কক্সবাংলা ডটকম(৫ মে) :: বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বাণিজ্য দ্বন্দ্ব নিরসনে দুদিন ধরে যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন, তা ‘বড়সড় মতপার্থক্যের’ মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে বেইজিং।
বৈঠক ফলপ্রসু না হওয়ায় বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা আরো বৃদ্ধি পেল। খবর এএফপি।
চীনের সিনহুয়া স্টেট নিউজ এজেন্সির বরাতে এক বিবৃতিতে বেইজিং বলেছে, উভয় দলই স্বীকার করেছে যেকোনো ইস্যুতে এখনো বড়সড় পার্থক্য রয়ে গেছে এবং তাদেরকে অগ্রগতির জন্য আরো কাজ করে যেতে হবে।
পরস্পরের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিলে বাণিজ্য নিয়ে যে আশঙ্কা তৈরি হয়, তা নিরসনে দুই পক্ষ এ বৈঠকে বসেছিল।
সিনহুয়া জানায়, দুই পক্ষই চীনে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি বৃদ্ধি, সেবা খাতে বাণিজ্য, দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ, মেধাস্বত্ব সুরক্ষা, শুল্ক ও অশুল্ক কার্যকরের নীতিমালা বিষয়ে পারস্পরিক মতবিনিময় করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয়পক্ষ কিছু বিষয় নিয়ে একমত হয়েছে। তবে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দুই দেশ আলোচনা চালিয়ে রাখার একটি ‘কার্যকর পদ্ধতি’ স্থাপনের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
তবে এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানিউচিন জানিয়েছিলেন, প্রথম দিনের বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা বিশদ কিছু জানাতে অস্বীকার করেছিলেন।
চায়না সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক এক্সচেঞ্জেসের গবেষক ঝ্যাং মোনান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কী চায়, সে ব্যাপারে চীন বিভ্রান্তিতে আছে। তিনি বলেন, যদিও নিজের বাজার উন্মুক্ত করার ব্যাপারে চীন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তবুও যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্প্রতি ঘোষিত চীনের সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে আছে গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে বিদেশী মালিকানার সীমা তুলে দেয়ার সময়সীমা নির্ধারণ, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রণমূলক শেয়ার গ্রহণে অনুমতি এবং বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থানীয় এক্সচেঞ্জে লৌহ আকরিক লেনদেনের অনুমতি।
তবে দুই দেশের কর্মকর্তাদের বৈঠক শুরু হওয়ার আগে বেইজিংয়ের কাছে যে তালিকা দেয়া হয়, সে অনুসারে দেখা যায় এসব সংস্কার উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদার তুলনায় তুচ্ছ।
ব্লুমবার্গ নিউজের বরাতে জানা যায়, আট খণ্ডে বিভক্ত নথিটি আলোচনার শুরুতে হস্তান্তর করা হয়। এসব চাহিদার মধ্যে আছে ২০২০ সালের মধ্যে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি অন্তত ২০ হাজার কোটি ডলার কমিয়ে আনা, সব শুল্ক কমিয়ে মার্কিন শুল্কের পর্যায়ে নামিয়ে আনা, প্রযুক্তি হস্তান্তরচর্চা বন্ধ করা এবং চীনের শিল্পনীতির আওতায় কিছু শিল্পকে যে সহায়তা দেয়া হয়, তা বন্ধ করা।
চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিও হে চীনের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ডান হাত বলে পরিচিত হলেও শুক্রবার কার্ল মার্কসের জন্মদিন উপলক্ষে দেয়া শি’র ভাষণে অনুপস্থিত ছিলেন হে। এ ভাষণে বেইজিং পুঁজিবাদ থেকে দূরে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে, যা মার্কিন প্রতিনিধি দলের জন্য উদ্বেগ বয়ে আনে।
মেড ইন চায়না ২০২৫-এর আওতায় চীন দেশটিকে উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য উৎপাদকে পরিণত করার চেষ্টা করছে। তবে সম্প্রতি ওয়াশিংটন টেলিকম জায়ান্ট জেডটিইকে নিষিদ্ধ এবং হুয়াওয়ে সম্পর্কে একই ধরনের তদন্ত করায় বেইজিং রুষ্ট হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, জেডটিইর বিষয়ে চীনা দল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গভীর উদ্বেগ তুলে ধরেছে। এতে আরো বলা হয়, মার্কিন প্রতিনিধি দল জানিয়েছে যে, তারা বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে উত্থাপন করবে।
ঝাং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য দ্বন্দ্ব বহুদিন ধরে চলে আসা ইস্যু। এটি স্বল্পমেয়াদে মিটমাট হওয়ার মতো বিষয় নয়।
Posted ৩:১৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৬ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta