের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে, তা যেন দেখেও দেখছেন না তিনি। এবং পাকিস্তানের মতো দুর্বল, আমদানি নির্ভর অর্থনীতি যে চিনের কাছে একটি লাভজনক বাজার ছাড়া আর কিছুই নয় তা আদতে মানতে চাইছে না ইসলামাবাদ। এছাড়াও, চিনের সঙ্গে দরাদরি করার ক্ষমতা নেই ইসলামাবাদ ও ঢাকার। তাই বেজিং যা শর্ত দেবে একপ্রকার তাই মেনে নিতে বাধ্য দুই দেশ।
সম্প্রতি, রাষ্ট্রসংঘের ‘ইকোনমিক এন্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক স্টাডি’ চিনের ‘ওবিআর’ প্রকল্পের অন্ধকার দিক নিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলির উদ্দেশ্যে সতর্ক বার্তা জারি করেছে। চিনের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের ঋণ নিয়ে সীমাহীন দেনা চক্রের ফাঁদে ফেঁসে যেতে পারে অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল দেশগুলি বলে ওই বার্তায় বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল পর্যন্ত চিন ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে যা ঢাকার জিডিপি-র ২০ শতাংশ। একই ভাবে ‘সিপিইসি’ প্রকল্পের অন্তর্গত পাকিস্তানে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করবে চিন যা ইসলামাবাদের জিডিপি-র পাঁচ ভাগের এক ভাগ।
এবার ওই বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝা বইতে গিয়ে ঢাকা ও ইসলামাবাদ যে একপ্রকার চিনের ক্রীতদাসে পরিণত হবে তা মেনে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। একই ভাবে চিনের দেওয়া ঋণের বোঝা চেপেছে শ্রীলঙ্কার ঘাড়েও। বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করতে চিন ‘ওবিআর’ প্রকল্পটিকে কাজে লাগিয়েছে তা একপ্রকার স্পষ্ট। তবে চিনকে টেক্কা দিতে ভারতও হাত মিলিয়েছে আমেরিকা ও জাপানের সঙ্গে। তবে ড্রাগনকে রুখতে তা কতটা কার্যকর তা সময়ই বলবে।
Posted ১২:৩৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৪ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta