চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শুরুতেই লাল কার্ড রোনাল্ডোর : তদন্তের মুখে জুভেন্টাস
বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮
295 ভিউ
কক্সবাংলা ডটকম(২০ সেপ্টেম্বর) :: ফুটবলমহলের বদ্ধমূল ধারাণা, শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের জন্যই বিপুল অঙ্কের বিনিময়ে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে কিনেছে জুভেন্তাস৷
এহেন জুভেন্তাসের জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শুরুটা দুঃস্বপ্নের হয়ে থাকল রোনাল্ডোর৷ ইতালিয়ান জায়ান্টদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আত্মপ্রকাশ ম্যাচেই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেন সিআর সেভেন৷
যদিও এক ঘণ্টারও বেশি সময় দশ জনে খেলেও ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ জিততে অসুবিধা হয়নি রোনাল্ডোর দলের৷ জোড়া পেনাল্টি থেকে গোল করে জুভেন্তাসের জয় নিশ্চিত করেন বসনিয়ান মিডফিল্ডার মিরালেম জানিচ৷ ম্যাচের একেবারে শেষ লগ্নে পোনাল্টি পেয়েছিল ভ্যালেন্সিয়াও৷
যদিও স্পটকিক থেকে ব্যবধান কমাতে ব্যর্থ হন দানি পারেজো৷ ফলে জুভেন্তাস ভ্যালেন্সিয়ার বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিযান শুরু করে ২-০ গোলে ম্যাচ জিতে৷
জুভেন্তাসের জার্সিতে সিরি-এ’র প্রথম তিন ম্যাচে গোল পাননি রোনাল্ডো৷ চতুর্থ ম্যাচে সাসুওলোর বিরুদ্ধে জোড়া গোলে খাতা খোলেন ক্রিশ্চিয়ানো৷ স্বাভাবিকভাবেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিযান শুরুর আগে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাড় করে নিতে পেরেছিলেন টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বাধিক গোলের মালিক সিআর সেভেন৷ কোচ মাসিমিলিয়ানো শুরু থেকে রোনাল্ডোর উপরোই ভরসা রাখেন৷ যে কারণে দিবালা ও দিয়েগো কোস্তাকে বেঞ্চে রাখার সাহস দেখান তিনি৷
সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল৷ হঠাৎ ম্যাচের ২৯ মিনিটে বল ছাড়া ভ্যালেন্সিয়া ডিফেন্ডারের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন রোনাল্ডো৷ ভ্যালেন্সিয়া বক্সের মধ্যে রোনাল্ডোর ধাক্কায় মাটিতে পড়ে যান মুরিলো৷ তিনি ফাউলের আবেদন জানালে রোনাল্ডো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় চুল ধরে মুরিলোকে উঠে দাঁড়াতে বলেন৷ রেফারি ঘটনাটিকে লঘু করে দেখেননি৷ তিনি লাল কার্ড দেখিয়ে রোনাল্ডোকে মাঠ ছাড়ার নির্দেশ দেন৷ চোখের জলে ম্যাচের মাঝ পথেই মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন ক্রিশ্চিয়ানো৷
ম্যাচের বাকি সময়টা জুভেন্তাস দশ জনে খেললেও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় ভ্যালেন্সিয়া৷ উল্টে দু’টি পোনাল্টি উপহার দিয়ে জুভেন্তাসকে জয়ের পথ দেখায় স্প্যানিশ দলটিই৷ ৪৩ মিনিটে নিজেদের বক্সে ক্যানসেলোকে ফাউল করেন পারেজো৷ রেফারি তাঁকে হলুদ কার্ড দেখানোর পাশাপাশি পেনাল্টির নির্দেশ দেন৷ স্পট কিক থেকে গোল করেন জানিচ৷ জুভেন্তাস ম্যাচে ১-০ গোলে এগিয়ে যায়৷
৫১ মিনিটে বোনুচ্চিকে ফাউল করার অপরাধে হলুদ কার্ড দেখেন মুরিলো৷ জুভেন্তাস ম্যাচে দ্বিতীয় পেনাল্টি পেয়ে যায় এবং স্পট কিক থেকে দ্বিতীয় গোল করেন জানিচ৷ ম্যাচের ইনজুরি টাইমে (৯০+৫) গ্যাব্রিয়েলকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন রুগানি৷ এবার পেনাল্টি পেয়ে যায় ভ্যালেন্সিয়া৷ পারেজোর পেনাল্টি শট আটকে দেন জুভেন্তাস গোলরক্ষক ওজসিয়েচ৷
তদন্তের মুখে জুভেন্টাস
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে রেকর্ড ১০০ মিলিয়ন ইউরো বা ৮৮ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনার সময় জুভেন্টাস কোনো অনিয়ম করেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ বডি উয়েফা। গত মাসে শেষ হওয়া গ্রীষ্মকালীন দলবদলে পর্তুগিজ সুপারস্টারকে ক্লাব রেকর্ড অর্থে কিনে নেয় তুরিনের ‘ওল্ড লেডি’রা।
শুধু রোনালদোই নন, গ্রীষ্মের দলবদলে তুরিন জায়ান্টরা কিনেছে ডগলাস কস্তা ও হোয়াও ক্যানসেলোকে। সব মিলিয়ে দলবদলে তাদের খরচ ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি। ইতালির পত্রিকা কালসিও মার্কাতো জানিয়েছে, এসব চুক্তি উয়েফার মাইক্রোস্কোপের নিচে আসতে যাচ্ছে। সংস্থাটি খতিয়ে দেখবে, জুভেন্টাসের ব্যয় তাদের আয়ের চেয়ে বেশি হয় কিনা।
ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা অবশ্য এ তদন্তে পার পেয়ে যেতে আত্মবিশ্বাসী। তাদের যুক্তি হলো, মাত্তিয়া কালদারা ও গঞ্জালো হিগুয়াইনকে বিক্রি করে তারা খরচে ভারসাম্য এনেছে।
ইতালির কিংবদন্তি গোলকিপার জিয়ানলুইজি বুফন নাম লিখিয়েছেন প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) ক্লাবে। এতে বেতনের পেছনে খরচ কমে যায় ক্লাবটির। যদিও পরবর্তীতে রোনালদোকে সই করানোর মধ্য দিয়ে এ খাতে ফের খরচ বাড়ে সিরি-এ জায়ান্টদের। পর্তুগিজ সুপারস্টার সপ্তাহে বেতন পান ৫ লাখ পাউন্ডেরও বেশি। এ হিসাবে তিনি বছরে পান ২ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড বা ৩ কোটি ১০ লাখ ইউরো। ইতালির গাজেত্তা দেলো স্পোর্ত গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে দাবি করে, সিরি-এ লিগে দ্বিতীয় স্থানধারীর চেয়ে তিন গুণ বেশি বেতন পান রোনালদো। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এসি মিলানের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার গঞ্জালো হিগুয়াইন পান সপ্তাহে ৮৬ লাখ পাউন্ড।
৩৩ বছর বয়সী খেলোয়াড়কে ১০০ মিলিয়ন ইউরোয় কেনার বিষয়টি অনেকের চোখেই বিস্ময়কর ঠেকেছে। তাদের যুক্তি, এত বেশি বয়সী খেলোয়াড় খুব বেশিদিন সেবা দিতে পারবেন না জুভেন্টাসকে, তাই এত বেশি অর্থ বিনিয়োগও সমীচীন নয়। আর জুভেন্টাসের যুক্তি, খেলোয়াড়টির ফর্ম বিবেচনায় তাকে কেনা হয়েছে। এছাড়া রোনালদোকে নিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে ইতালির ইতিহাসে সেরা ক্লাবটি। গতকাল রাতে জুভরা গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয় স্পেনের দল ভ্যালেন্সিয়ার।
তবে রোনালদোকে কেনার অন্যতম বড় কারণ হলো তার বাজারমূল্য। পর্তুগিজ সুপারস্টারকে কেনার পরপরই জুভেন্টাসের স্টোরগুলোতে ৭ নম্বর জার্সি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সমর্থকরা! তাকে কেনার পর জুভেন্টাসের টিকিটের চাহিদা বেড়েছে, টিভি চুক্তি থেকেও বাড়তি অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই রোনালদোকে কেনার যৌক্তিকতা রয়েছে জুভেন্টাসের কাছে। যদিও উয়েফার তদন্তে খানিকটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ক্লাবটিকে। দ্য সান